আজ বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

চন্দ্রঘোনার লিচুবাগানে একটি সেতু পাল্টে দেবে অনেক কিছু

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ১৩ মে ২০২২ ০৩:২৩:০০ অপরাহ্ন | উত্তর চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের একমাত্র ফেরি পারাপার ব্যবস্থা চালু রয়েছে রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান দিয়ে। কর্ণফুলী নদীতে চালু থাকা এই ফেরি সার্ভিসের উত্তর পাশে চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়ার লিচুবাগান আর দক্ষিণে রাঙামাটির রাইখালী ইউনিয়ন। এই দুই জেলার মাঝে সেতুবন্ধন রচনা করেছে এই ফেরি সার্ভিস। নদীর দুই পাড় দুই জেলায় অবস্থিত হলেও তিন পার্বত্য জেলার বাসিন্দারা এই সড়ক বেশি ব্যবহার করেন। কাপ্তাই ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বাসিন্দারাও এখান দিয়ে যাতায়াত করেন।

কিন্তু সামান্য বৃষ্টি হলেই ফেরির পল্টুন ডুবে গিয়ে বন্ধ থাকে পারাপার। এছাড়া একটি ফেরি দিয়ে যাতায়াতে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষায় থাকে যানবাহন। এতে প্রতিদিন ভোগান্তিতে পড়তে হয় চলাচলকারীদের। পাশাপাশি দুর্ঘটনা তো আছেই। তাই এই স্থানে স্থায়ী সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। সরকারের অনেক দায়িত্বশীল ৩১ বছর ধরে স্থায়ী সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে এসেছেন। কিন্তু এত বছরেও তা আলোর মুখ দেখেনি তা। তাদের প্রশ্ন, দুর্ভোগের ফেরি পারাপার আর কত দিন? তাদের দাবি, এখানে সেতু হোক। সেতু হলে তিন পার্বত্য জেলাসহ রাঙ্গুনিয়ার যাতায়াত ব্যবস্থা পাল্টে যাবে। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেরও উন্নতি হবে।

 

জানা যায়, ১৯৮৯ সালে কর্ণফুলী নদী পারাপারের জন্য ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়। বর্তমানে রাঙামাটি সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের অধীনে ফেরিটি পরিচালিত হচ্ছে। ফেরিতে ৫ থেকে ৮টি ট্রাক বা বাস এবং ১৫ থেকে ২০টি ছোট যানবাহন উঠতে পারে। একবার পারাপারে সময় লাগে আধ ঘণ্টা। সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা কিংবা প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ১০টা পর্যন্ত এই সার্ভিস চালু থাকে।

 

ফেরিতে ওঠার জন্য নদীর দুই পাড়ে চন্দ্রঘোনা ও বাঙ্গালহালিয়া সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন থাকে। আর ফেরি বিকল হলে কিংবা পল্টুন ডুবে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে থাকে যানজট। অথচ সেতু থাকলে পার হতে সময় লাগত মাত্র ৩০ সেকেন্ড। তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের সাথে সড়ক যোগাযোগের জন্য কাপ্তাই ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে প্রবাহিত কর্ণফুলী নদীর উপরে থাকা এই ফেরি প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। এছাড়া কঙবাজার ও টেকনাফের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও কর্ণফুলীর এই স্থানটি গুরুত্বপূর্ণ। সারা পথ নিরাপদে আসতে পারলেও এখানে এসে থমকে যেতে হয়। প্রতিদিন এই ফেরি দিয়ে ৫ শতাধিক ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করে। এছাড়া নৌকা ও সাম্পানযোগে যাতায়াত করে অসংখ্য মানুষ। ফেরি দিয়ে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের যানবাহনও চলাচল করে। সেতু না থাকায় সবাই কষ্ট পাচ্ছে।

 

রাইখালীতে অবস্থিত রাঙামাটি জেলার একমাত্র পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলতাফ হোসেন বলেন, গবেষণা কেন্দ্রের প্রয়োজনে এই ফেরি দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। অনেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এই গবেষণা কেন্দ্রে আসেন। কিন্তু ফেরির কারণে সহজে যাতায়াত করা যাচ্ছে না। চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাটে সেতু নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।

 

পদুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মহির উদ্দিন রানা বলেন, নদীর দক্ষিণ পাড়ের গুরুতর অসুস্থ কোনো রোগীকে দ্রুত চট্টগ্রাম শহরে চিকিৎসার জন্য আনা সম্ভব হয় না।

১৯৯১ সালে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী অলি আহমদ লিচুবাগানে কর্ণফুলী নদীর উপর সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। ঘোষণার পর ৩১ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু সেতু নির্মিত হয়নি।

 

রাইখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা ইউসুফ তালুকদার জানান, এই ফেরি দিয়ে প্রায় প্রতি সপ্তাহে পার্বত্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর, তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদারসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যাতায়াত করেন।

 

বাস চালক মোফাজ্জল হোসেন জানান, বান্দরবান থেকে রাঙামাটি পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সড়কের পুরোটাই ভালো। এই পথে বাস চালানো আরামদায়ক হলেও ফেরি পার হতে গিয়ে থমকে যেতে হয়। এখানে সেতু থাকলে মানুষের অনেক উপকার হতো।

 

লিচুবাগান এলাকার বাসিন্দা মুহাম্মদ মনসুর আলম জানান, প্রায় সময় ফেরিপাড়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে মানুষ। রমজানে ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে ট্রাকের ধাক্কায় একই পরিবারের দুজন মারা গেছেন।

 

সড়ক ও জনপদ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, কয়েক বছর আগে একনেক সভায় এখানে সেতু নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছিল। কিন্ত কেন এই প্রক্রিয়া থেমে আছে তারা জানেন না। এদিকে প্রতি অর্থবছরে ফেরি থেকে কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয় বলে জানা গেছে।