আজ রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আলীকদমে এডিপির কোটেশান প্রকল্পে ঠিকাদার নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

সুশান্ত কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাঁ, আলীকদম (বান্দরবান) : | প্রকাশের সময় : বুধবার ২২ মে ২০২৪ ১১:০৪:০০ পূর্বাহ্ন | দেশ প্রান্তর

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় গৃহীত ৯টি প্রকল্পের কোটেশান জালিয়তির অভিযোগ উঠেছে স্হানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর  (এলজিইডির)বিরুদ্ধে। এলজিইডি কর্তাব্যক্তিরা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের খেয়ালখুশি মতো ঠিকাদার দিয়েই কাজ বাস্তবায়নের অপচেষ্টা ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুখে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। 

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে এডিপি থেকে তিন কিস্তিতে আলীকদম উপজেলায় ১ কোটি ২২ লাখ টাকার উন্নয়ন বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ২৭টি প্রকল্পের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। অবশিষ্ট বরাদ্দ থেকে ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় কোটেশানে ৯টি প্রকল্প এবং ৩৪ লাখ টাকা ১৭টি প্রকল্প তালিকায় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি স্বাক্ষর করেন উপজেলা প্রকৌশলী, ইউএনও  এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান।

 

আরও জানা যায়,৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গৃহীত কোটেশানের ৯টি প্রকল্পর বিজ্ঞপ্তি নিয়ম অনুযায়ী প্রকাশ করা হয়নি। বিজ্ঞপ্তি টাঙানো হয়নি এলজিইডির নোটিশ বোর্ডেও। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালামের সাথে আঁতাত করে উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ ও সহকারি প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম নিজেদের পছন্দ মাফিক ঠিকাদার মনোনীত করে তালিকা তৈরী করেন। এলজিইডি এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের ‘খয়ের খা’ হিসেবে চিহ্নিত এসব ঠিকাদার ৩৫ লাখ ৫০ টাকার প্রকল্পের বিপরীতে কমিশনের উৎকোচ বিগত নির্বাচনের আগেই প্রদান করা হয় বলে সূত্রে জানা গেছে। 

 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আলীকদম ঠিকাদার সমিতির সভাপতি জুলফিকার আলী ভূট্টো বলেন, ‘এডিপির কোটেশন বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে আমি জানি না।’ একই কথা বলেন, সিনিয়র ঠিকাদার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অংশেথোয়াই মার্মা।

 

সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ডালিম পাল জনান, সরকারি উন্নয়ন বরাদ্দের অর্থ লোপাট করতেই কোটেশানের প্রকল্পগুলো জালিয়তির মাধ্যমে মনোনীত ঠিকাদারদের মাঝে ভাগভাটোয়া করে তালিকা করেছে স্হানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি। 

 

সংশ্লিষ্টরা বলেন, জেঁকেবসা অনিয়মে আলীকদম এলজিইডি এখন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এ সরকারি প্রতিষ্ঠানে মূল কর্তাব্যক্তির খেয়ালীপনায় সহকারি প্রকৌশলী শরিফের অদৃশ্য ইশারায় চলছে সব কাজ। বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড় হওয়ায় সরকারি অর্থের লোপাটের সব আয়োজন তার ইন্ধনে হচ্ছে। 

 

প্রকল্প বাছাই, প্রস্তুতকরণ ও অনুমোদন পদ্ধতিতে মানা হয় না স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশিকা। কর্তাব্যক্তিরা নিজের আখের গোছাতে মনগড়া প্রকল্প গ্রহণ করেন। এ যেন ‘লাগবে টাকা দেবে গৌরিসেন’ প্রবাদের মতো। এর আগে উপজেলার চারটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করে এডিপির প্রকল্প গ্রহণ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। 

 

জানা গেছে, কোটেশানের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য নিজেদের মনোনীত ঠিকাদারদের নামের তালিকা গত সপ্তাহে ইউএনও’র কাছে উপস্থাপন করে এলজিইডি। তবে সে তালিকা নিয়ে সন্দিহান হওয়ায় ইউএনও ফাইলটি ফেরত পাঠিয়েছেন। 

 

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সহকারি প্রকৌশলী শরীফ জানান,এডিপির প্রকল্প সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।

 

তবে উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, এডিপির প্রকল্পের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। নোটিশ বোর্ডে কোটেশান বিজ্ঞপ্তি কেন দেওয়া হয়নি জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি জানি না চেয়ারম্যান জানেন’। কোটেশানের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য ঠিকাদার মনোনীত করে ইউএনওর কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলে সেটি ফেরত পাঠানো হয়েছে বলেও স্বীকার করেন উপজেলা প্রকৌশলী।