গত বছর অক্টোবরে পার্বত্য চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের সময় ঢাকার বাসাবো এলাকার একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন নাথান বম, সেখানে আট মাস ছিলেন বলে দাবি র্যাবের।
পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার আল ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার যোগাযোগের নতুন তথ্য সামনে আনল র্যাব।
জামাতুল আনসারের কথিত আমির মো. আনিসুর রহমান মাহমুদকে গ্রেপ্তারের পর সোমবার র্যাবের এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই আনিসুরের মাধ্যমে ঢাকার বাসাবো এলাকার একটি ভাড়া বাসায় আট মাস ছিলেন কেএনএফ নেতা নাথান বম।
ওইসময় নাথান বমের সঙ্গে আনিসুরের নিয়মিত যোগাযোগও ছিল বলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আল মইন জানান।
কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার আল ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আমির মো. আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ কুকি-চিন প্রধানকে বাসাটি ভাড়া করে দেন।
“বাসাটি বিশ হাজার টাকায় ভাড়া করা হয়েছিল আর নাথান বমের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল আমিরের।”
রোববার রাত ৩টা থেকে লৌহজং উপজেলার বড় নওপাড়া গ্রামের এক বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আনিসুরসহ তিনজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র্যাব।
গত বছর অগাস্টে কুমিল্লা ও ঢাকার সাত কলেজছাত্র বাসা থেকে বেরিয়ে নিরুদ্দেশ হয়। অক্টোবরে কয়েকজনকে উদ্ধারের পর নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসারের নাম প্রকাশ্যে আসে। র্যাবের দাবি এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য ঘর ছেড়েছিলেন তারা।
অন্যদিকে পাহাড়িদের কাছে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত কেএনএফ সশস্ত্র কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বেশ কয়েক মাস ধরেই ছিল আলেচনায়। পাহাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য তারা ‘কুকি-চিন রাজ্য’নামে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে আসছে।
জামাতুল আনসারের ডজনখানেক সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব সংগঠনটির ‘বম পার্টি’ যোগের কথা জানায়। পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠনটির পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গি সংগঠনটির সদস্যদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে বলে সে সময় র্যাবের ভাষ্যে উঠে আসে।
এই দুই উগ্র সংগঠনের সম্পর্কের বিষয়টি জানার পরই অক্টোবরে পার্বত্য চট্টগ্রামে সমন্বিত অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ওই অভিযানের সময়ই কুকি-চিন বা ‘বম পার্টি’ নেতা নাথান বম ঢাকায় ছিলেন বলে সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
নাথান বম ঢাকায় কতদিন ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে না জানালেও র্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, গত বছর আট মাস রাজধানীর বাসাবোর এক বাসায় ছিলেন নাথান। বাসাভাড়ার টাকা আমিরের নির্দেশে সংগঠন থেকে দেওয়া হত।
বর্তমানে নাথান বম দেশে নেই জানিয়ে র্যাবের পরিচালক মঈন বলেন, “ধারণা করা হচ্ছে সে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মিজোরামে আছে।”
র্যাব বলছে, ২০২০ সালের শুরুর দিকে নাথান বমসহ কেএনএফ এর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আসলাম নামের এক ব্যক্তির সাথে গহীন পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নিতে যান আনিসুর। সেখানে আসলামের তত্ত্বাবধানে তিনি প্রশিক্ষণ নেন।
প্রশিক্ষণ শেষে তিনি কুমিল্লায় এসে নিজের সম্পত্তি ৫০ লাখ টাকার বেশি দামে বিক্রি করে দেন। এরপর নাইক্ষংছড়িতে তিন বিঘা জায়গা কিনে পরিবারসহ থাকতে শুরু করেন। তিন বিঘা জমির দাম দিয়ে বাকি টাকা তিনি নতুন জঙ্গি সংগঠনকে দেন।
কেএনএফ প্রতিষ্ঠাতা নাথান বমের সাথে ২০২১ সালে জামাতুল আনসারের আমিরের সমঝোতা হয়। পার্বত্য অঞ্চলে কেএনএফের ছত্রছায়ায় জামাতুল আনসার সদস্যদের ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তাদের মধ্যে চুক্তিও হয়।
সেই চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে তিন লাখ টাকা দেওয়ার পাশাপাশি জামাতুল আনসার কেএনএফ সদস্যদের খাবার খরচ বহন করত বলে র্যাবের ভাষ্য।