অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, শপথ নিবেন আজ শপথ নিতে পারেন বলে জানা গেছে। সদ্য বিদায়ী সরকারের আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। সুপ্রদীপ চাকমার জন্ম ১৯৬১ সালে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের কমলছড়িতে। তিনি সপ্তম বিসিএস-এ সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।
২০২৩ সালের ২৪ জুলাই রাষ্ট্রপতির আদশক্রমে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব কানিজ ফাতেমা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে সুপ্রদীপ চাকমাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়।
সে সময় প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নডন বোর্ড আইন, ২০১৪ এর ধারা-৬(২) অনুযায়ী বিসিএস (পররাষ্ট্র) ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমাকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সাথে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী ২ বছর মেয়াদে সরকারের সচিব পদমর্যাদায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়া হলো। এই নিয়োগের অন্যান্য শর্ত অনুমোদিত চুক্তিপত্র দ্বারা নির্ধারিত হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
এ ব্যাপারে সুপ্রদীপ চাকমা গণমাধ্যমকে বলেন, আমি তো জানিই না। আমি জানলে তো আমি ওখানেই থাকতাম। ওখানে থাকতে পারলে আমি খুব খুশী হতাম। ৫ তারিখ এই বিল্পব ঘটলো কারা ঘটিয়েছিল। যৌবন এ বিপ্লব ঘটিয়েছিল। এটার প্রয়োজন ছিলো। আবু সাইদের হত্যাকাণ্ডের ভিডিও আমি বহুবার দেখেছি। এভাবে যে মানুষ মারা যায় তা অকল্পনীয়।
আমি ড. মুহম্মদ ইউনুস সাহেবকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি এই দায়িত্বটা নিয়েছেন। আমাকে এই সিলেকশনের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পার্বত্য চট্টগ্রামের বার্তাগুলো আমি পৌঁছে দেবো। এখানে একটা এগ্রিমেন্ট হয়েছে। ওই এগ্রিমেন্ট সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করতে হবে।
উল্লেখ্য, সুপ্রদীপ চাকমা (প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ও সচিব) ২০২৩ সালের ২৭ জুলাই পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে চেয়ারম্যান (সচিব পদমর্যাদা) হিসেবে যোগদান করেন। বোর্ডে যোগদান করার পূর্বে তিনি ১৯৮৫ ব্যাচের বিসিএস (এফএ) এর সদস্য ছিলেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী থেকে প্রথম ফরেন সার্ভিসে যোগদান করেন এবং পরবর্তীকালে সচিব পর্যায়ে প্রথম চাকমা হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। দেশে-বিদেশে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে চাকরি করার পর সর্বশেষ মেক্সিকো সিটি, বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত পদ হতে ২০২১ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
রাষ্ট্রদূত (প্রাক্তন) সুপ্রদীপ চাকমা খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি খাগড়াছড়ি থেকে ১৯৭৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন; ১৯৭৯ সালে ইন্টারমিডিয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ হতে ১৯৮২ সালে স্নাতক ও ১৯৮৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে জনাব চাকমা মরক্কো (মালির সমবর্তী), শ্রীলঙ্কা (মালদ্বীপের সমবর্তী), বেলজিয়াম (সুইজারল্যান্ডের সমবর্তী) এবং তুরস্কে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯-২০১৪ সাল পর্যন্ত ভিয়েতনামে (লাও পিডিআর-এর সমবর্তী) এবং ২০১৫-২০২১ সাল পর্যন্ত মেক্সিকো (কোস্টারিকা, ইকুয়েডর, হন্ডুরাস, গুয়াতেমালা, পানামা এবং পেরু)’তে (সমবর্তী) রাষ্ট্রদূত হিসাবে অত্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রশাসন, কনস্যুলার রাজনৈতিক অনুবিভাগে এবং প্রটোকলে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে বিভিন্ন শাখায় সহকারী সচিব, পরিচালক ও মহাপরিচালক হিসাবে কর্মরত ছিলেন।
জনাব সুপ্রদীপ চাকমা সরকারী চাকরি হতে অবসর গ্রহণের পর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পেশাগত অভিজ্ঞতা অর্জনের লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় উন্নয়ন কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন।
জনাব সুপ্রদীপ চাকমা দেশে-বিদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান ও বিশ্বদ্যিালয়ে বিভিন্ন মেয়াদে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তন্মধ্যে বৈদেশিক পরিষেবা প্রশিক্ষণ (১৯৮৮-৮৯), মৌলিক সরকারী প্রশিক্ষণ বিপিএটিসি-তে (১৯৮৯-৯০), প্যারিসে ফরাসি ভাষা এবং কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ (১৯৯০-৯২), এশিয়া প্যাসিফিক সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্টাডিজ (এপিসিএসএস) ২০০১ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
জনাব সুপ্রদীপ চাকমা প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত গ্রুপ Association of Foreign Ambassadors (AOFA) সদস্য, জগন্নাথ হল অ্যালামনাই এর সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিল অ্যালামনাই এর সভাপতি।
তাঁর প্রিয় শখের মধ্যে সমসাময়িক কালের তুলনামূলক অধ্যয়ন এবং আধ্যাত্মিক উন্নয়ন ছাড়াও অবসর সময়ে গান শোনা, চিত্রাঙ্গন করা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
পারিবারিক জীবনে জনাব সুপ্রদীপ চাকমা ও মিসেস নন্দিতা চাকমা দুই সন্তানের জনক।