আজ শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকারি মাল দরিয়ায় ঢালবেন না: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : রবিবার ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০২:৪৫:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

সরকারি কাজে সাশ্রয়ী ও যত্নশীল হওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্টদের বলেছেন, সরকার চলে জনগণের পয়সায়। সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল- বললে হবে না।

 

রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

টানা চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনপ্রতিনিধি এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বলেন, যে কাজগুলো সরকার করে দেয়, সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ, যত্ন, এটা আপনাদেরই করতে হবে। সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল- বললে হবে না। সরকার চলে কিন্তু জনগণের পয়সায়। যেটাই হোক, এটা জনগণের, মাথায় রাখতে হবে।  

 

প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, আমাদের অনেক সরকারি অফিসারও থাকেন, নানা রকম বুদ্ধি-পরামর্শও দেন, আমাদেরও কেউ কেউ মনে করেন, এখানে একটা স্থাপনা করলেই তো ভালো একটা কমিশন পাওয়া গেল। বা কিছু পয়সা কামাই করা গেল। দয়া করে এ ব্যবস্থায় যাবেন না।

 

শেখ হাসিনা বলেন, আপনার এলাকার জন্য কোনটা করলে পরিবেশ সংরক্ষণ করা হবে, মানুষের যোগাযোগ হবে, মানুষ উপকৃত হবে, সেগুলো দেখে প্রকল্প নিতে হয়। যত্রতত্র যেখানে সেখানে একটা কিছু করে ফেলে দেওয়া উচিত নয়। কোনো জলাভূমি, খাল, নদী এগুলো রক্ষা করতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের অর্থ সাশ্রয় করতে হবে। অর্থ সাশ্রয় করে কাজ করতে হবে। যাতে জাতীয়ভাবে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা যায়।

 

তিনি বলেন, প্রকল্প গ্রহণ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করতে হবে। শুধু মাত্র একটা কাজ দিলাম, আর পয়সা পেল, এ চিন্তা করে দয়া করে কেউ প্রকল্প নেবেন না।

 

প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে বাজে দৃষ্টান্তের কথা উল্লেখ করে দেশের পাঁচবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুপেয় পানির জন্য পুকুর কাটা হচ্ছে। সেই পুকুরের পানি পরিশুদ্ধ করে সবাইকে দেওয়া হবে। ঠিক দেখা গেল একপাশে পুকুর অপর পাশে বর্জ্য ফেলার জন্য বড় একটা খানা (গর্ত) তৈরি করা হচ্ছে। সুপেয় পানির পাশে বর্জ্য ফেললে কাক, চিল এগুলোতো ময়লা পানিতেই ফেলবে। পানি পরিশুদ্ধ পাবেন কীভাবে? করবেন কীভাবে? প্রকল্প নেওয়ার সময় অবশ্যই এসব মাথায় রাখতে হবে। যথাযথ দূরত্ব রেখে করতে হবে, যাতে অন্য কোনো কিছু দূষণের শিকার না হয়।

 

সারাদেশে স্থাপিত সুপেয় পানির উৎসগুলোর প্রতি সবাইকে যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পানির ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি পরিশুদ্ধ করার। কিন্তু সেখানে ফিল্টার দেওয়া হচ্ছে, বালু, কয়লা সব ফিল্টার সেগুলোতে ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু একবার যখন করে দেওয়া হয়, তখন এটা কিন্তু আজীবন চলবে না। এটা মাথায় রাখতে হবে। এটা জনপ্রতিনিধিদের নজর রাখতে হবে।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা নির্দিষ্ট সময় পর এটা পরিষ্কার করতে হয়। একটা সময় পর বালু, কয়লা পরিবর্তন করতে হবে। আমরা যে ফিল্টার লাগাই সেটাও পরিষ্কার করতে হবে। পাইপ, পানির ট্যাংক পরিষ্কার করতে হবে। সেটা না করলে কিছু দিন পর দেখা যাবে পানি হলুদ হয়ে যাচ্ছে, দূষণ হয়ে যাচ্ছে। তখন দোষ হবে সরকারের। কিন্তু এটা সংরক্ষণ করার দায়িত্ব কার?

 

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি যারা আপনাদেরই জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। সরকারি কর্মচারীরা তো নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চাকরি করেন। তাদের তো জবাবদিহি নেই। কিন্তু জবাবদিহি তো আপনাদের, যারা জনগণের প্রতিনিধি। কাজেই সেবাটা পাচ্ছে কি না, তা আমাদেরই দেখতে হবে। আর না দেখলে চলবে না।

 

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, প্রতিটি এলাকায় পানি শোধনাগার করে যাচ্ছি। এগুলো যথাযথ ভাবে যত্ন নেওয়া হচ্ছে না। আপনারা সবাই দেখবেন এগুলো যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। দায়িত্বপ্রাপ্ত যারা সরকারি কর্মচারী, আছেন তাদেরও দায়িত্ব আছে। তারাও যথাযথভাবে দায়িত্বটা পালন করবেন।

 

গ্রাম থেকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শুরুর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখন থেকে গ্রাম পর্যায় থেকে যদি শুরু না করি, এগুলো একটা সমস্যা হবে। শহরগুলোতে কিন্তু এটা বিরাট সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বর্জ্য কোথায় ফেলবে, কী করবে, না করবে ... বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখন থেকে আমাদের নিতে হবে।

 

জনপ্রতিনিধিদের জনগণের সঙ্গে করা ওয়াদা পূরণ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে জনগণের কাছে যে ওয়াদা দিয়ে এসেছেন, সেটা আপনারা রক্ষা করবেন।

 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহসহ (খোকন সেরনিয়াবাত) বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি বক্তব্য রাখেন।