আজ শনিবার ৪ মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১

বরখাস্ত হচ্ছেন পালংখালীর চেয়ারম্যান!

ইমাম খাইর, কক্সবাজার | প্রকাশের সময় : সোমবার ৭ অগাস্ট ২০২৩ ১০:০৭:০০ অপরাহ্ন | দেশ প্রান্তর

কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম.গফুর উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান। এরপর থেকে চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বরখাস্ত হচ্ছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে।

 

স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ৩৪ (১) ধারা অনুযায়ী কোনও চেয়ারম্যান ফৌজদারি মামলায় আদালতে গ্রহণ করা অভিযোগপত্রের আসামি হলে সাময়িক বরখাস্ত করার বিধান রয়েছে। অভিযুক্ত গফুর উদ্দিন চৌধুরী উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করছেন।

 

গত ২ আগস্ট পাঠানো চিঠিতে জেলা প্রশাসক উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজীবের বরাতে গফুর উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালতে গ্রহণ করা চার মামলার অভিযোগপত্রে সার্টিফাইড কপি সংযুক্ত করেন।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, কোনও চেয়ারম্যান ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হলে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পালংখালীর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চারটি মামলায় আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পাঠানো তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী বিষয়টি জেলা প্রশাসন স্থানীয় সরকার বিভাগকে জানিয়েছে। 

 

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গফুর উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে করা চারটি মামলার অভিযোগপত্র আদালত গ্রহণ করেছেন। মামলা বিচারাধীন থাকায় তাকে দিয়ে কোনও প্রকার ক্ষমতা প্রয়োগ জনস্বার্থের পরিপন্থি। 

 

জানা গেছে, সর্বশেষ গৃহীত হওয়া মামলাটির বাদি সিরাজুল মোস্তফা নামে এক ব্যক্তি। তিনি উখিয়া রাজাপালং এলাকার বাসিন্দা মৃত সিরাজুল কবিরের ছেলে। বালু মহাল থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে ২০২২ সালের ১৬ জুন গফুর উদ্দিনসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। সরেজমিন তদন্তপূর্বক ২৮ নভেম্বর আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই মোঃ আল-আমিন।

 

মামলার এজাহারে বাদী সিরাজুল মোস্তফা উল্লেখ করেছেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে তিনি বালুমহাল ইজারা নেন। বালু উত্তোলন কাজ শুরু করলে পরিবহনে বাধা প্রদান ও ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে গফুর উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি চক্র। বিষয়টি জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা প্রশাসনকেও অভিযোগ আকারে জানানো হয়। এরপরও চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মারধরপূর্বক বালু বিক্রির টাকাসহ অন্যান্য কাগজপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। দাবিকৃত চাঁদা না পেলে তাকে হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকি দেন গফুর উদ্দিন চৌধুরী।

 

আদালতে অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার পর গফুর উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন দেন পালংখালী ৪নং ওয়ার্ডের থাইনখালীর বাসিন্দা লাল মিয়ার ছেলে শেখ মোহাম্মদ আলম।

 

তিনি উল্লেখ করেন, গফুর উদ্দিন চৌধুরী সরকার বিদ্বেষী লোক। তার সঙ্গে রোহিঙ্গা মাদক কারবারিদের আঁতাত রয়েছে। ১৮টি মামলার আসামি এই চেয়ারম্যানের কাছে আমার এলাকার মানুষজন নিরাপদ নয়। তাই জনস্বার্থে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করেছি।

 

টানা তৃতীয় মেয়াদে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন গফুর উদ্দিন চৌধুরী। তবু নানা কারণে সমালোচনা তার পিছু ছাড়ছে না। সরকারি কাজে বাধা, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন অভিযোগে অসংখ্য মামলা রয়েছে। অপরাধীচক্র লালনের বিষয়েও অভিযোগ রয়েছে এই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে। এর আগে দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তিনি সাময়িক বহিষ্কার হয়েছিলেন। 

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, একজন ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক প্রতিবেদন পাঠিয়েছে বলে জেনেছি। তার আগে কয়েকজন মেম্বার আমার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে লিখেছিল। এসব ঘটনার নেপথ্যে প্যানেল চেয়ারম্যান সম্পৃক্ত বলে দাবি করেন এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী। 

 

তিনি বলেন, এখনো কোনও সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। দেখি, কি হয়। তবে যেটাই হোক, মেনে নেবো।