ভারতের নয়াদিল্লিতে প্রায় ৯০টি দেশের কূটনীতিকদের বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আগামী দ্বাদশ নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
এ সময় তিনি বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই, বরং পুরোপুরি উৎসবের মেজাজে একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে।
শনিবার (২৫ নভেম্বর) দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে মোমেন এসব কথা জানান।
বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বাংলাদেশ সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে বদ্ধপরিকর। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন থাকবে। বিশ্বের আরও বহু গণতান্ত্রিক দেশের মতোই বাংলাদেশেও নির্বাচন কোনও উৎসবের চেয়ে কম নয়। বাংলাদেশের মানুষও ওই উৎসবে শামিল হওয়ার জন্য এবং নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে পছন্দের জনপ্রতিনিধিকে বেছে নেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছেন।
এই ৯০টি দেশ হলো এমন দেশ- যাদের বাংলাদেশে সরাসরি কোনও দূতাবাস বা মিশন নেই, কিন্তু দিল্লিতে নিযুক্ত তাদের রাষ্ট্রদূতরাই বাংলাদেশ সংক্রান্ত ঘটনাবলি দেখার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। কূটনৈতিক পরিভাষায় এই রাষ্ট্রদূতদেরই বলে ‘কনকারেন্টলি অ্যাক্রিডিটেড’– সোজা কথায় দিল্লিতে নিযুক্ত হলেও বাংলাদেশও তাদের কাজের পরিধিতেই পড়ে। আর এরকমই প্রায় ৯০টি দেশের প্রতিনিধিরা হাজির ছিলেন দিল্লিতে বাংলাদেশ হাই কমিশন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত সেই ব্রিফিংয়ে।
বাংলাদেশে বিগত দেড় দশক ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে আর্থসামাজিক উন্নয়নের কর্মকাণ্ড চলছে এবং গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের পরম্পরা বহমান আছে, তাতে দেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের বা বিচলিত হওয়ার কোনও কারণ নেই– মূলত এই বক্তব্যই ব্রিফিংয়ে তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, কোনো দেশই অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ পছন্দ করে না। বাংলাদেশও চায় না, কেউ অযথা অনধিকার চর্চা করুক। বাংলাদেশ সরকার সে দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও সংবিধান রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ।
মাসুদ বিন মোমেন জানান, আমাদের নির্বাচন নিয়ে যে পারসেপশন (ভাবনা বা দৃষ্টিভঙ্গী) সেটাই আমরা এই দেশগুলোর কাছে তুলে ধরেছি। পরিস্থিতি নিজের চোখে দেখে যেতেও আহ্বান জানিয়েছি। আমাদের নির্বাচন যে পুরোপুরি শান্তিতে ও আনন্দমুখর পরিবেশেই হবে সেটাও তাদের আশ্বস্ত করেছি।
বিরোধী দলের ভূমিকা নিয়ে জানতে চাইলে মোমেন বলেন, একেক দলের একেক ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। তবে আপাতত চলছে মনোনয়নপত্র পেশ ও বাছাইপ্রক্রিয়া। জাতীয় পার্টি রয়েছে। নতুন কিছু দলও নির্বাচনে উৎসাহী।
তিনি বলেন, তবে নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, বিএনপি রাজি হলে তফসিল নতুনভাবে ঘোষণা করা যাবে। কমিশনের মতে, ভোটে জনগণের অংশগ্রহণই বড় কথা। জনগণ উৎসাহী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে কি না, সেটাই সার্থকতার পরিচয়।
মানবাধিকার আন্দোলনকর্মীসহ ব্যাপকহারে গ্রেপ্তার করা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে মোমেন দেশের রাজনৈতিক পটভূমি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবরের আগের দিন পর্যন্ত সবকিছু ঠিক ছিল। কিন্তু ওই দিন সব অন্য রকম হয়ে যায়। বিরোধীদের ডাকা আন্দোলন হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। সেই থেকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা চলেছে। দুষ্কৃতকারীদের ধরা হচ্ছে।
রাষ্ট্রদূতদের জন্য এই বিশেষ ব্রিফিংয়ের ঠিক আগে শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) বিকালে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ভারতে তার কাউন্টারপার্ট বিনয় মোহন কোয়াটরার সঙ্গে ‘ফরেন অফিস কনসালটেশনে’ মিলিত হন।
দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউসে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ইস্যুর মধ্যে বছর তিনেক বাদে নির্ধারিত গঙ্গা চুক্তির নবায়ন এবং তিস্তার অমীমাংসিত ইস্যু নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
এ ছাড়া ভারত থেকে পেঁয়াজ বা চালের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ যেন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন রাখা হয়, ঢাকার তরফে সেই অনুরোধ দিল্লির কাছে আবারও জানানো হয়েছে।
ভারতের কাছে বাংলাদেশের বড় চাহিদার কথা উল্লেখ করে মোমেন বলেন, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ার পর ভারতের পূর্ণ সহযোগিতা। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ সেই মর্যাদায় পাকাপাকিভাবে উন্নীত হবে। তখন বাণিজ্যিক অনেক বিধি আরোপিত হবে। শুল্কসংক্রান্ত অনেক সুবিধা বিলুপ্ত হবে। তখন ভারতের সমর্থন ও সহযোগিতা বাংলাদেশের কাছে জরুরি।
এই প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা প্রাপ্তি যাতে টেকসই হয়, সে জন্য ভারতের সহযোগিতা কাম্য। সে জন্য বাংলাদেশ চায় ‘কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট’-এর (সেপা) দ্রুত বাস্তবায়ন।