দেশের জনগণের জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে বাবার মতো রক্ত দেবো দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। চোরাগোপ্তা হামলা করে, সন্ত্রাসী করে সরকার হটানো যায় না বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
রোববার (১২ নভেম্বর) বিকেলে নরসিংদী মোসলেহ উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় তিনি নৌকার পক্ষে ভোট চাইলে উপস্থিত জনতা হাত তুলে সায় দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা প্রত্যয় নিয়ে দেশে ফিরেছিলাম, সেটা মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন। আপনাদের ১০টি প্রকল্প উপহার দিয়েছি। একসময় দুর্ভিক্ষ লেগে থাকতো এই দেশে। কথা বলার স্বাধীনতা ছিল না। ভোট ও ভাতের আন্দোলন করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। প্রত্যেক ছেলেমেয়ে যেন স্কুলে যায় সে ব্যবস্থা নিয়েছি। খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি নিরাপত্তা জোর দিয়েছি। মানুষের আয় বেড়েছে। প্রাইমারিতে মায়ের নামে মোবাইলে টাকা চলে যায়। উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি দিচ্ছি। শিক্ষায় আমরা অনেক গুরুত্ব দিয়েছি।’
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল-অবরোধ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই নভেম্বর মাস, যেখানে পরীক্ষা হচ্ছে তারা অবরোধ দেয়। সামনে আসার সাহস নেই। প্রধান বিচারপতির বাসায় আক্রমণ, জাজেস কমপ্লেক্সে আক্রমণ, হাটবাজার, দোকানপাট কিছুই রক্ষা পাচ্ছে না। চোরাগোপ্তা হামলা করে, সন্ত্রাসী করে সরকার হটানো যায় না।’
তিনি বলেন, অস্ত্র-চোরাকারবারি, মানি লন্ডারিংয়ে যুক্ত তারেক (তারেক রহমান) লন্ডনে বসে এত টাকা পায় কোথায়? সাহস থাকলে দেশে আসার কথা বলেন। এসময় ইসরায়েলের হামলার মতো দেশে হাসপাতালে হামলা করা তারেক রহমানের চেলারা জারজ সন্তান কি না সেই প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে আগুনসন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান এসব আওয়ামী সরকার করে দিয়েছে। সামাজিক সুরক্ষা দিচ্ছি। কমিউনিটি ক্লিনিক গিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা ওষুধ পাচ্ছে। প্রত্যেকটা মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। জিনিসের দাম বেড়েছে। এতে আমরা প্রত্যেক পরিবারে কার্ড করে দিয়েছি যেন ভর্তুকি মূল্যে কিনতে পারে। ঘরে ঘরে আলোকিত করার কথা দিয়েছিলাম, আমরা সারাদেশে বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি। এসময় বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপির ক্ষমতা মানেই দেশ পেছনে যাওয়া। আওয়ামী লীগ সরকার ৮০০ টাকা থেকে মজুরি বাড়াতে বাড়াতে ১২ হাজার করেছে। অন্য কোনো সরকার গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বাড়ায়নি। প্রত্যেকটা গ্রাম যেন শহর হয়, শহরের সুবিধা যেন গ্রামের মানুষ পায় এজন্য ব্যবস্থা নিয়েছি। আইটি ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। এতে ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার কাজ করছেন। ঘরে বসে আয় করছেন। সরকারি চাকরির বাইরে যারা আছেন তাদের সবার জন্য সর্বজনীন পেনশনের ব্যবস্থা করেছি। ১০৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি যেন আমাদের ছেলেমেয়েরা কাজ করতে পারে। বিনা জামানতে ঋণ দুই লাখ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। তাই যারা বেকার তারা ব্যবসা করেন, নিজেরা আয় করুন।’
‘আমরা জনগণের জন্য কাজ করি’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির কাজ ধংস করা। ১৫ বছরে কত পরিবর্তন সেটা আপনারা নিজেরাই দেখছেন। নরসিংদী তাঁত, সবজি, বিখ্যাত সাগর কলা যেন দ্রুত ঢাকা যায় সে ব্যবস্থা করেছি। এসময় এ অঞ্চলে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নৌকায় ভোট দিয়েছেন এরপর দেশের উন্নয়ন হয়েছে। আমি আমার বাবা, মা, ভাইদের, স্বজনদের হারিয়েছি। আমরা দেশে আসতে পারিনি। আমার অবর্তমানে আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়। একপ্রকার জোর করেই দেশে ফিরেছিলাম। খুনিদের মদদ দিয়েছে, বিভিন্ন দেশে পদায়ন করে পুরস্কার দিয়েছিল। আমি বিচার চাইতে পারবো না এমন দেশে ফিরেছিলাম একটা প্রত্যয় নিয়ে, সেটা হলো যে দেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছে সেটা ব্যর্থ হতে দেবো না। এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই লক্ষ্য।’
নরসিংদীতে জনসমুদ্র
১৯ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয় গোটা নরসিংদী জেলায়। সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা রং-বেরঙের ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে, রঙিন গেঞ্জি ও টুপি পরে যোগ দেন জনসভাস্থলে। বিকেল ৩টা ২৫ মিনিটে জনসভাস্থলে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরআগে দুপুর ১২টায় সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে জনসভা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। স্টেডিয়ামে মানুষের সংকুলান না হওয়ায় দীর্ঘ পথের নানা জায়গায় হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে থেকেই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনেছেন।
নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম তালেব হোসেনের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা কাজী মোহাম্মদ আলীর সঞ্চালনায় জনসভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, এমপি নজরুল ইসলাম হিরু, জহিরুল হক ভূইয়া, নজরুল ইসলাম বাবু, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি।