বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ঠিক আগেই গোলচত্বর। এই চত্বরে দাঁড়ালেই একদিকে দেখা মিলবে সমুদ্রের বিশাল নীল জলরাশি। যেখানে ঢেউয়ের সঙ্গে খেলা করছে বন্দর ঘিরে আগমন করা ছোট-বড় জাহাজ। গোলচত্বর মোড় থেকে একটি সড়ক গেছে টানেলের দিকে। আরেকটি সড়ক অর্থাৎ আউটার রিং রোড গেছে সমুদ্রের কোল ঘেঁষে। মোড় থেকে সমুদ্রের বিপরীত পাশে তাকালেই দেখা মিলবে একটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের। যেখান থেকে এটির যাত্রা শুরু হয়েছে। এটি ওপর উঠলে সরাসরি ১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নামা যাবে চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজারে। এটির নামকরণ করা হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) অনলাইনে যুক্ত হয়ে চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহৎ এই প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর যানচলাচল শুরু হলে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে এই পথ পাড়ি দেওয়া যাবে মাত্র ২০ মিনিটে। যেখানে বর্তমানে নিচ দিয়ে এই সড়ক পাড়ি দিতে লাগছে এক থেকে দেড় ঘণ্টা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম গিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা প্রান্তে নামামাত্রই যাত্রীদের স্বাগত জানাবে বঙ্গবন্ধু টানেল। অর্থাৎ নগরের লালখান বাজার থেকে যাত্রা শুরু করা কোনো ব্যক্তি আধঘণ্টার ব্যবধানে কর্ণফুলী নদীসহ পাড়ি দিয়ে আনোয়ারা দিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চলে যেতে পারবেন।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সংস্থাটি সূত্রে জানা গেছে, ৫৪ ফুট প্রশস্ত এবং চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে থাকবে ১৪টি র্যাম্প। এর মধ্যে জিইসি মোড়ে একটি, টাইগারপাসে দুটি, আগ্রাবাদে চারটি, ফকিরহাটে একটি, নিমতলায় দুটি, সিইপিজেডে দুটি ও কেইপিজেড এলাকায় থাকবে দুটি র্যাম্প। তবে এসব র্যাম্পের নির্মাণ কাজ এখনই শুরু হয়নি। আপাতত মূল ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করা হচ্ছে। এরপর শুরু হবে র্যাম্পসহ অন্যান্য নির্মাণ কাজ।
এদিকে, মঙ্গলবার প্রকল্পটি উদ্বোধন হয়ে গেলেও আপাতত এই উড়ালসড়ক দিয়ে যানচলাচল শুরু হচ্ছে না। কবে নাগাদ শুরু হতে পারে সেটিও নির্দিষ্ট করা হয়নি। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, যানচলাচল শুরু হতে অন্তত আরও এক মাস লাগতে পারে।
উদ্বোধনের আগের দিন (সোমবার) এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন অংশে ঘুরে দেখা গেছে, মূল ফ্লাইওভারের লালখান বাজার থেকে সল্টঘোলা ক্রসিং এলাকায় নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে লালখান বাজার থেকে দেওয়ানহাট এলাকায় পিলার নির্মাণের কাজ চলছে। আর দেওয়ানহাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত গার্ডার বসানোর কাজ এবং বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টঘোলা ক্রসিং পর্যন্ত চলছে বক্স গার্ডারের কাজ চলছে। এছাড়া সল্টঘোলা থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বাকি অংশ যানচলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েছে।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন হলেও যানচলাচল শুরু হতে আরও মাসখানেক সময় লাগবে। কারণ বেশ কিছু কাজ এখনো বাকি আছে। তবে এটি চালু হলে ১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া যাবে মাত্র ২০ মিনিটে। এতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রুটের বিমান যাত্রীরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি চট্টগ্রাম শহরের যানজটও কমবে। যানজটের কারণে জ্বালানি তেলের অপচয়, মানুষের কর্মঘণ্টার অপচয় ও ফ্লাইট মিস হওয়াসহ প্রতি বছর হয় যে ক্ষতি হয়, টাকার অঙ্কে তা নিরূপণ করা যাবে না।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখন কাজ জোরেশোরে চলছে। মঙ্গলবার উদ্বোধন হলেও যানচলাচল কবে শুরু হতে পারে তা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলতে পারবেন।
সিডিএ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ২০১৭ সালে প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। অনুমোদনের প্রায় দুই বছর পর ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২০ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।