চট্টগ্রাম আদালতে পুলিশের হেফাজতে থাকা এক আসামির পালানোর ঘটনায় সাতজন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আসামির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক উপ-পরিদর্শক (এসআই), দুই সহকারী ট্রাফিক উপ-পরিদর্শক (এটিএসআই) ও চার কনস্টেবলকে প্রাথমিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) বিকেলে এঘটনা ঘটলেও বিষয়টি জানা যায় রোববার ৮ জানুয়ারির দিবাগত রাতে। এঘটনার পরদিন শুক্রবার ৬ জানুয়ারি নগরের কোতোয়ালি থানায় সদর কোর্ট পরিদর্শক জাকের হোসাইন মাহমুদ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। দণ্ডবিধি আইনের ২২৪ ধারায় দায়ের হওয়া ওই মামলায় শামসুল হক ওরফে বাচ্চুকে (৬০) একমাত্র আসামি করা হয়। ঘটনার পাঁচদিন পেরিয়ে গেলে এখনও ওই আসামির হদিস পায়নি পুলিশ।
জানা গেছে, আসামি শামসুলের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার কালীরবাজার ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। তার বাবার নাম মৃত রহমত আলী। তার বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় মাদক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘হ্যান্ডকাফসহ মাদক মামলার এক আসামি পালানোর ঘটনায় নগরের কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা পুলিশ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। প্রাথমিকভাবে সাতজনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া পলাতক ওই আসামি গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা পুলিশসহ একাধিক টিম অভিযান পরিচালনা করছে।’
আদালত সূত্র ও মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, বুধবার ৪ জানুয়ারি চন্দনাইশ পৌরসভা উত্তর গাছবাড়িয়া এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিশেষ চেকপোস্ট বসায় পুলিশ। ওইদিন দুপুরে একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যাত্রীবাহী বাস থেকে এক হাজার পিস ইয়াবাসহ শামসুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করে পরদিন বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়। আদালতে তাকে মাদক মামলার জিআরও শাখায় বুঝিয়ে দেয় চন্দনাইশ থানা পুলিশ। এরপর তাকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন। আদালতের আদেশের পর শামসুলকে কোর্ট হাজতে রাখা হয়।
জেলা সদর কোর্ট পরিদর্শক বাদী হয়ে দায়ের হওয়া মামলায় উল্লেখ করা হয়- আসামিকে হাজতে রাখার পর ওইদিন সন্ধ্যায় তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য হ্যান্ডকাফ লাগানো হয়। এরপর তাকে হাজতখানার সামনে সেরেস্তা টেবিলের পেছনে একটি বেঞ্চে বসতে দেওয়া হয়। এরপর কর্তব্যরত পুলিশ আসামিদের কারাগারে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ ফাঁকে শামসুল পালিয়ে যায়। যদিও আদালতের একটি সূত্র জানিয়েছে আসামিকে পুলিশ সদস্যরা টাকার বিনিময়ে খাবার খাওয়ানোর এক ফাঁকে পালিয়েছে। ঘটনার পরপরই ওইদিন রাতে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) শাখা এবং জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম আদালতে অতীতেও এরকম আসামি পলায়নের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ বারবার এ বিষয়ে বেখেয়াল থাকে। সামান্য টাকার লোভে আসামিদের অনৈতিক সুবিধা দিতে গিয়ে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে। তাছাড়া সম্প্রতি ঢাকার আদালত থেকেও জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। আসামিদের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে আরও সতর্ক হতে হবে। প্রয়োজনে কোর্ট পুলিশ ইউনিটে জনবল বাড়াতে হবে।’