প্রবাসীদের সৌদি আরবে আসার সময় কাজ সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট পেশায় প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে আসার জন্য রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার) আহ্বান জানান। জাতীয় প্রবাসী দিবস, ২০২৩ উপলক্ষ্যে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৌদি প্রবাসী সকল বাংলাদেশীকে শুভেচ্ছা জানান এবং জাতীয় অর্থনীতিতে তাদের অবদানের জন্য প্রশংসা করেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রথম বারের মত জাতীয় প্রবাসী দিবস,২০২৩ উদযাপিত হচ্ছে।‘প্রবাসীর কল্যাণ, মর্যাদা আমাদের অঙ্গীকার; স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ায় তারাও সমান অংশীদার’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এই দিবস পালিত হচ্ছে। দূতাবাসের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় রাষ্ট্রদূত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন প্রবাসীবান্ধব সরকার কর্তৃক প্রবাসীদের কল্যাণে গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগের জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তাছাড়া জাতীয় অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদানের স্বীকৃতি প্রদান করতে প্রতিবছর ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় প্রবাসী দিবস ঘোষণা করায় আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
এ যাবত প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ অভিবাসী কর্মী বিদেশে কর্মসংস্থানে নিয়োজিত রয়েছেন। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী প্রায় ২৪ লক্ষ বাংলাদেশী ডায়াসপোর জনগোষ্ঠীও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছেন। অভিবাসীরা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২১.৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স প্রেরণ করেছেন। একই সময়ে সৌদি আরব হতে বাংলাদেশে ৩.০৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স প্রেরিত হয়েছে যা মোট রেমিট্যান্সের ১৬ শতাংশ। তবে সৌদি আরব হতে অধিক হারে দক্ষ কর্মী নিয়োগ হলে আরো বেশী রেমিট্যান্স প্রেরণের সুযোগ রয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মীদের শিক্ষা ও কারিগরি দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ দূতাবাসের মধ্যস্থতায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষন ব্যুরো (বিএমইটি) এবং সৌদি সরকার অনুমোদিত Takamol for Bussiness Services Company এর মধ্যে Skills Verification Programme (SVP) বাস্তবায়ন সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তির আওতায় ২৯টি পেশায় বাংলাদেশ হতে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সৌদি সরকার প্রদত্ত দক্ষতার সনদ নিয়ে অধিক বেতনে সৌদি আরবে কাজ করতে পারবেন। তাছাড়া যাদের উচ্চ শিক্ষার আকাঙ্খা থাকা সত্যেও যারা পড়াশুনা শেষ করতে পারেননি দূতাবাসের উদ্যোগে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে এসএসসি, এইচএসসি এবং ডিগ্রি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে শিক্ষাগত যোগ্যতা বৃদ্ধি করতে পারবেন।
উল্লেখ্য ২০৩০ সালে World Expo এবং ২০৩৪ সালে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ এর আয়োজক দেশ হিসেবে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হওয়ায় সৌদি আরবে কন্সট্রাকসন, ক্লিনিং, মেইনটেন্স, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি সেক্টরে দক্ষ কর্মীদের ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ হতে দক্ষতা অর্জন করে সৌদি আরবে আসলে সম্মানজনক কাজ ও কয়েকগুণ বেশী বেতন পাওয়া যাবে। ফলে অধিক হারে রেমিট্যান্স পাঠানোর মাধ্যমে নিজ পরিবার, এলাকা এবং দেশের উন্নয়নে আরো বেশী অবদান রাখতে পারবেন।
অসুস্থ কর্মীদের চিকিৎসার্থে আর্থিক সহায়তা প্রদান,প্রবাসে মৃত কর্মীদের দেশে ফেরত পাঠানোসহ মৃত কর্মীর পরিবারকে তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত আর্থিক অনুদান দেয়া হচ্ছে।বিদেশগামী যাত্রীদের বীমার আওতায় আনার জন্য ‘প্রবাসী কর্মী বীমা স্কীম’চালু করা হয়েছে। বৈশ্বিক শ্রমবাজারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কর্মীদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত কারিগরী প্রশিক্ষন কেন্দ্রসমূহ বিভিন্ন দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন শ্রম বাজার উন্মুক্তকরণের জন্য দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত জাতীয় প্রবাসী দিবস উপলক্ষ্যে দূতাবাস কর্তৃক বিশেষ সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন করেন। তিনি সৌদি আরবে অথবা বাংলাদেশে যেকোনো সমস্যায় দূতাবাসের সেবা গ্রহণের জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান। তাছাড়া হাসি মুখে প্রবাসীদেরকে কাঙ্খিত সেবা প্রদানে আরো বেশী উদ্যোগী ও যত্নবান হওয়ার জন্য দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশনা দেন। রাষ্ট্রদূত আরো বলেন যে সৌদি আরবে মৃত বাংলাদেশীদের বকেয়া বেতন ও পাওনা আদায়ের জন্য দুতাবাসের উদ্যোগে দু’টি সৌদি ল’ ফার্ম এর সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ইতোমধ্যে মৃত প্রবাসী কর্মীর পরিবার এর সুফল পেতে শুরু করেছেন। ডিসেম্বর ২০২৩ মাসে ৬৫ জন মৃত বাংলাদেশীর পরিবারের পাওনা বাবদ ৩৩ কোটি টাকা আদায় করে দেশে প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রবাসী ভাই-বোনেরা তাঁদের কর্মদক্ষতা,সততা ও দেশপ্রেমের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী এবং বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবেন বলে রাষ্ট্রদূত আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আলোচনা সভা শেষে সকল প্রবাসী বাংলাদেশী ও দেশের সকলের সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তি কামনা করে দোয়া করা হয়।