জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর চালান বের করে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য খালাস করে নিয়েছেন আমদানি-রপ্তানি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা। এর মাধ্যমে ২১১ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া তথ্য উদঘাটন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ঘটনায় তারা ১৪টি মামলা করেছে। এসব মামলায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সাত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আমদানি-রপ্তানি কাজে নিয়োজিত ৫৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অ্যাসাইকুড়া ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে ঢুকে একে একে ২২টি পণ্যের চালান বের করে নিয়ে বন্দরে আটকে থাকা এসব পণ্য খালাস করা হয়। এর সঙ্গে জড়িত হিসেবে অভিযুক্ত ৫৪ জনের নাম মামলায় এসেছে মোট ১৩৩ বার। যে দেশ থেকে পণ্য এসেছে ওই দেশের কোম্পানির কাগজপত্র সংগ্রহ চলছে। পাশাপাশি এদেশের আমদানিকারকদের কাগজপত্রের সঙ্গে তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। আরও কিছু কাগজপত্র সংগ্রহের কাজ চলছে। সব কাগজপত্র এলে এবং তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মামলাগুলোর চার্জশিট দেওয়া হবে। গত বছরের ২ মার্চ মামলাগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়। তার আগে এ বিষয়ে সংস্থাটির উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে সাত সদস্যের দল অনুসন্ধান করে। এখন মামলাগুলোর তদন্তে রয়েছেন পাঁচ কর্মকর্তা।
দুদক সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা ছিলেন ডি এ এম মহিবুল ইসলাম। সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ফজলুল হক ২০১৩ সালের ১২ এপ্রিল থেকে ২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট পর্যন্ত কাস্টম হাউসে কর্মরত ছিলেন। তাদের বদলি করার পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়ন্ত্রিত অ্যাসাইকুড়া ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড অপব্যবহার করে ৩ হাজার ৭৯৭ বার লগইন ও লগআউট করা হয়। এর মাধ্যমেই বিভিন্ন পণ্যের নামে আনা দামি সিগারেটের ২২টি চালান খালাস করা হয়েছে। রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয় ২১০ কোটি ৮২ লাখ ৯০ হাজার ৮১০ টাকার। এ ঘটনার সঙ্গে ১৪টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।
এসব মামলায় তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে বদলি হওয়া দুই কর্মকর্তার ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড অপব্যবহার করে বিভিন্ন পণ্যের নামে আনা সিগারেটের এসব চালান ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল থেকে ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে খালাস করা হয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানে ১৪ আমদানিকারক ও সংশ্লিষ্ট ৪০ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। একই ঘটনায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে রাজধানীর রমনা থানায় ২১টি মামলা করে। পরবর্তীতে এসব মামলা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্তভার দেওয়া হয়। কিন্তু মামলার ধারা ও তদন্ত প্রক্রিয়ার ত্রুটির কারণে আদালতের নির্দেশনায় ২০২১ সালের সিআইডি থেকে তদন্তভার দুদকের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর দুদক পুনরায় অনুসন্ধান করে ওইসব মামলায় নতুন মামলা করেছে। একই সঙ্গে গত বছর পুরনো মামলার তদন্ত আদালতের নির্দেশে সিআইডিতে ফেরত পাঠানো হয়।