আজ বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বাংলাদেশে তারা পদলেহনকারী সরকার চায়: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা অফিস : | প্রকাশের সময় : বুধবার ৩০ অগাস্ট ২০২৩ ০৯:৩০:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

‘আওয়ামী লীগ রক্ত দিয়ে গণতন্ত্র আনলেও আজকে তার হাতে গণতন্ত্র সুরক্ষিত নয়’—এমনটা শুনতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা গণতন্ত্রকে কখনও প্রতিষ্ঠিত হতে দেয়নি, তারাই এখন গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী হয়ে গেছে। আর কিছু বুদ্ধিজীবী এদের পক্ষে কথা বলছে।’ বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কেউ কেউ এখানে পদলেহনকারী সরকার চায় বলেও মন্তব্য করেন সরকার প্রধান।

 

বুধবার (৩০ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের যৌথ উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

 

আওয়ামী লীগ আন্দোলন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে উল্লেখ করে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশে যে গণতন্ত্র ও নির্বাচন, এর জন্য তো আওয়ামী লীগ ও আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও মুজিব আদর্শের সৈনিক রক্ত দিয়ে গণতন্ত্র এনেছে। আজকে আমাদের শুনতে হয়, আমাদের হাতে নাকি গণতন্ত্র সুরক্ষিত না। সুরক্ষিত হলো মিলিটারি ডিকটেটর, অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী, আর চুরি-ডাকাতি করে মানি লন্ডারিং করায় জনগণ যাদের আন্দোলনের মাধ্যমে বিতাড়িত করেছে ও নির্বাচনের মাধ্যমে পরাজিত করেছে। আজকে তাদেরকে তারা খুঁজে বের করে গণতন্ত্রের কথা বলার জন্য। এটাই হচ্ছে আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের। যারা গণতন্ত্রকে কখনও প্রতিষ্ঠিত হতে দেয়নি, তারাই এখন গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী হয়ে গেছে। আর আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী আছে, যারা বুদ্ধি বেচিয়া জীবিকা নির্বাহ করে, আর এদের পক্ষে কথা বলে।’

 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অবাক লাগে যখন বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা শুনি। যাদের জন্ম হয়েছে হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। যাদের সৃষ্টি হয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাত থেকে। যাদের যাত্রা শুরু হয়েছে কারচুপি করে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে। তাদের মুখে আর যা-ই হোক, গণতন্ত্রের কথা শোভা পায় না। তাদের কিছু প্রভু আছে। তারাও তাদের সঙ্গে সুর মেলায়— বাংলাদেশে গণতন্ত্র নাকি প্রতিষ্ঠিত করতেই হবে। তো আমার প্রশ্ন, সেসব লোকদের কাছে বা সেই সব দেশ, যারা এখন গণতন্ত্র খুঁজে বেড়ায়, বাংলাদেশে যখন জিয়াউর রহমান জাতির পিতাকে হত্যা করে মার্শাল ল জারি করে ক্ষমতা দখল করেছিল বা জেনারেল এরশাদ মার্শাল ল জারি করে ক্ষমতা দখল করেছিল, আমরা যখন আন্দোলন সংগ্রাম করেছি, কই তখন তাদের সেই চেতনা দেখিনি। তখন তো তাদের কথা শুনি নাই। আজকে নির্বাচন সুষ্ঠু চায়। আমরা জিয়াউর রহমানের তিনটি নির্বাচন কীভাবে কারচুপি করে, ভোট চুরি করে, সেটা তো স্বচক্ষে দেখি। আজকে যারা বাংলাদেশে টর্চলাইট দিয়ে নির্বাচন খুঁজছেন, তাদের দৃষ্টি শুনি না।’

 

তিনি বলেন, ‘কত পরিমাণ অর্থসম্পদ তারা লুটপাট করে নিয়ে গেছে যে সেই টাকা এখন বিদেশে বসে খরচ করে। বিদেশে বসে সেই টাকা খরচ করে—এখানে আবার অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়। আর গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী কিছু আছে, কয়েকটি দেশ, তারাও নাকি শুধু গণতন্ত্র খুঁজে বেড়ায়।’

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আইন করে নির্বাচন কমিশন করেছি। নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দেওয়া হয়েছে অর্থনৈতিকভাবে। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছে আওয়ামী লীগ। রক্ত দিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আর আজকে আমাদের শুনতে হয়, গণতন্ত্র খোঁজ করে। ভোটের অধিকার খোঁজ করে। কাজেই ভোটের যে অবস্থা ছিল সেটা তো তারা দেখেনি। এগুলো বোধহয়ৃ হ্যাঁ, দেখতেও পারে জানতেও পারে।’

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কেউ কেউ চায় এখানে এমন একটা সরকার আসুক, যারা তাদের পদলেহন করবে। বড় দেশ মোড়লিপনা সব জায়গায় করে থাকে। এরা যাদের বন্ধু হয় তাদের আর শত্রু লাগে না। ইউক্রেন বন্ধু হয়েছিল, আজকে ইউক্রেনের অবস্থাটা কী দাঁড়িয়েছে? সেখানকার মেয়েরা, বাচ্চারা আজ কী কষ্ট পাচ্ছে? এমনই বন্ধুত্ব যে সেই বন্ধুত্বের কারণে তাদের দেশও শেষ। সেখানকার নারী-শিশুরা মানবেতর জীবনযাপন করে। এটাই হলো বাস্তবতা।’

 

খুনিদের লালন-পালন করে

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘মানবাধিকারের কথা আসে। গুম-খুনের কথা বলে। আমার বাবা-মায়ের হত্যাকারী সেই খুনি রাশেদ এখনও আমেরিকায়। বারবার অনুরোধ করি তাকে ফেরত দেন। আমার দেশের বিচার ব্যবস্থায় সে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে। সেখানে তাদের হাত দেওয়ার কী অধিকার আছে। তাহলে এই খুনিকে তারা লালন-পালন করে কেন? আরেকজন নূর। সে তো এখন কানাডা। তাকে তারা ফেরত দেয় না। আর খুনি ডালিম-রশিদ এরা তো পাকিস্তানে। কখনও লিবিয়া যায়। কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়ায়। তাদের খোঁজ তারা দেয় না। মোসলেউদ্দিনের খোঁজ তারা দেয় না। বাকি যে কয়টা পেয়েছিলাম, তাদের রায় কার্যকর হয়েছে। এজন্য আমি দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা আমার পাশে ছিলেন।’

 

তিনি বলেন, ‘আমরা যারা মা বাবা ভাই হারিয়েছি, আমাদের মানবাধিকার কোথায়? আমরা যে বিচার পাইনি, বিচারের জন্য ৩৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে, আমাদের কি বিচার পাওয়ার অধিকার ছিল না? আমরা কি এ দেশের নাগরিক না? রিফিউজি হিসেবে পরদেশে বাস করা কতটা যন্ত্রণার। কতটুকু যন্ত্রণা আমাদের সহ্য করতে হয়েছে। কীভাবে জীবন কেটেছে। তারপরও শোক ব্যথা বুকে নিয়ে ছোট বাচ্চাদের মাতৃস্নেহ বঞ্চিত করে আমি মাঠে নেমেছি, একটা কথা চিন্তা করে, যে জাতির জন্য আমার বাবা-মা জীবন দিয়েছেন, সেই জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে। এই স্বাধীনতা যেন কোনোমতে ব্যর্থ হতে না পারে।’

 

জিয়া না থাকলে মোশতাক সাহস পেতো না

 

১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘মনে হয়েছিল এই হত্যাকাণ্ডটি মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছিল। খুনি মোশতাক ও তার দোসর ছিল জিয়াউর রহমান। খুনি জিয়াউর রহমান জড়িত না থাকলে মোশতাক কখনও সাহস পেতো না। জিয়া যে খুনের সঙ্গে জড়িত তা প্রমাণিত সত্য। ১৫ আগস্টের খুনিদের বিচার থেকে রেহাই দেওয়ার পাশাপাশি পুরস্কৃত করা হয়। তারা বিবিসিকে ইন্টারভিউ দিয়ে গর্ব ভরে বলেছিল—তারা শেখ মুজিবকে হত্যা করেছে, কে তাদের বিচার করবে?’

 

বিএনপি অবৈধ

 

যে ক্ষমতা উচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করে দিয়েছে, তার হাতে তৈরি করা দল, সেই দলই তো অবৈধ হয়ে যায় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেনা রুলস ও সংবিধান লঙ্ঘন করে জিয়াউর রহমান একাধারে সেনাপ্রধান আর সেই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে। ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা জিয়াউর রহমানই শুরু করেছিল। অবৈধভাবে দখল করা, ক্ষমতাকে বৈধতা দেওয়ার জন্যেই ভোট কারচুপি শুরু করে। বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে খেলা শুরু হয়। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর পকেট থেকে বের করা, উচ্ছিষ্ট থেকে বের করা অবৈধ একটি রাজনৈতিক দল হচ্ছে বিএনপি। এই দল দিয়ে নির্বাচনি প্রহসন ও জনগণের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। জিয়া ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করার জন্য মুক্তিযোদ্ধাসহ হাজার হাজার সেনা সদস্য হত্যা করেছে। গুমের কালচার, এটাও জিয়াউর রহমান শুরু করে। যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতায় বসায়। ২১টি বছর চারদিকে ছিল শুধু অন্ধকার। অন্ধকারের দিকে নিয়ে গিয়েছিল জিয়াউর রহমান। এরপর যারা আসে, তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে।’

 

ধূর্ত এরশাদ, জিয়ার লাশের কোনও খবর নেই

 

জিয়াউর রহমানের পরিণতির প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, ‘পাপ বাপকেও ছাড়ে না। যেভাবে জিয়াউর রহমান জাতির পিতাকে হত্যা করেছিল, জিয়াকেও সেই একইভাবে হত্যার শিকার হতে হয়েছিল। সেও কিন্তু খুন হয়। তার লাশেরও কিন্তু কোনও খবর নেই। সংসদ ভবনের পাশে যে কবরটা দেওয়া আছে, সেখানে জিয়াউর রহমানের কোনও লাশ নেই। জেনারেল এরশাদ কিন্তু এ কথাটা বলে গেছেন। বলেছিল, তার লাশ তো পাওয়া যায়নি। জিয়ার লাশ তার স্ত্রী খালেদা জিয়া দেখেনি। তার ছেলে তারেক রহমান ও কোকো দেখেনি। পরিবার পরিজন দেখেনি। তাহলে লাশ গেলো কোথায়। হ্যাঁ, জেনারেল এরশাদ অতি ধূর্ত লোক ছিল বলে একটা বাক্স এনে জনগণকে ধোঁকা দিয়ে সংসদ ভবনের জায়গায়ৃ সেটাও একটা অবৈধ স্থাপনা। সেখানে মাটি দিয়ে রেখে দিয়েছে। আমি দেখি বিএনপির নেতারা সেখানে  ফুল দেয়। কিন্তু কাকে দিচ্ছে ফুল, তারা কি তা জানে? জানে না।’

 

কতটা অমানবিক হলে শোকের দিনে জন্মদিন পালন!

 

খালেদা জিয়ার জন্মদিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের চেনাজানা অনেক আত্মীয়ের ১৫ আগস্ট জন্মদিন। কিন্তু তারা কেউ তো সেটা পালন করে না। এই দিনে কতগুলো মানুষকে হত্যা করেছে। আর ক্ষমতায় আসার পর সেই দিনটাৃ। ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় আসার পর হঠাৎ করে শুনলাম ১৫ আগস্ট তার (খালেদা জিয়া) জন্ম। কত বড় বেইমান, অমানবিক হলে পরে যেদিন সারা দেশের মানুষ শোক পালন করে, আর সেদিন সে জন্মদিন পালন করে। সেনাবাহিনীর স্ত্রী হিসেবে যে তথ্য দেওয়া আছে—সেখানেও ১৫ আগস্ট জন্মদিন উল্লেখ নেই। খালেদা জিয়ার মেট্রিক পরীক্ষার কাগজেও ১৫ আগস্ট নেই। তার পিতার পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাৎকারেও ১৫ আগস্ট নেই। তাহলে একটা মানুষ কতটা অমানবিক হলে পরে একটা শোক দিবসকে জন্মদিন বানিয়ে দিয়ে উৎসব পালন করতে পারে। বড় বড় কেক কাটতে পারে।’

 

২০০১ সালের নির্বাচনের সময় সারা দেশে অত্যাচার নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘বিএনপির সময় হত্যা-খুন ছিল জনগণের ভাগ্যে। তারা জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন কখনও করতে পারেনি।’

 

কিছুটা হলেও আমরা কাজ করতে পেরেছি। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দারিদ্র্যের হার কমেছে। সাক্ষরতার হার বেড়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই এই উন্নয়নটা হয়েছে। সরকার ধারাবাহিকভাবে আছে বলেই এই উন্নয়নটা আমরা করতে পেরেছি। কারও কাছে হাত না পেতে বাংলাদেশ বিশ্বদরবারে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াবে, তার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণে কাজ করে।’