সাতকানিয়া উপজেলার কেওচিয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত তেমূহনী আলমগীর সড়কের পাশে ৫নং ওয়ার্ডে তিন তলা বিল্ডিংএ ঋণ দেওয়ার কথা বলে 'সিবিডিসি’ এনজিও নামে একটি ভুয়া এনজিও প্রতারণা করে সাধারণ মানুষের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছে বলে জানা যায়। ঋণ না দিয়ে ওই এনজিওর কর্মকর্তারা এলাকা ছেড়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন। খবর পেয়ে রবিবার ও সোমবার শত শত ভুক্তভোগী ঋণ না পেয়ে এনজিও অফিসে জড় হন। এ সময় ভুক্তভোগীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে বিশৃঙ্খল আচরণ শুরু করলে স্থানীয় ইউপি সদস্য লোকমান, সাতকানিয়া থানার এসআই নাঈম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি সরকার কর্তৃক কোন প্রকার অনুমোদিত না দেখিয়ে প্রতারণামূলকভাবে বিভিন্ন প্রচার ও কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। কেওচিয়া তেমূহনী এলাকায় আবদুল মালেক মানিক মালিকানাধীন বাসা থেকে কয়েক দিন ধরে প্রাতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলছিল। প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় দেখানো হয়েছে টাংগাইল জেলার মির্জাপুরে। (সিবিডিসি) এর ম্যানেজার জসীমের নেতৃত্বে মাঠপর্যায়ের তাদের কর্মী লোকদের মাধ্যমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার দোকানদার, যুবক, চা শ্রমিক, গৃহকর্মী ও নিম্নআয়ের মানুষদের কাপড়ের ব্যবসা, মনোহারি, হার্ডওয়্যার, মৎস্য খামার, গরুর খামার, প্রবাসী ঋণ এবং যেকোনো বৈধ ব্যবসায় ঋণের লোভ দেখিয়ে সঞ্চয়ের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এদিকে ভুক্তভুগীদের মধ্যে আবদুল গফুর নামের একজন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় আমি সহ ৬ জনকে ঋণ দেওয়ার জন্য খলিলুর রহমান সদস্য ভর্তি বাবদ প্রথমে ৬২০ টাকা করে নেন। এর মধ্যে যাদের জন্যঋণের প্রস্তাব পাশ হয়েছে তাদের কারও কাছ থেকে প্রতি লাখে ১০ হাজার টাকা, দুই লাখে ২০ হাজার টাকা, ৫০ হাজারে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ঋণ নেওয়ার জন্য অফিসে এসে দেখি কর্মকর্তারা অফিস তালাবদ্ধ রেখে পালিয়ে গেছে। আমরা এখন আমাদের টাকাগুলো কিভাবে পাব ? অফিসে এসে দেখি তারা কেউই নেই। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি, যাতে ওই প্রতারক চক্রকে ধরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং আমাদের প্রাপ্ত টাকাগুলো যেন ফিরে পাই।’ সরেজমিন দেখা গেছে, ওই প্রতিষ্ঠানের অফিস তালাবদ্ধ। অফিসের সামনে শত শত লোক তাদের ঋণ নেওয়ার জন্য ভিড় করেছেন; কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজন উধাও। জানালা দিয়ে দেখা যায় অফিসের টেবিলে ঋণ দেওয়ার পাশ বই, রেজিস্টার খাতাসহ চেয়ার রয়েছে। এ সময় অফিসের সামনে থাকা প্রায় শতাধিক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে সঞ্চয় ও ঋণের পাশ বই পাওয়া গেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজন প্রায় ৫ শতাধিক সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রায় ১কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বাসার মালিক আবদুল মালেক মানিক বলেন, বৃহস্পতিবার ১২ই এপ্রিল ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার জসিম উদ্দিন আমার বাসার একটি ইউনিট মাসিক হিসেবে ভাড়া নেন। পরদিন তারা ভোরে বাসায় উঠেন। শনিবার আমার সঙ্গে বাসা ভাড়ার চূড়ান্ত চুক্তি করার কথা ছিল।পরে তারা হেড অফিসের কথা বলে কিছু দিন সময় নে। ১৯ এপ্রিল সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি তারা বাসা তালাবদ্ধ করে পালিয়ে গেছে। এ বিষয়ে (সিবিডিসি) এর ম্যানেজার জসিম ও মাঠকর্মীদের মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। মম স্থানীয় ওয়ার্ড ইউপি সদস্য লোকমান বলেন, ‘আমার এলাকায় প্রতিষ্ঠানটি থাকা সত্ত্বেও আমি বিষয়টি জানতাম না। এটি একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান। এরা বিভিন্ন এলাকার শত শত সাধারণ মানুষকে ঋণ না দিয়ে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তাছাড়া বাসা ভাড়া দেওয়ার সময় মালিককে ওই প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কাগজপত্রাদি যাচাই করা উচিত ছিল বলে জানান তিনি। সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি শান্ত রাখা হয়। এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজনদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। এবং উপজেলা নির্বাহী স্যারের নির্দেশনা মতে বাসার মালিক ও অফিসটি সিজ করে পুলিশের নজরধারি রাখা হল।