আজ রবিবার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ই পৌষ ১৪৩১

‘জনশক্তি’র আত্মপ্রকাশ: নতুন ধারার রাজনীতি কি সম্ভব?

বিশেষ প্রতিনিধি: | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:৩০:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

সরকারি চাকরিতে কোটা বিলোপের দাবিতে শুরু হওয়া জুলাই মাসের আন্দোলনের মাধ্যমে পরিচিতি পাওয়া একদল শিক্ষার্থী এবার রাজনৈতিক দল গঠনের পথে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সরকার পতনের দাবিতেও সোচ্চার হয়েছিলেন তারা এবং একপর্যায়ে সফলতাও পান। এরপর দেশ পুনর্গঠনের প্রসঙ্গ এলে, অন্তর্বর্তী অরাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জাতীয় রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে আগ্রহী।

সূত্রের খবর অনুযায়ী, আগামী দুই মাসের মধ্যেই জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। এই সংগঠনটি বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হবে বলে জানা গেছে। দলের সম্ভাব্য নাম ‘জনশক্তি’ হতে পারে, তবে সকলের মতামতের ভিত্তিতে এই নামটি পরিবর্তনও করা হতে পারে। ছাত্রনেতারা জানিয়েছেন, জনগণের আস্থা অর্জন করাই হবে তাদের নতুন দলের প্রধান লক্ষ্য।

নতুন এই রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের রূপরেখা কেমন হবে, সে বিষয়ে ছাত্রনেতারা জানান, প্রচলিত রাজনীতির ধারার বিপরীতে তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে চলবেন। জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, নতুন এই দল নতুন আঙ্গিকে গঠিত হবে। এখানে কোনো ‘সাংবিধানিক ফ্যাসিবাদী’ কাঠামো থাকবে না। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, জনআকাঙ্ক্ষার বিপরীতে অবস্থান নেওয়া অথবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা—এমন কার্যক্রম থেকে তারা নিজেদের দূরে রাখবেন।

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সারজিস আলম বলেন, নতুন রাজনৈতিক দলের কাছে তাদের প্রত্যাশা, তারা শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে কাজের মাধ্যমে নিজেদের প্রমাণ করবে। এই দলকে জনগণের প্রত্যাশা বুঝতে হবে। বিগত সময়ে দলগুলো যেভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখত এবং জনগণের প্রত্যাশার তোয়াক্কা করত না, এই দলটি তেমন হবে না বলেই তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, দেশের মানুষ যদি মনে করে তাদের রাজনৈতিক দল গঠন করা উচিত, তাহলে তারা অবশ্যই বিষয়টি বিবেচনা করবেন।

নতুন এই দলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হবেন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।

নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী জানান, আগামী রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরাও যুক্ত হবেন এবং তারা সর্বোচ্চ পর্যায়েও প্রতিনিধিত্ব করবেন। তিনি আরও বলেন, আগামী নির্বাচনে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এবং তাদের উদ্দেশ্য ক্ষমতা দখল নয়, বরং দেশের কল্যাণ সাধন। যদি গণহত্যার বিচারের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে যেকোনো মূল্যে খুনিদের বিচার করাই হবে তাদের প্রধান লক্ষ্য।

দলের নাম এবং অর্থের উৎস সম্পর্কে নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, তারা তাদের আগের আন্দোলনগুলোর মতোই জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেবেন। জনগণের কাছে নামের প্রস্তাব চাওয়া হবে এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ‘জনশক্তি’ নামটি তাদের বিবেচনায় আছে বলে তিনি জানান। অর্থের উৎস সম্পর্কে তিনি বলেন, তারা ক্রাউডফান্ডিংয়ের (সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ) ওপর নির্ভর করবেন। এছাড়া, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বিভিন্ন ফোরাম নিয়ে তারা বর্তমানে বিস্তারিত গবেষণা করছেন।

নির্বাচনে ফল যাই হোক, নিজেদের বিপ্লবী চেতনা ধরে রাখার অঙ্গীকার করেছেন ছাত্রনেতারা। তারা আরও জানান, প্রয়োজনে তারা রাজনৈতিক জোটেও যোগ দিতে পারেন। নাসিরুদ্দিন জানান, জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া কয়েকটি দলের সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে।