বাড়ির রুম দখল করে বাড়ি থেকে মাকে বের করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে ছেলে মোজাফ্ফর আহমদ (৫২) এর বিরুদ্ধে। প্রতিবাদ করায় মাকে ও ছোট ভাইকে হত্যা করার ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার হুমকী দেন। ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ছৈয়দাবাদ কাজীরখীল এলাকার নজির মেস্ত্রীর বাড়িতে।
অসহায় ওই মা'র নাম রাবিয়া বেগম(৬৮)।তিনি উক্ত এলাকার মৃত নজির আহমদের স্ত্রী।
নিজ বাড়ি হতে তাড়িয়ে দেওয়া অসহায় মা, তাহার ছেলে সোহানুর রহমান,মেয়ে ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ছৈয়দাবাদ কাজীরখীল এলাকার নজির আহমদ গত ১২ বছর আগে মারা যান। মারা যাওয়ার পূর্বে তিনি এক স্ত্রী,২ ছেলে ও ৪ মেয়ে রেখে যান। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে ছোট ছেলে সোহানুর রহমানের কাছে থাকত মা রাবিয়া বেগম(৬৮)। পিতা নজির আহমদের মৃত্যুর পরবর্তীতে ছেলে মোজাফ্ফর আহমদ ও তার বউ জেসমিন আক্তার বাড়ির রুম ছেড়ে দেওয়ার জন্য মা রাবিয়া বেগমের উপর বার বার চাপ সৃষ্টি করেন। এক পর্যায়ে গত শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯ টার মধ্যে মায়ের থাকার রুমের জিনিসপত্র বাহির ফেলে দিয়ে ঐ রুমে তালা ঝুলিয়ে দেন।এ ঘটনায় স্বামীহারা বৃদ্ধা উপায়হীন হয়ে আজ অবধি বাহিরে বাহিরে দিন কাটাচ্ছেন।পরে এলাকার লোকজন ও আত্তীয়দের মাধ্যমে থানার দ্বারস্থ হন।থানায় অভিযোগ দিলেও গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ওই বৃদ্ধা নিজ বাড়িতে উঠতে পারেননি।
এদিকে বৃদ্ধা মা রাবিয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, বড় ছেলে মোজাফ্ফর আহমদ ও তার স্ত্রী জোরপুর্বক আমাকে স্বামীর বসত ঘর থেকে বের দেয়।এখন আমি পথে পথে দিন কাটাচ্ছি। নামাজ ও খাবার খেতে কখনও মেয়ের বাড়ি কখনও অন্যের বাড়িতে যাই।তিনি অশ্রুসজল চোখে কাদতে কাদতে আরো বলেন আমি কি আর স্বামীর বাড়িতে থাকতে পারব না।এধরনের কাজে প্রতিবাদ করলে বড় ছেলে আমাকে ও আমার ছোট ছেলে হত্যা করার ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার হুমকী দেন।
ছোট ভাই সোহানুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, বড় ভাই মোজাফ্ফর ও ভাবী জেসমিন আক্তার কর্তৃক মায়ের থাকার রুমটি জোরপুর্বক তালা মেরে মাকে ঘর থেকে বের করে দেন তারা।এখন মাকে নিয়প কোথায় থাকব তা বুজতেছি না।আমি প্রশাসনের উর্ধতন কতৃপক্ষের সহযোগীতা কামনা করছি।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত ছেলে মোজাফ্ফর আহমদ বলেন,আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পুর্ন মিথ্যা,বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।মুলত ঘটনাটি হল আমারা যে বাড়িতে থাকি সেখানে রুম আছে ৫টি।ওই ৫টি রুমের মধ্যে ২টি রুমে আমি পরিবার নিয়ে থাকি।বাকি ৩টি রুমে আমার মা ও ছোট ভাই থাকেন। আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে বড় হওয়ায় দরুন ঐ ৩ রুমের একটি রুমে আমার সন্তানরা থাকতে চাওয়ায় বিরোধ সৃষ্টি হয়।আমি আজ পর্যন্তও আমার মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিই নাই।হয়তো কারো প্ররোচনায় পড়ে আমার মা থানায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন।
বৃদ্ধা এক মা কে বাড়ি থেকে ছেলে ও ছেলের বউ কতৃক বাড়ি থেকে বের করে দেয়াওয়ার বিষয়ে উপজেলার ছদাহা ইউনিযন পরিষদের সদস্য নজরুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন,আসলে ঘটনাটি ঠিক ঐ ধরনের নয়।মুলত তাদের বাড়িটি হল ৫ রুমের।২ রুমে বড় ভাই,২ রুমে ছোট ভাই ও ১রুমে মা থাকত।বড় ভাইয়ের ছেলে মেয়ে বড় হওয়ায় বাড়ির আর একটি রুম ব্যাবহার করতে চাইলে বাড়িতে ঝামেলার সৃষ্টি হয়।
সাতকানিয়া থানার উপ- পরিদর্শক প্রবীন দেব জানান,বৃদ্ধা এক মা কে বাড়ি থেকে ছেলে ও ছেলের বউ কতৃক বাড়ি থেকে বের করে দেয়াওয়ার অভিযোগটি হাতে পেয়ে অতিদ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে দেখা যায় বিষয়টি ওই রকম নয়।মুল ঘটনা হল বাড়ির একটা রুম নিয়ে তাদের সমস্যা।আশা করি এলাকার মান্যগণ্য লোকদের মধ্যস্থতায় বৃৃহস্পতিবার বিষয়টি শেষ হয়ে যাবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস।
সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি)মোঃ ইয়াসির আরাফাত বলেন,উক্ত বিষয়টি আমি অতি গুরুত্ব সহকারে দেখছি।