আজ ২০ ডিসেম্বর সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র বিজিবি দিবস। ২০১০ সালের ২০ ডিসেম্বর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০ কার্যকরের মধ্য দিয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে যুগোপযোগী করার কার্যক্রম শুরু হয়। আর এইদিনই নতুন নাম নিয়ে যাত্রা করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিনটিকে বিজিবি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ান থেকে যাত্রা শুরু করে নানা পট পরিবর্তন আর ইতিহাস পরিক্রমা পেরিয়ে আজকের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি’র নামকরন।
খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলা থেকে এর উৎপত্তি বলেই বিজিবি দিবসটি রামগড়ে পালিত হয় জাকজমকভাবে। দিবসটি উদযাপনের কর্মসূচী প্রসঙ্গে রামগড় ৪৩ বিজিবি’র অধিনায়ক লে: কর্ণেল আনোয়ারুল মাযহার জানান, বিজিবির জন্মস্থান রামগড় হওয়ায় রামগড় জোন প্রতি বছরের মত দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করবে। দিবসের প্রভাতে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, রেজিমেন্টাল পতাকা উত্তোলন, বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, প্রীতিভোজ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে পালন করা হবে।
জানা যায়, ১৭৯৫ সালের ২৯ জুন ৪৪৮ জন সৈন্য সংখ্যা নিয়ে এই বাহিনীর সৃষ্টি হয়। ৬ পাউন্ড গোলা, ৪টি কামান ও ২টি অনিয়মিত অশ্বারোহী দল নিয়ে রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন নামে রামগড় থেকেই বাহীনিটির যাত্রা সূচিত হয়। পরবর্তীতে ১৮৬১ সালে পূর্বাঞ্চলের নিয়মিত ও অনিয়মিত পুলিশ বাহিনীর সমন্বয়ে রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়নকে নতুন ভাবে ফ্রন্টিয়ার গার্ডস নামে পূর্ণগঠিন করা হয়। যার সদস্য সংখ্যা ১৪৫৮ জনে উর্ত্তিন্ন করে চট্টগ্রামে সদর দপ্তর স্থাপন করা হয়।
১৮৭৯ সালে স্পেশাল রির্জাভ কোম্পানী নামে এ বাহিনী তৎকালীন সদস্যদের নিয়ে পিলখানায় প্রথম ঘাঁটি স্থাপন করা হয়। ১৮৯১ সালে বাহিনীর নতুন নামকরণ করা হয় বেঙ্গল মিলিটারী পুলিশ। ঢাকা, খুলনা, ভাগলপুর ও গ্যাংটকে ৪টি ব্যাটালিয়নে ভাগ করে কোম্পানীগুলোকে স্থানান্তর করে একজন ইউরোপীয় সুবেদারের অধীনস্থ করা হয়। ১৯২০ সালে কালের বির্বতনে বেঙ্গল মিলিটারী পুলিশকে ইন্টান ফ্রন্টিয়ার রাইয়েল্স নামে পুনঃ নামকরণ করে ১৬টি প্লাটুনে বিভক্ত করে সীমান্ত ও অভ্যন্তরীণ নিরাত্তা রক্ষায় নিয়োজিত করা হয়।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তের পর এ বাহিনীর নামকরণ করা হয় ইষ্ট পাকিস্তান রাইফেল্স (ইপিআর)। কলকাতা মেট্রোপলিটন আর্মড পুলিশের একটি দল পরবর্তীতে আরও তিন হাজার বাঙ্গালীকে নিয়োগ করে এ বাহিনীকে পূর্ণগঠিত করে দক্ষ নেতৃত্ব এবং দিক নির্দেশনার প্রয়োজনে সামরিক বাহিনী থেকে অফিসার নিয়োগ করা হয়। ১৯৫৮ সালে এ বাহিনীকে প্রদান করা হয় চোরাচালান দমনের দায়িত্বে।
দেশ স্বাধীনের পর নতুন আইন সংশোধন এর মাধ্যমে ১৯৭২ সালের ৩ মার্চ ইপিআর এর পোশাক পরিবর্তন সহ নতুন নামকরণ করা হয় বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেল্স)। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি সরূপ এ বাহিনীর ১১৮ জন সদস্যকে বিভিন্ন খেতাবে ভূষিত করা হয়।
সর্বশেষ ২০০৯ সালে পিলখানা সদর দপ্তরে নারকীয় হত্যাকান্ডের পর এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ২০১০ সালের ২০ ডিসেম্বর বিজিবি নামে এটি যাত্রা শুরু করে।
৬ জুন ২০০৫ সালে রামগড় ৩৩ রাইফেল্স ব্যাটালিয়নের উদ্যোগে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেল্স এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এনডিসসি.পিএসসি রামগড়ের অফিসটিলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর দৃষ্টিনন্দন রাইফেল্স স্মৃতিস্তম্ভের শুভ উদ্ভোধন করেন।