তিন মাসের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীর সব ইউনিট ও ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলন শেষ করার জন্য নগর যুবলীগকে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। তৃণমূলের এসব কমিটিতে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত এবং জনমনে নেতিবাচক ভাবমূর্তি আছে— এমন কাউকে না আনার নির্দেশনাও দিয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতারা। অন্যদিকে স্থানীয় যুবলীগের নেতারা মূল দল আওয়ামী লীগে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কথা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তুলে ধরেছেন।
মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে নগর যুবলীগের বর্ধিত সভায় উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতারা এসব নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ ফজলে নাঈম। বর্ধিত সভায় নগর যুবলীগের আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়করা ছাড়াও থানা ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্তত ৩০ জন নেতা বক্তব্য রাখেন।
যুবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভার শুরুতে শেখ ফজলে নাঈম চট্টগ্রাম নগরীতে যুবলীগের তৃণমূলের, বিশেষ করে ওয়ার্ডের সাংগঠনিক অবস্থা জানতে চান। নগর যুবলীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নগরীর ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৭টি ২০০২ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে গঠিত হয়েছে। বাকি ছয়টির মধ্যে কোনোটি দুই বছর, আবার কোনোটি চার বছর পেরিয়ে গেছে। এ পর্যায়ে শেখ ফজলে নাঈম সব ওয়ার্ডে ও ইউনিটে তিন মাসের মধ্যে সম্মেলন শেষ করার নির্দেশনা দেন।
জানতে চাইলে নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দীন বাচ্চু বেলেন, ‘১২৯টি ইউনিট ও ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলন তিন মাসের মধ্যে করার নির্দেশনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা। আমরা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মেনে দ্রুততার সঙ্গে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেব।’
যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ বলেন, ‘নবীন ও পুরনো অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে কমিটি করার কথা বলা হয়েছে। তবে কমিটি করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার জন্যও বলা হয়েছে, যেন দণ্ডিত, সাংগঠনিক শাস্তিপ্রাপ্ত এমন কেউ সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত না হয়। স্বর্ণ-মাদক চোরাচালানের মতো অপরাধে জড়িত এবং যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংস্থার নেতিবাচক রিপোর্ট আছে, তারা যেন তে কোনোভাবেই যুবলীগে না আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য নির্দেশনা এসেছে।’
সভায় উপস্থিত কয়েকজন যুবলীগ নেতা জানিয়েছেন, নগর কমিটির নেতারা মত দিয়েছেন— যারা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তী সব সংগ্রামে অবদান রেখে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন, তাদের হয় পদোন্নতি অথবা মূল দল আওয়ামী লীগে যাবার জায়গা তৈরি করে দেওয়া উচিত। কিন্তু চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ এক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। তারা সদস্য ফরমের নামে নিজস্ব একটি তথ্য বিবরণী সংগ্রহ ফরম বিতরণ করেছে, যেন যুবলীগ থেকে বিদায় নিতে ইচ্ছুক নেতারা আওয়ামী লীগে প্রবেশ করতে না পারেন। যুবলীগকে নেতৃত্ব বিকাশের প্ল্যাটফর্ম উল্লেখ করে নেতারা এই সংগঠনের পুরনোদের আওয়ামী লীগে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার অনুরোধ করেন।
এছাড়া যারা পোস্টার-ব্যানারের মাধ্যমে নেতৃত্ব জাহির করছে, তাদের বিষয়ে নগরীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের যুবলীগ নেতারা সভায় বলেন, এদের অধিকাংশের কোনো রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। এদের কেউ হঠাৎ পয়সাওয়ালা, কেউ ঝুট ব্যবসায়ী, কেউ চাঁদাবাজ, কেউ টেন্ডারবাজ এবং কেউ কেউ আরও বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িত। তারা যুবলীগের মূল কাঠামোর বাইরের মানুষ। তারা অপকর্ম টিকিয়ে রাখার জন্য যেনতেনভাবে পদ বাগাতে চায়। এজন্য তারা নানাভাবে মহড়া দেয়। এরা যদি যুবলীগের মূল কাঠামোতে ঢুকে যায়, তাহলে সংগঠন এবং সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হবে।
সভায় দেওয়া বক্তব্যে শেখ ফজলে নাঈম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক উন্নয়ন কাজ শেষ করেছেন, অনেকগুলো বাকি আছে। প্রধানমন্ত্রী যেন অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে পারেন, সেজন্য যুবলীগকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত হচ্ছে। যুবলীগকে সজাগ থেকে এসব ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত প্রতিহত করতে হবে।’
যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগ ও শহীদুল হক রাসেল বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দীন বাচ্চুর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকার সঞ্চালনায় যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ, মাহবুবুল হক সুমন, দিদারুল আলমও বর্ধিত সভায় বক্তব্য রাখেন।