আজ শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

যা রেখে যাচ্ছেন নূরুল হুদা কমিশন

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ০৯:৩৮:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার একেবারে দ্বারপ্রান্তে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়াদ শেষ হচ্ছে তাদের। ফলে অনেক কাজ যেমন সম্পন্ন করেছেন, উদ্যোগ নিয়েছেন নতুন কিছুর, তেমনি সম্পন্নও করতে পারেননি তার অনেকটাই।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নূরুল হুদা কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ যে কাজগুলো হাতে নিয়েছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বাংলায় রুপান্তর ও সংশোধন। সে কাজটি সম্পন্ন না হলেও করেছেন পৃথক রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন। এছাড়াও বেশ কিছু আইন সংস্কারে হাত দিয়েও শেষ করতে পারেননি।

ইভিএম

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সব নির্বাচনে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়নও করেন তারা। বর্তমানে ১ লাখ ৫৪ হাজার ভোটিং মেশিন ইসির হাতে আছে, যা দিয়ে ১৫০ আসনে সংসদ নির্বাচন করা সম্ভব।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা এ নিয়ে বলেছেন, ইভিএম একটি ভাল বিষয়। আপনারা এটাকে পরিত্যাগ করবেন না।

পরবর্তী কমিশনকে এ নিয়ে পুরো সক্ষমতা অর্জনের জন্যও মতামত দিয়েছেন তিনি।

আগের রাতে ভোট

ভোটের আগের রাতে সিল মারা ঠেকাতে বর্তমান কমিশনই প্রথমবারের মতো সিদ্ধান্ত নেয় সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পাঠানোর। এক্ষেত্রে বিষয়টিতে বেশ সাফল্য পায় তারা। সেটির ধারাবাহিকতা রাখার সুপারিশও রয়েছে বর্তমান কমিশনের।

জেলা পরিষদসহ বেশ কিছু নির্বাচন

সময় স্বল্পতার কারণে বর্তমান কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন, সারাদেশের জেলা পরিষদ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের বেশকিছু সাধারণ নির্বাচন করতে পারছে না। নতুন কমিশনকে এসে সেই দায়িত্বই আগেভাগে সম্পন্ন করতে হবে।

এনআইডি হস্তান্তর

বর্তমান কমিশনের সবচেয়ে ব্যর্থতা দেখা গেছে এই বিষয় নিয়ে। সরকার নির্বাচন কমিশন থেকে এনআইডি বিভাগকে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোনো রকম আলোচনা ছাড়াই। সিইমি নূরুল হুদা বলেছিলেন, এটা নিতে হলে আলোচনা করতে হবে। কিন্তু সে উদ্যোগ আর কোনো পক্ষই নেয়নি। উপরন্তু সর্বশেষ চিঠিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের কাছে লোকবলসহ পুরো প্রক্রিয়া হস্তান্তর করতে বলেছে। তবে বর্তমানে প্রক্রিয়াটি নিয়ে কোনো আলোচনা না থাকলে নতুন কমিশনকে এসে হয়তো সে প্রক্রিয়ায় হাত দিতে হবে।

সব ভোটারকে স্মার্টকার্ড

বিগত কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশন যাওয়ার আগে স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছিল। কিন্তু এখনো সাড়ে সাত কোটি ভোটারকেই উন্নতমানের কার্ডটি দিতে পারেনি ইসি, যেখানে ভোটার রয়েছে ১১ কোটি ১৭ লাখ। নতুন কমিশনকে এসে সেই চ্যালেঞ্জটিও নিতে হবে।

প্রবাসেই ভোটার কার্যক্রম

নূরুল হুদা কমিশনের অনেক প্রশংসিত উদ্যোগ হচ্ছে প্রবাসেই ভোটার কার্যক্রম উদ্বোধন। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্যসহ পাঁচটি দেশে এই কার্যক্রম উদ্বোধন করেছিলেন সিইসি। কথা ছিল প্রবাসীরা অনলাইনে আবেদন করবেন। তার ভিত্তিতে দেশে তদন্তের পর কমিশন কার্ড প্রিন্ট করে সংশ্লিষ্ট দেশে দূতাবাসের মাধ্যমে বিতরণ করবেন। কিন্তু করোনার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। নতুন কমিশনকে এ কাজটিও এগিয়ে নিতে হবে।

কেএম নূরুল হুদা পাঁচ বছরে কর্মযজ্ঞ নিয়ে বলেছেন, আমরা অনেক কাজ সময়ের অভাবে করতে পারিনি। কোভিড আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে। নতুন কমিশন নিশ্চয় সে কাজগুলো এগিয়ে নেবেন।

বর্তমান কমিশন ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হলে নতুন কমিশন আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের জন্য আইনও প্রণয়ন হয়েছে। রাষ্ট্রপতিও নতুন ইসি নিয়োগের প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব হচ্ছে চারটি। ভোটার তালিকা প্রণয়ন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সংসদীয় আসনের সীমানা পুননির্ধারণ। এনআইডির কাজ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে পালন করে ইসি।