রোহিঙ্গাদের ভোটার করতে কেউ সহায়তা করলে বা মিথ্যা তথ্য দিলে তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার জন্য ‘বিশেষ কমিটিকে’ নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে বিশেষ কমিটি পুনর্গঠন করে দ্রুত চট্টগ্রাম অঞ্চলের আবেদন নিষ্পত্তি করার জন্য বলেছে সংস্থাটি।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৫ সদস্যের আগের কমিটিকে ১২ সদস্যে নামিয়ে আনা হয়েছে। আগের কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে উপজেলা আনসার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে। তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে আগে হেডম্যান ও কারবারিকে রাখার কথা বলা হলেও নতুন কমিটিতে যেকোনো একজনকে রাখার জন্য বলা হয়েছে।
পুনর্গঠিত নতুন কমিটিতে রয়েছেন- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সহকারী কমিশনার (ভূমি), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তার অবর্তমানে- উপপরিদর্শক (এসআই)/সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) পদমর্যাদার নিচে নয়), বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়), প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়), স্পেশাল ব্রাঞ্চের প্রতিনিধি (কর্মকর্তার নিচে নয়), হেডম্যান (পার্বত্য জেলার ক্ষেত্রে) অথবা কারবারি (পার্বত্য জেলার ক্ষেত্রে), সংশ্লিষ্ট পৌরসভার মেয়র অথবা প্যানেল মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অথবা প্যানেল চেয়ারম্যান এবং উপজেলা নির্বাচন অফিসার (সংশ্লিষ্ট উপজেলা)। বিশেষ কমিটির আহ্বায়ক হচ্ছেন ইউএনও আর সদস্য সচিব উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।
২০১৯ সালে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে চট্টগ্রামের ৩২টি উপজেলাকে ‘বিশেষ এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ কমিটি গঠন করে ইসি।
সংস্থার নির্বাচন সহায়তা শাখার সিনিয়র সচিব মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী সম্প্রতি কমিটি পুনর্গঠনের চিঠি সংশ্লিষ্টদের পাঠিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, বিশেষ এলাকার জন্য বিশেষ কমিটির আহ্বায়ক প্রতিমাসে ন্যূনতম একটি সভা অনুষ্ঠান করবেন। প্রয়োজনে একাধিক সভা করে প্রাপ্ত আবেদনসমূহ নিষ্পত্তি করবেন। বিশেষ কমিটির আহ্বায়ক ওই কার্য দ্রুত সম্পন্নের প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট উপজেলার এক বা একাধিক কর্মকর্তাকে কমিটিতে কো-অপ্ট করতে পারবেন।
এছাড়াও, সংশ্লিষ্ট এলাকার স্বনামধন্য শিক্ষক, বিশিষ্ট নাগরিক, সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্যগণকেও কমিটিতে কো-অপ্ট করতে পারবেন।
কমিটির কার্য-পরিধি:
(১) কমিটি প্রতিমাসে ন্যূনতম একটি সভা অনুষ্ঠান করবে, প্রয়োজনে একাধিক সভা অনুষ্ঠান করবে। কমিটি বিশেষ তথ্য ফরমে প্রদত্ত সকল জাতীয় পরিচয়পত্রের এনআইডি নম্বরসমূহ অনলাইনে এ যাচাই করবে। যাচাইকালে নিম্নলিখিত বিষয়াদি পর্যবেক্ষণ করতে হবে- (ক) ভাই/বোনের ডাটাবেজে পিতা/মাতার নামের সাথে আবেদনকারীর উল্লিখিত পিতা/মাতার নামের মিল থাকতে হবে। (খ) চাচা/ফুফুর ডাটাবেজে তাদের পিতার নাম ও ঠিকানার সাথে আবেদনকারীর বিশেষ তথ্য ফরমে প্রদত্ত পিতামহের নাম ও ঠিকানার মিল থাকতে হবে। (গ) প্রয়োজনে নিকট আত্মীয়ের মোবাইল নম্বরে কথা বলে তাদের পরিচিতি/তথ্য সম্পর্কিত বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।
(২) ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ অনুযায়ী ভোটার হতে ইচ্ছুক উপযুক্ত ব্যক্তিকে বাংলাদেশের কোথাও ‘সচরাচর নিবাসী’ হতে হবে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জারিকৃত পরিপত্রে উল্লিখিত জেলাসমূহের যদি কেউ সচরাচর নিবাসের দাবি করে তবে সেই দাবির যথার্থতা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসন্ধান করতে হবে। শুধুমাত্র একটি নিবাসের ঠিকানাই এর জন্য যথেষ্ট হবে না। নিবাসের প্রমাণস্বরূপ তাকে এ সংক্রান্ত প্রণীত অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ ফরম অনুযায়ী চাহিত সব তথ্য প্রদান করতে হবে।
(৩) যদি সংশ্লিষ্ট জেলাসমূহে এই সমস্ত ব্যক্তি নিজস্ব সম্পত্তির সূত্রে তালিকাভুক্তির দাবি করে, তবে তাদের সম্পত্তির মালিকানা ও এ সংক্রান্ত অন্যান্য দালিলাদি তথ্যসংগ্রহকারীকে প্রদান করতে হবে।
(৪) যারা বাংলাদেশি কোনো নাগরিকের সাথে বৈবাহিক সূত্রে ভোটার তালিকাভুক্তির দাবি করবেন, তাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত নাগরিক সনদপত্রসহ সংশ্লিষ্ট দলিলাদি তথ্য সংগ্রহকারীকে প্রদান করতে হবে এবং অন্য কোনো সূত্রে কেউ ভোটার হওয়ার উপযুক্ত দাবি করলে, তাদেরকে এ সম্পর্কিত প্রমাণাদি/তথ্য প্রদান করতে হবে।
(৫) তথ্য সংগ্রহকারীগণ প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফরম-২’র সাথে এ কার্যক্রমের আওতায় অতিরিক্ত তথ্য ফরম পূরণের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় দালিলিক কাগজপত্রসহ প্রতিটি কেস উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কাছে জমা দেবেন। উপজেলা নির্বাচন নির্বাচন অফিসার আবেদন/কেসসমূহের সারসংক্ষেপ/চেকলিস্ট প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদের নিকট প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পাঠাবেন এবং সংশ্লিষ্ট পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদের প্রাথমিক যাচাই-বাছাই প্রতিবেদনসহ সকল কাগজপত্রাদি উপজেলা বিশেষ কমিটির নিকট উপস্থাপন করবেন।
(৬) উপজেলা বিশেষ কমিটি প্রতিটি ফরম পুঙ্খনাপুঙ্খভাবে যাচাই বাছাইপূর্বক সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন। গ্রহণযোগ্য কেসগুলোয় উপজেলা বিশেষ কমিটির ইতিবাচক সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসারকে অবহিত করার পর তিনি ওই সমস্ত নাগরিকদের ভোটার তালিকাভুক্ত করার জন্য দিনক্ষণ নির্ধারণপূর্বক নিবন্ধন কেন্দ্রে তাদের আগমনের জন্য নোটিশ জারি করবেন।
যাদের কেস গ্রহণ করা হবে না- কি কারণে তা গ্রহণ করা হলো না, প্রতিটি কেসের জন্য নোটশিটে কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষরে তা লিপিবদ্ধ করতে হবে। এছাড়া, উপজেলা নির্বাচন অফিসার প্রতিটি বিশেষ তথ্য ফরমের (ফরম-২ এর অতিরিক্ত তথ্য) ১৬ নম্বর ক্রমিকে বিশেষ কমিটির সিদ্ধান্ত লিপিবদ্ধ করবেন (যেমন: আবেদনকারীর নাম............... নিবন্ধন ফরম নং............এর আবেদনটি গ্রহণ/বাতিল করা হলো)।
(৭) ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য যারা ২০০৭-২০০৮ সালে ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছেন কিংবা যাদের অনুকূলে বাংলাদেশের পাসপোর্ট জারি করা হয়েছে তাদের জন্য ৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত বিধান প্রযোজ্য হবে না।
(৮) কোনো কেস/আবেদনের বিষয়ে স্পষ্টীকরণের প্রয়োজন হলে কমিটির একজন সদস্যকে দিয়ে সরেজমিন তদন্ত করতে এবং প্রয়োজন হলে কমিটির সভায় শুনানি গ্রহণ করতে পারবেন।
(৯) উপজেলা বিশেষ কমিটি যাদের আবেদন বাতিল করবে, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি খসড়া তালিকা প্রকাশের পর উক্ত বিষয়ে বিশেষ কমিটির সিদ্ধান্তের অনুলিপি নিয়ে সংশোধনকারী কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে পারবেন।
(১০) রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে যদি কেউ সহযোগিতা অথবা মিথ্যা তথ্য প্রদান অথবা মিথ্যা/জাল কাগজপত্র সরবরাহ করেন অথবা সংশ্লিষ্ট কারও গাফিলতি পরিলক্ষিত হয় তাদের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০ এবং প্রচলিত অন্যান্য আইন অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে হবে।
এ সংক্রান্ত নির্দেশনার অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, সকল মন্ত্রণালয় বিভাগে সচিব, মহা পুলিশ পরিদর্শক সংশ্লিষ্টদেরও পাঠিয়েছে ইসি।
বর্তমানে ইসির সার্ভারে ১১ কোটি ৯০ লাখ ৬১ হাজার ১৫৮ জন নাগরিকের তথ্য রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ১০ লাখ রোহিঙ্গার তথ্য। কেউ নতুন ভোটার হতে আবেদন করলে এই তথ্য থেকে যাচাই করে নেওয়া হয়।