কারও এক যুগ, আবার কারও বা দেড় যুগ পার হয়ে গেছে, কিন্তু আছেন একই পদে। পদোন্নতি হচ্ছে না। সিনিয়রদের ঠিকই বছর বছর পদোন্নতি হচ্ছে। এমনকি পদ না থাকলেও সুপার নিউমারারি পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ জন্য পুলিশের পরিদর্শক পদমর্যাদার ক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা সাক্ষাৎ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তারা সাক্ষাৎ করেন। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পুলিশ পরিদর্শকদের আশ্বস্ত করে পুরো বিষয়টি লিখিত আকারে দিতে বলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ইতোমধ্যে কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পর্যন্ত কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর আবারও সেই চিঠি আইজিপি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে।
পুলিশের পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ পুলিশের মোট সদস্য সংখ্যা দুই লাখ ২ হাজার ৮৬২ জন। এরমধ্যে কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পর্যন্ত সদস্য সংখ্যা হলো ১ লাখ ৯৯ হাজার ৭৩৫ জন। পুলিশ ক্যাডারের অফিসাররা দ্রুত পদোন্নতি পান, কিন্তু সেই হারে ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতি হচ্ছে না। ইন্সপেক্টররা একই পদে ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত কাজ করেও রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের অভিযোগ—ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমল এবং মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৯০ সাল পর্যন্ত আউট-সাইট ক্যাডেট বা সাব-ইন্সপেক্টররা (এসআই) পদোন্নতি পেয়ে ডিআইজি পর্যন্ত হয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে একজন সাব-ইন্সপেক্টর চাকরির পূর্ণ জীবনে মাত্র একবার পদোন্নতি পাচ্ছেন। ক্যাডার সার্ভিসের অফিসাররা সাব-ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির সুযোগ সীমিত করে ২০টি পুলিশ সুপার পদ, ২০৮টি সহকারী পুলিশ সুপার পদ বিলুপ্ত ও ৮৪টি সহকারী পুলিশ সুপারের পদ স্থগিত করে পদোন্নতির গতিকে প্রায় বন্ধ করে রেখেছেন।
পুলিশের সংক্ষুব্ধ এই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা পুলিশ ক্যাডারদের মতো ইন-সিটু প্রমোশনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতি দিয়ে আগের দায়িত্বেই বহাল রাখার দাবি করেছেন। এছাড়া নন-ক্যাডার নীতিমালা অনুযায়ী, নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতির দাবি করছেন তারা। একইসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদায় পদোন্নতি দিতে বিভাগীয় সহকারী পুলিশ সুপারদের ৫০ ভাগ কোটা রাখারও দাবি করেছেন।
ইন্সপেক্টররা জানান, ২০১২ সালে পুলিশ ইন্সপেক্টরদের দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় তারা যেসব র্যাঙ্ক-ব্যাজ পরিধান করতেন, এখনও তাই পরতে হচ্ছে। তাদের দাবি, র্যাঙ্ক অনুযায়ী একাধিক ‘বিপস’ সংযুক্ত করার দাবি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সাব-ইন্সপেক্টরদের পিএসসির নন-ক্যাডার দশম গ্রেড নীতিমালার আওতায় আনা ও পুলিশ ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির এক বছরের মধ্যে চাকরি স্থায়ীকরণের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়া পুলিশের সভা-সেমিনার, পলিসি মিটিং ও পুলিশ সপ্তাহে মতামত দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের অন্তত চার জন সদস্যের উপস্থিতি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
পুলিশের একজন ইন্সপেক্টর জানান, পুলিশ সদস্যদের অপরাধ কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার সদস্যদের শাস্তি বেশি হয়ে থাকে। আবার বিভাগীয় মামলা দায়ের হলে তা বছরের পর ঝুলিয়ে রাখা হয়। তারা এসব ক্ষেত্রে যথাযথ বিধি অনুসরণ করে দ্রুত বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তির দাবিও জানিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা জানান, সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের র্যাঙ্ক-ব্যাজ উন্নীত করার বিষয়টি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ইচ্ছে করে ঝুলিয়ে রেখেছে। এসআই বা সার্জেন্টরা দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হলেও তাদের র্যাঙ্ক-ব্যাজ থেকে নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া হয়নি। একইসঙ্গে কনস্টেবলদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের প্রমোশন লিস্ট তৈরি করে পর্যায়ক্রমে পদোন্নতি দেওয়ার দাবিও জানানো হয়।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইন্সপেক্টর মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানিয়েছি। তিনি লিখিতভাবে দিতে বলেছেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করবেন বলেও আশ্বস্ত করেছেন।’
পুলিশের একজন ইন্সপেক্টর জানান, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টররা। কিন্তু তারাই সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হয়ে আছে। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নিচের পদের পুলিশ সদস্যদের সমস্যা সমাধানে আগ্রহ কম দেখান। ক্যাডার সার্ভিসের অফিসাররা তাদের সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নিচ্ছেন। কিন্তু সব পর্যায়ের সদস্যদের একই দৃষ্টিতে দেখা উচিত।