স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা পরবর্তী সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম মতবিনিময় সভা (১৯আগস্ট শনিবার) লামা প্রেস ক্লাব হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় লামা পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম লিখিত বক্তব্য পাঠ করে জানান, বান্দরবান জেলার সব চেয়ে জনবহুল এবং জনগুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হচ্ছে লামা উপজেলা। গত ৭, ৮ এবং ৯ আগস্ট প্রবল বর্ষনের ফলে উপর থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে লামা পৌরসভাসহ এ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন বন্যা প্লাবিত হয়ে পড়ে। লামার ইতিহাসে স্মরণকালের এ ভয়াবহ বন্যায় সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় লামা পৌরসভা এলাকা। মানুষের ঘর বাড়ি, দোকানপাট, কৃষি জমি এবং পুকুর টানা তিন দিন বন্যার পানিতে প্লাবিত থাকায় বন্যার ভয়াবহতা এবং ক্ষতি ব্যপক আকার ধারন করে যা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে। বন্যা কালিন বিদ্যুৎ না থাকা এবং মোবাইল নেটওয়ার্কে সমস্যা করায় জনদূর্ভোগ চরম আকার ধারন করে। এক দিকে বন্যার পানিতে পুরো এলাকা নিমজ্জিত, অপরদিকে বিদ্যুৎ এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক বিহীন, এমন প্রতিকূল অবস্থায় আপনারা ছিলেন আপনাদের পেশার প্রতি অবিচল। এ প্রতিকুল পরিবেশে অপনারা নিয়মিত সচিত্র সংবাদ পরিবেশন করে বন্যার ভয়াবহতার চিত্র তুলে ধরেছেন। তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
আপনারা জানেন প্রায় প্রতি বছরই আমরা কম বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হই। এবারের দুর্যোগ ছিলো আমাদের সকলের জন্য ভয়াবহ। ভৌগলিক অবস্থানের কারনে পৌরসভা এলাকা একটু বেশি বন্যা কবলিত হয়। আমাদের দক্ষিন দিকে অলীকদম উপজেলার মায়ানমার সীমান্ত পর্যন্ত, পূর্ব দিকে রুপসীপাড়া এবং লামা ইউনিয়নের শেষ সীমান্ত পর্যন্ত এবং উত্তর দিকে গজালিয়া ইউনয়নের সর্বশেষ সীমন্ত পর্যন্ত এলাকার সমস্থ বৃষ্টির পানি লামা পৌরসভার লামা বাজারের পাশ ঘেষে মাতামুহুরী নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়। অতিবর্ষণের ফলে এ ব্যাপক এলাকার বৃষ্টির পানি পৌরসভার পাশ ঘেঁষে প্রবাহিত হওয়ার সময় সুখ ও দুঃখ পাহাড়ের মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে প্রবাহিত হতে না পেরে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ফুলে ফেঁফে উঠে আমাদেরকে প্লাবিত করে। আমাদের ব্যাপক জান-মালের ক্ষতি করে। এবারের বন্যায় লামা পৌরসভা এলাকায় প্রতিটি ওয়ার্ডই গ্লাবিত হয়েছে। এসময় ৮ থেকে ২৫/৩০ ফুট পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে জনবসতি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বিভিন্ন দপ্তর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষি জমি এবং পুকুরসমূহ ও রাস্তাঘাট। শুধু বন্যা নয়, প্রবল বর্ষনের ফলে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধ্বসে অসংখ্য ঘর-বাড়ি বিধস্থ ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
লামার ইতিহাসে স্মরণকালের এ ভয়াবহ বন্যায় লামা পৌরসভা এলাকায় শত কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বন্যায় লামা পৌরসভার ৯ টি ওয়ার্ডে শড়ে ৪ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত ও পাহাড় ধ্বসে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তার মধ্যে সম্পূর্ণ ঘর বিধ্বস্থ হয়ে ক্ষতিস্থ হয় ২০ পরিবার এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয় ৫ শ' পরিবার। লামা বাজার এবং এর আশপাশ এলাকার প্রায় ১ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। এসকল ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৭০ ভাগ মলামাল নষ্ট হয়ে ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হন। অভ্যন্তরীন বিভিন্ন সড়ক ভেঙে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ৮৫ ভাগ আবাদী জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি দপ্তর বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ব্যপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। অসংখ্য গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগী বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এলাকার প্রায় ৯০ ভাগ রিংওয়েল বন্যা প্লাবিত হয়েছে।
আমরা বন্যা এবং পাহাড় ধ্বসের এ ক্ষয়ক্ষতি দ্রুত কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছি। বন্যা পূর্ববর্তী সময়ে আমরা মাইকিং করে লোকজনকে নিরাপদে কিংবা অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র সমূহে আশ্রয় গ্রহন করার অনুরোধ করেছি। বন্যায় প্রাণিত লোকজনকে আমরা উদ্ধার করে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে এসে সেখানে তাদের প্রয়োজনীয় খাবারের ব্যবস্থা করেছি। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বন্যা চলাকালিন প্রায় প্রতিটি মুহুর্তেই লামাবাসীর খোঁজ খবর নিয়েছেন। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ে নির্দেশে বন্যা পরবর্তী সময়ে এর ক্ষয়ক্ষতি দ্রুত কাটিয়ে উঠতে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছি অত্যান্ত দ্রুততম সময়ের মধ্যে লামা বাজারের প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন গলি ও আভ্যন্তরীণ সড়ক সমূহ পরিস্কার করে লোকজনের চলাচল উপযোগি করে তোলা হয়েছে। মন্ত্রী মহোদয় নিজেই বন্যা কবলিত পৌরসভা এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ জনসাধারণকে দেখাতে ছুটে এসেছেন। আমরা মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের মাধ্যমে ইতিমধ্যে বন্যা কবলিত ২ হাজার ৯শ' পরিবারের মাঝে খাদ্য শস্য এবং ২শ' পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ করেছি। ক্ষতিগ্রস্থদের প্রয়োজনীয় সকল ধরনের সহায়তার চেষ্টা করা হচ্ছে। লামা পৌরসভা এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনের সহায়তায় ইতিমধ্যে বেসরকারি উদ্যোগে যারা এগিয়ে এসেছেন তাদের সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ, বান্দরবান জেলা প্রশাসন, লামা উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনকে আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি দ্রুততম সময়ে পৌরসভার বন্যা কবলিতদের মানবিক সহায়তা করার জন্য। দুর্যোগে, দুর্দিনে আগামীতেও আমরা সকলে এক সাথে কাজ করবো। এ দুর্যোগের ক্ষয়-ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সকলের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন,লামা উপজেলা আওয়ামিলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু প্রদীপ কান্তি দাশ,প্রেস ক্লাব সভাপতি প্রিয়দর্শী বডুয়া,প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ হোসেন বাদশা,পৌর আওয়ামিলীগের সভাপতি মো.রফিক,পৌর কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন, মহিলা কাউন্সিলর মরিয়ম বেগম,সাকেরা বেগম,লামার কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেক্সটনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিক বৃন্দ।