আজ শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ই শ্রাবণ ১৪৩১
বারইয়ারহাট-রামগড় সড়ক প্রশস্থকরণ

দু’টি কালভার্ট বন্ধ করে দেওয়ায় শতাধিক পরিবার ১৩ দিন ধরে পানিবন্দী

নিজস্ব প্রতিবেদক, মিরসরাই : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ৭ জুন ২০২৪ ০৮:২৭:০০ অপরাহ্ন | দেশ প্রান্তর

মিরসরাই উপজেলার ১নং করেরহাট ইউনিয়নের সরকারতালুক-ছত্তরুয়া গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার গত ১৩দিন ধরে পানিবন্দী হয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। এতে করে বাসা বাড়ি, রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় চরম দুর্ভোগে দিন পার করছেন এখানকার লোকজন এবং দুর্ভোগে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে যাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বৃষ্টির পানিতে এমন জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, সরকারতালুক গ্রামের উত্তর পাশে বারইয়ারহাট-রামগড় সড়কের মাঝখানে দীর্ঘদিন ধরে দু’টি কালভার্ট ছিল। সড়কটি প্রশস্থকরণ নকশায় ওই কালভার্টগুলো না রেখে কাজ শুরু করা হয়। পরবর্তীতে ঠিকাদার পুরাতন কালভার্টগুলো ভেঙ্গে ফেলে। কালভার্টগুলো ভাঙ্গার সময় স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিবাদ করলেও তাদের অভিযোগ আমলে নেয়নি সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা কিংবা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কালভার্ট বন্ধ করে দেওয়ায় এবং সড়ক প্রশস্থকরণের কাজের জন্য সড়ক উঁচু করার ফলে সরকারতালুক-ছত্তরুয়া গ্রামের পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

ভুক্তভোগী পরিবারগুলো অভিযোগ করে বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের পর থেকে বসতঘরে পানিবন্দি হয়ে আছি আমরা। বাচ্চারা পানিতে পড়ে যাচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেওয়ার পাশাপাশি রান্না-বান্না করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন। এছাড়া শিশুদের শরীরের এসব নোংরা পানির কারণে বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে। রাতে সাপের আতঙ্কে বসবাস করছেন তারা। শীঘ্রই এই সমস্যার সমাধানের দাবী জানান তারা। 

ফার্মেসী ব্যবসায়ী অঞ্জন বণিক বলেন, ঘর্ণিঝড় রিমালের পর থেকে এখানে যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে এতে করে আমাদের ব্যবসা লোকসান হচ্ছে। অনেক সময় গাড়ির যাওয়ার সময় দোকানের মধ্যে পানি ডুকে যায়। আমরা চাই দ্রæত এটির সমাধান করা হোক।

স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল করিম নোমান বলেন, আমরা এর আগে কখনো এখানে এমন জলাবদ্ধতা দেখি নাই। যতক্ষণ বৃষ্টি ততক্ষণ পানি থাকতো। বৃষ্টি শেষ হওয়ার সাথে সাথে পানি চলে যেতো। বারইয়ারহাট-রামগড় সড়ক প্রশস্থকরণের সময় পুরাতন দু’টি কালভার্ট ভেঙ্গে ফেলা হয়। নতুন নকশায় কালভার্ট না থাকায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নতুন করে কালভার্ট নির্মাণ করেনি। এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলেও সওজ কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেনি। এখন বর্ষাকাল শুরু হওয়ার সাথে সাথে পানিতে ডুবে গেছে পুরো গ্রাম।

গ্যারেজ মালিক মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, আমার গ্যারেজটি পানির মধ্যে ডুবে আছে। পানির কারণে আমার গ্যারেজের ভিতরের মালামাল পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সামনে ঈদ আসতেছে। এখনো পর্যন্ত গ্যারেজ খুলতে পারছিনা। পারিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে এভাবে চলতেথাকলে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন বলেন, সরকারতালুক গ্রামের বাসিন্দারা পানিতে বন্ধি হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এমন খবর শুনে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শ করেছি। তাৎক্ষণিকভাবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে ড্রেনের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেই। 

মিরসরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, বারইয়ারহাট-রামগড় সড়কের সরকারতালুক এলাকায় দুু’টি কালর্ভাট ছিলো। সড়ক প্রশস্থকরণের সময় কালভার্টগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়। আমি ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালিন অবস্থায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বলেছিলাম কালাভার্ট দু’টি দিয়ে এখানকার পানি নিষ্কাশন হয় এগুলো পুনরায় নির্মাণ করতে হবে। কালভার্টগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাশন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহŸান জানাচ্ছি। 

সড়ক ও জনপদের চট্টগ্রামের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রোকন উদ্দীন খালেদ চৌধুরী বলেন, বারইয়ারহাট-রামগড় সড়কের প্রশস্থকরণের নকশায় সরকারতালুক এলাকায় কোন কালভার্ট না থাকায় নতুন করে কালভার্ট নির্মাণ করা হয়নি। আগে পাইপ দিয়ে এখানকার পানি নিষ্কাশন হতো। নতুন করে আমরা আরসিসি ড্রেনেজ করে দিচ্ছি। পানি ড্রেনের মাধ্যমে একটু দূরে অবস্থিত ব্রীজ দিয়ে চলে যাবে। আগামী দু’য়েকদিনের মধ্যে ড্রেনের কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব হবে।  

প্রসঙ্গত : মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট-রামগড় সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি ভারত সরকারের এলওসি-৩ এবং বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন তহবিলের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১০০ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার দেবে ৫১৩ কোটি ৭ লাখ টাকা। অন্যদিকে ৫৯৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ঋণ দেবে ভারত সরকার। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ২৪৯.২০ মিটারের ৯টি সেতু ও ১০৮ মিটারের ২৩টি কালভার্ট ও ৩৮ ফুট প্রস্থের ৩৮ কিলোমিটার সড়ক। এর আগে অন্য একটি প্রকল্পে বারইয়ারহাট-রামগড় সড়কে ২৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে জাইকার অর্থায়নে রামগড় থেকে বারইয়ারহাট পর্যন্ত ১৬টি ব্রিজ ও কালভার্টের কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিপিসিএল। ব্রিজ ছাড়াও ব্রিজের পাশে ২০০ থেকে ৩০০ মিটার এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করে তারা। রামগড়ে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা চালু হলেই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাত্র তিন ঘণ্টায় পণ্য যাবে ভারতে।