আজ রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

নিত্যপণ্যের দামে অস্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : শনিবার ১১ মার্চ ২০২৩ ১১:০১:০০ অপরাহ্ন | অর্থনীতি ও বাণিজ্য

ঢাকা: ডলার সংকট, দাম বেশি বলে ব্যবসায়ীরা নানা সুবিধা নেওয়ার পরও আমদানি কম দেখিয়ে দেশের বাজারে দফায় দফায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। আজ এক পণ্যের দাম বাড়লে কাল বাড়ছে আরেক পণ্যের দাম।

 

গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডাল, ছোলা ও ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। সবজির দামও ঊর্ধ্বমুখী। নিত্যপণ্যের এই উচ্চমূল্য বেকায়দায় পড়েছে নিন্ম ও মধ্য আয়ের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন রোজার এক সপ্তাহ আগে আর পণ্যের দাম বাড়ে না। এক দেড় মাস আগেই পণ্যের দাম বেড়ে যায়। রোজা এলে সেই দামটা স্থিতিশীল হয়ে যায়। পরে সেটা আর কমে না। এদিকে রমজানে ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, পেঁয়াজ, খেজুর, ডালসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যের চাহিদা দ্বিগুণ হয়ে যায়। এ সুযোগে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থির করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। মূলত আমদানি কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে নিত্যপণ্যের। এবার ডলার সংকটের কারণে আমদানি নির্ভর তেল, চিনি ও ছোলাসহ কিছু পণ্যের এলসি খোলা কমে গেছে। তবে বাজারে দেশি পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় রোজায় এর সংকট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। ফলে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, খেজুর ও ছোলা। এই পণ্যগুলো নিয়ে শুরু হয়েছে কারসাজি।

 

জানা গেছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধসহ ডলার সংকটের এই সময়েও সরকারি সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রয়োজনীয় পণ্যের ‘আমদানি স্বল্পতা’ দেখিয়েছে দেশের বড় কোম্পানিগুলো। সেই তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট ও মাঝারি মূলধনের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য আমদানি করতে পারছে না। কারণ এসব প্রতিষ্ঠান ঋণপত্র (এলসি) খুলতে চাহিদামতো ডলার পায়নি। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভোগ্যপণ্যের শীর্ষ কোম্পানিগুলো এবার বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে। বিশ্ববাজারে কমলেও ইতোমধ্যে অভ্যন্তরীণ বাজারে চিনির দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ইচ্ছেমতো। রমজান মাস সামনে রেখে অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ানোর অপকৌশল নির্ধারণে ব্যস্ত অসাধু ব্যবসায়ীরা।

ফলে রমজানে আমদানি করা ভোগ্যপণ্যের দাম গতবারের চেয়ে ৩০ শতাংশ বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ট্যারিফ কমিশন। অন্যদিকে, এলসি স্বাভাবিক না হলে রমজান মাসে আদা-রসুনের বাজার আরও অস্থির হওয়ার আশঙ্কা করছেন শ্যামবাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আসন্ন রমজানে ভোগ্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার থেকে অতিরিক্ত মুনাফা করা হতে পারে। ইতোমধ্যে ছোলা, চিনির দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় সেই সন্দেহ আরও জোরদার হয়েছে।

শনিবার (১১ মার্চ) রাজধানীর সুত্রাপুর, রায়সাহেব বাজার, নয়াবাজার, দয়াগঞ্জ বাজার, ধূপখোলা মাঠ, বাজার, শ্যামবাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, স্থানভেদে ও আকারভেদে বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকায়। মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০-৫০ টাকা, চালকুমড়া পিস ৫০-৬০ টাকা। লাউ আকারভেদে ৬০-৭০ টাকা। লম্বা ও গোল বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৫০ টাকায়। শিম ৫০-৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৮০-১০০ টাকা, পটল ৮০, করলা ৭০-৮০ টাকা ও প্রতি কেজি আলু ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা কেজি, চিচিঙ্গা ৫০-৬০ টাকা, ঝিঙ্গা ৭০-৮০ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা, কচুর লতি ৬০-৭০, ধুন্দুল ৫০-৭০ টাকা ও গাজর ৪০-৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচের দাম প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। এছাড়া প্রায় অপরিবর্তিত আছে অন্যসব সবজির দাম। যদিও সবজির দাম ওঠা-নামার মধ্যেই থাকে।

এদিকে মুদিপণ্যের মধ্যে খোলা সয়াবিন তেল ১৮৫ টাকা লিটার, যা এক সপ্তাহ আগে ছিলো ১৮০ টাকা লিটার। পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪৪ টাকা লিটার আগেছিলো ১৪০ টাকা। চিনি ১১৫-১২০ টাকা। খোলা আটা ৬০ টাকা ও প্যাকেট আটা ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে দুই কেজির প্যাকেট আটা বিক্রি হচ্ছে ১২৫-১৩০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ছোলার দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০-১০৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ৯০-৯৫ টাকা। প্রতি কেজি ১০ টাকা বেড়ে বুটের ডাল ৯৫-১০০ এবং মাসকলাইয়ের ডাল ১৫৫-১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া প্রতি কেজি জিরা ৪০০ টাকা থেকে বেড়ে ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ (নতুন) ৪০ টাকা, আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, দেশি রসুন ১০০ টাকা, আমদানিকৃত রসুন ১৩০-১৫০ টাকা, আদা (দেশি) ১৩০-১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি ডজনে ডিমের দাম ১৩০-১৩৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫০ টাকা। গত সপ্তাহেও ১৩৫-১৪০ টাকা ছিল ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন। এছাড়া হাঁসের ডিম ২১০-২২০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ১৮০-১৯০ টাকা ডজনে বিক্রি হচ্ছে।