আজ রবিবার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ই পৌষ ১৪৩১
দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব বিষয়ে সচেতনামূলক ক্যাম্পেইন

মানবজাতি ও পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে "প্লাস্টিক"

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : রবিবার ২০ অগাস্ট ২০২৩ ১০:২০:০০ অপরাহ্ন | দক্ষিণ চট্টগ্রাম

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডুলাহাজারা ডিগ্রি কলেজে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক আয়োজনে কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশ গ্রহণে "দৈনন্দিন জীবনে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব বিষয়ে সচেতনামূলক ক্যাম্পেইন" অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

 

রবিবার (২০ আগস্ট) দুপুরে কলেজের হলরুম মিলনায়তনে এ সচেতনামূলক ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়। 

উক্ত ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন 

বেলা চট্টগ্রামের বিভাগীয় সমন্বয়ক মনিরা পারভীন।

এতে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব বিষয়ের ওপর নানা দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্য দেন 

ডুলাহাজারা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, চকরিয়া পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি ও দৈনিক সমকাল প্রতিনিধি মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, 

বেলা চট্টগ্রামের ফিল্ড অফিসার ফারমিন এলাহী, চকরিয়া পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক এম.মনছুর আলম। এসময় উপস্থিত ছিলেন 

বেলা চট্টগ্রামের একাউন্টস অফিসার তমিজ উদ্দিন আহমেদ ও কলেজের শিক্ষকবৃন্দ।

 

অনুষ্ঠানের শুরুতে বেলা চট্টগ্রামের বিভাগীয় সমন্বয়ক মনিরা পারভীন অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে নানা ধরণের স্থিরচিত্র প্রজেক্টরের মাধ্যমে উপস্থাপন করে দেখান।

 

সচেতনামূলক ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আমরা নিত্যব্যবহার্য প্লাস্টিকের অধিকাংশ একবার ব্যবহার করে ফেলে দিই, যা জলজ প্রাণী, খাদ্য চেইন, এবং মানবজগতের জন্য এক বিশাল সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ খাল, নালা, পুকুর, নদী হয়ে পরিত্যাক্ত প্লাস্টিকের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হলো সমুদ্র। প্লাস্টিক দূষণ হলো পরিবেশ কর্তৃক প্লাস্টিক বর্জ্যরে আহরণ, যা পরে সামুদ্রিক ও বন্যপ্রাণীসহ তাদের আবাসস্থল, জল, স্থল এবং সর্বপোরি মানবগোষ্ঠীর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। প্রাত্যহিক জীবনে আমরা যেসব পণ্য ব্যবহার করি, তার বেশির ভাগ সামগ্রীই প্লাস্টিকের তৈরি। প্লাস্টিক হচ্ছে কৃত্রিমভাবে তৈরি পলিমার, যা মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি বা প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে রাসায়নিক উপায়ে তৈরি করা হয়। প্লাস্টিক সাধারণভাবে নমনীয়, যা সহজে বাঁকা করা যায়, ক্ষয়রোধী, দীর্ঘস্থায়ী ও কম দামি। এই সহজলভ্য প্লাস্টিক ব্যবহার করে আমরা আমাদের পরিবেশকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছি। দেশে ২০০২ সালে আইন করে পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হলেও আইনের যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না বলে জানান। গত ৫০ বছরে পুরো বিশ্বে মাথাপিছু ১ টনের বেশি প্লাস্টিকের বিভিন্ন পণ্য উৎপাদিত হয়েছে। যার ৯০ শতাংশের বেশি পৃথিবীর পরিবেশকে নানাভাবে বিপন্ন করে তুলেছে। এসব ক্ষতিকর পচনরোধী বর্জ্য পরিবেশে ৪০০ থেকে ১ হাজার বছর পর্যন্ত থাকতে পারে এবং তা মাইক্রো, ন্যানো প্লাস্টিকের কণাসহ নানা ক্ষতিকর পদার্থ নিঃসরণ করে পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যে ভয়ংকর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। মহামারি ও দুর্ভিক্ষের মতোই পরিবেশ বিপর্যয় বিশ্বের অন্যতম প্রধান বিপদ। আগামী দিনগুলোয় পরিবেশবিষয়ক ইস্যুগুলোই পৃথিবীর সামনে প্রধান হয়ে দেখা দেবে। পরিবেশগত বিপদের কারণে পৃথিবীর ভারসাম্য ও মানুষের বসবাস বিপদাপন্ন হবে। প্রকৃতি বিরূপ ও বিরক্ত হলে বিশ্বকে কত রকমের বিপদের সম্মুখীন হতে হয়, সে উদাহরণও হাজির করেছেন পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানীরা।

367491320_896602008466856_6310826337970184454_n

বক্তারা আরও বলেন, প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্লাস্টিক বর্জ্য এমন একটি ক্ষতিকর পদার্থ, যা পরিবেশের সঙ্গে মিশতে অথবা পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ করতে দীর্ঘসময় প্রয়োজন। এর ফলে এটি পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে। এ অবস্থায় প্লাস্টিক দূষণ রোধে সচেতন নাগরিক হিসাবে আমাদের সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন-দৈনন্দিন বাজারের ক্ষেত্রে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিনের পরিবর্তে কাপড় অথবা পাটের ব্যাগের বাধ্যতামূলক ব্যবহার। পানীয়জল ও দুগ্ধ জাতীয়পণ্যের ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাচের বোতল ব্যবহার করা। দোকানে ও লন্ড্রিতে কাগজের ব্যাগ চালু করা। পাটের ব্যাগের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে ও খরচ কমাতে পাটের উৎপাদন বাড়ানো দরকার বলে জানান। প্লাস্টিক বর্জনের ক্ষেত্রে দেশের সকল নাগরিকদের সচেষ্ট হওয়া এবং যত্রতত্র প্লাস্টিক না ফেলে এর ব্যবহার ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা।