আজ মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মিরসরাইয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়, নেতাকর্মীদের বাড়ীতে ভাংচুর, আগুন

নিজস্ব প্রতিবেদক, মিরসরাই : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ৬ অগাস্ট ২০২৪ ০৭:৩৩:০০ অপরাহ্ন | উত্তর চট্টগ্রাম

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এক দফা দাবীর মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করার পর সারাদেশের মতো মিরসরাইয়েও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, আওয়ামী লীগের কার্যালয়, সংসদ সদস্যের বাড়ী সহ দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়ীতে হামলা এবং অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার বিকেল থেকে মঙ্গলবার (৬ আগষ্ট) বিকেল পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এ হামলার ঘটনা ঘটে। 

হামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, মিরসরাই পৌরসভা ও বারইয়ারহাট পৌরসভায় কার্যালয়, পৌর মেয়রের গাড়িতে ভাংচুর, আগুন দেওয়া হয়। এসময় মিরসরাই পৌরকার্যালয়ে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালও ভাংচুর করা হয়। মিরসরাই থানা ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ বারইয়ারহাট জোনাল অফিসে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। ভাংচুর করা হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সাবেকমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও বর্তমান সংসদ সদস্য মাহবুব উর রহমান রুহেলের বাড়ি। এসময় বাড়িতে কেউ উপস্থিত ছিলেন না। করেরহাট বাজারে অবস্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়নের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নওরিন এন্টার প্রাইজ কার্যালয় ভাংচুর করা হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী স্বেচ্চাসেবক লীগের সভাপতি এরাদুল হক নিজামী ভুট্টোর বাড়ী ভাংচুর করে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জাতীয় শ্রমীক লীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন দিদারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আরশীর নগর ফিউচার পার্ক ভাংচুর করা হয়েছে। উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম মাস্টারের বাড়ি ও তাঁর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ফারদীন মডেল পাম্পে ভাংচুর করা হয়েছে। ভাংচুর করা হয়েছে মিরসরাই প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাংবাদিক নিজাম উদ্দিন ও তাঁর ছোট ভাই আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম উদ্দিনের বাড়িও। ভাংচুর করা হয় উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অভি রায়ের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সমমনা ডেকোরেটার্সের গোডাউন ভাংচুর করা হয়েছে ও ডিস ব্যবসায়ী অজিতের মোটরসাইকের চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। 

এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপর হামলা এবং বাড়িঘরে ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে মিরসরাই থানা ও জোরারগঞ্জ থানা, উপজেলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অধ্যুষিত বিভিন্ন গ্রাম, মন্দির পাহারায় দিতে দেখা গেছে বিএনপি, জামায়াত সহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের নেতাকর্মীদের। 

মিরসরাই উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ সরকার বলেন, মিরসরাইতে কোন হিন্দু বাড়ি কিংবা মন্দিরে ভাংচুর করা হয়নি। শুধু উপজেলার মধ্যম তালবাড়িয়া গ্রামে পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অভি রায়ের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সমমনা ডেকোরেটার্সের গোডাউনে ভাংচুর করা হয়েছে। ডিস ব্যবসায়ী অজিতের মোটর সাইকেল নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।

উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্চাসেবক লীগের সভাপতি এরাদুল হক নিজামী ভুট্টো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর থেকে মিরসরাই উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয় সহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতাকর্মীদের বাড়ি ঘরে হামলা, ভাংচুর অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। আমার বাড়িও ভেঙ্গেচুরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাশাসক শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে চুরি করে দেশ ছেড়েছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ঘটে যাওয়া সকল অনিয়ম দূর্নীতির বিচার করা হবে। আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলার ঘটনায় বিএনপি, জামায়াত সহ ছাত্রআন্দোলনের কেউ জড়িত নয়। সকল নেতাকর্মীদের হামলা, ভাংচুর থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় কাজ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন বলেন, উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ সহ অন্যান্য সংস্থাগুলো কাজ করছে। পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক রয়েছে।