চট্টগ্রামসহ সারা দেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ কমেছে। কক্সবাজারের মহেশখালীতে অবস্থিত ভাসমান দুটি এলএনজি টার্মিনাল থেকে দৈনিক ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে কম সরবরাহ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। আগে এ দুটি টার্মিনাল থেকে জাতীয় গ্রিডে ৮০০ থেকে ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো। বর্তমানে মিলছে ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।
এলএনজির আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেটে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কমেছে আমদানিও। তবে আগামী ১ নভেম্বর থেকে এ সংকট আরও বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মহেশখালী থেকে এলএনজি সরবরাহকারী দুটি টার্মিনালের মধ্যে একটিকে মেরামতের জন্য সিঙ্গাপুরের ড্রাই ডকে পাঠানোর কথা রয়েছে।
রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) ব্যবস্থাপক (এলএনজি ডিভিশন-কক্সবাজার) মোহাম্মদ ইমতিয়াজ কামাল চৌধুরী বলেন, ‘মহেশখালীর দুটি ভাসমান টার্মিনাল থেকে এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে একটি টার্মিনাল থেকে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট করে মোট এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের সক্ষমতা আছে। এর মধ্যে প্রয়োজন অনুসারে দৈনিক ৭০০ থেকে ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হতো।’
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী একটি টার্মিনাল পাঁচ বছর পর পর মেরামতের প্রয়োজন হয়। সে অনুযায়ী একটি টার্মিনাল ১ নভেম্বর থেকে মেরামতের জন্য সিঙ্গাপুরের ডকে পাঠানোর কথা রয়েছে। সে সময় একটি থেকে এলএনজি সরবরাহ করা হবে।’
এদিকে, আরপিজিসিএলের এক কর্মকর্তা জানান, আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেটে দাম বেড়েছে এলএনজির। প্রতি মাসে যে পরিমাণ এলএনজির প্রয়োজন তা এবার আমদানি করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে দৈনিক ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের স্থলে জাতীয় গ্রিডে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কমিয়ে ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এ সংকট পর্যাপ্ত এলএনজি আমদানির পাশাপাশি মেরামতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হওয়া টার্মিনাল না ফেরা পর্যন্ত চলমান থাকবে। সবমিলিয়ে আরও দুই মাস এ সংকট থাকতে পারে বলে মনে করছেন এ কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২১ অক্টোবর (শনিবার) থেকে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়। যার প্রভাব পড়েছে আবাসিকে রান্না থেকে শুরু করে শিল্প-কারখানা এবং সিএনজি স্টেশনগুলোতে। দিনের বেশিরভাগ সময় আবাসিকে গ্যাস থাকছে না। থাকলেও চুলা জ্বলছে মিট মিট করে। সিএনজি স্টেশনগুলোর সামনেও প্রচুর যানবাহনের চাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘টার্মিনালে উৎপাদন কমায় ও আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেটে দাম বেড়ে সরবরাহ কমেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ বছর পর পর গ্যাস সরবরাহকারী টার্মিনালগুলো মেরামতের কথা। সে অনুযায়ী একটি টার্মিনালকে গত এপ্রিল থেকে মেরামতের জন্য ডকে পাঠানোর কথা। এটি মেরামতের জন্য পাঠানো হলে সংকট বাড়বে। এ কারণে এ টার্মিনালকে এতদিন ডকে পাঠানো হয়নি। আমরা চেষ্টা করছি এটিকে এখন না পাঠিয়ে আরও কিছুদিন পর পাঠানো যায় কিনা।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. শফিউল আজম খান বলেন, ‘চট্টগ্রাম এলএনজি গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। এতদিন চট্টগ্রামে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেত। বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এ কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।’
চট্টগ্রাম কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মোট গ্রাহক ও সংযোগ আছে ছয় লাখ এক হাজার ৯১৪টি। এর মধ্যে গৃহস্থালি সংযোগ পাঁচ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬১টি। চট্টগ্রামে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩২৫ থেকে ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট।