আজ শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

অধ্যক্ষ আবুল হাসান আলীর প্রতি শিক্ষক-কর্মচারীদের অনাস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার : | প্রকাশের সময় : রবিবার ২৬ জুন ২০২২ ০৫:৪৪:০০ অপরাহ্ন | কক্সবাজার প্রতিদিন

উখিয়া উপজেলার রাজাপালং এমদাদুল উলুম ফাজিল মাদরাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে সাবেক অধ্যক্ষ আবুল হাসান আলীর নিয়োগকে জালিয়াতপূর্ণ ও অবৈধ দাবি করেছেন শিক্ষক-কর্মচারীদের একাংশ। শিক্ষাবোর্ডের জারিকৃত আদেশে অনাস্থ প্রকাশ করে সেটি বাতিল চেয়েছেন তারা। 

রবিবার (২৬ জুন) দুপুরে কক্সবাজার শহরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আবুল হাসান আলীর শেষ কর্মদিবস ছিল গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। নিয়ম অনুযায়ী অবসরে গমনের সময় প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় হিসাব-নিকাশ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির দলিল দস্তাবেজ, শিক্ষক কর্মচারীদের গচ্ছিত ডকুমেন্ট পরবর্তী

অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) এর নিকট হস্তান্তর করতে হবে। কিন্তু তিনি তা করেন নি। বরং  বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে নিজের দায়িত্বকালীন অনিয়ম, দুর্নীতি ঢাকতে নতুন কৌশল করেছেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের প্রেরিত স্মারক ব্যবহার করে প্রস্তাবিত সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এর স্থলে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ‘মাদরাসা কমিটির সভাপতি’ হিসাবে নিজের নাম প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। এটি জঘন্য জালিয়াতি বলে দাবি করেছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।

ওই আদেশ বাতিল চেয়ে গত ১৯ মে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ২৪ মে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবদুল হকসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের একটি অংশ।

অভিযোগ করা হয়, ১৯৯০ সালে পিতার স্থলাভিষিক্ত হন অধ্যক্ষ এ.কে.এম আবুল হাসান আলী। দায়িত্বকালে তিনি দূর্দান্ত প্রতাপে সরকারি নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাগুলি প্রদর্শন করেছেন। কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীদের ভয়-ভীতি প্রদর্শণের মাধ্যমে মাদ্রাসার স্থাবর-অস্থাবর, প্রাতিষ্ঠানিক যাবতীয় আয় নিয়ম বর্হিভূতভাবে একাই ভোগ করে গেছেন। ভয়ে তা প্রকাশে কেউ সাহস করেনি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রতিষ্ঠানটির সহকারি অধ্যাপক মুহিব উল্লাহ বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি সভাপতি হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইটিকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা হয়। কিন্তু একই আবেদনের স্মারকমূলে সাবেক অধ্যক্ষ ও জামায়াত নেতা আবুল হাসান আলীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। যেখানো অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারির আপত্তি রয়েছে। সবাই এই নিয়োগ বাতিল চায়। 

আবুল হাসান আলী অধ্যক্ষ থাকাকালীন ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি করেছেন বলে দাবি তার। সংবাদ সম্মেলনে মাদরাসার ২৭ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে ২৩ জন উপস্থিত ছিলেন।

এরমধ্যে অভিযোগ উপস্থান করে বক্তব্য দেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবদুল হক, সহকারি অধ্যাপক মোহাম্মদ হাশেম, মো. মাহমুদুল হক, সহকারি শিক্ষক মোস্তাক আহমদ। 

তারা জানান, ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত ৬ মাস করে মোট ৮ বার এডহক কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধি করে কর্মজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটান আবুল হাসান আলী। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে ২৫ মার্চের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ গভর্ণিং বডি গঠনের ব্যর্থ হলে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। বিধি মোতাবেক এডহক কমিটি/পূর্ণাঙ্গ গভর্ণিং বডির মেয়াদ শেষ হওয়ার ১ মাসের মধ্যে নতুন কমিটি/গভর্ণিং বডি গঠন করার বিধান রয়েছে। এমতাবস্থায়, এডহক কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) কর্মরত অধ্যক্ষের পরামর্শের ভিত্তিতে গত ২২ফেব্রুয়ারি তফসীল ঘোষণা এবং উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজারকে প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগ দান করেন। প্রিসাইডিং অফিসার দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে ১৩ মার্চ নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার নিমিত্তে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) কে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

তিনি গত ১৬ মার্চ ও ২৩  মার্চ রাফামা ২২/২০ ও রাফামা ২৩/২০২২ স্মারকমূলে সভাপতি মনোনয়নের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বিভীষণ কান্তি দাশ এবং বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসেবে এডভোকেট আবুল আলার নাম প্রস্তাব আকারে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে পত্র প্রেরণ করেন। 

শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, ই আ বির প্রজ্ঞাপন এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো ও এম পি ও নীতিমালা ২০১৮ (২৩ নভেম্বর-২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত) এর ১৭.৪ ধারার বিধানমতে, নিয়মিত কমিটি/এডহক কমিটি/সভাপতির অবর্তমানে অথবা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীর ও ম্যানেজিং কমিটির মধ্যে সৃষ্ট মত পার্থক্যের কারণে বা তাদের মধ্যে সৃষ্ট মামলার কারণে এমপিও উত্তোলনের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরী হলে জেলা সদরে অবস্থিত মাদ্রাসার ক্ষেত্রে জেলা/অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং জেলা সদরের বাইরের মাদ্রাসার ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সভাপতির স্থলে শিক্ষক কর্মচারীদের সরকারি অংশের বেতন বিলে প্রতিস্বাক্ষর করার বিধান রয়েছে।

এমতাবস্থায়, ই আ বির প্রজ্ঞাপন এবং নীতিমালার ১৭.৪ ধারার বিধানমতে অত্র মাদ্রাসার শিক্ষক কর্মচারীদের মে ২০২২ ইং সরকারি অংশের বেতন বিলে প্রতিস্বাক্ষরের জন্য অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন করেন। মতামতের জন্য উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজারকে দায়িত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। নবমনোনীত সভাপতি ও শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করেন একাডেমিক সুপারভাইজার। তাতে সাড়া পাওয়া যায় নি। কিন্তু গত ১৬ জুন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন বিলে প্রতিস্বাক্ষর না করার জন্য অনুরোধ করেন আবুল হাসান আলী এবং তিনি নিজেকে সভাপতি দাবি করেন। বিতর্ক এড়ানোর জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন বিলে প্রতিস্বাক্ষর প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করেন। ফলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে। 

ইতোমধ্যে নির্বাচিত ও মনোনীত গভর্ণিং বডির ১২ সদস্যের মধ্যে ১১ জন সদস্য আবুল হাসান আলীর পক্ষে কোন নোটিশ বা সভা আহ্বান না করার জন্য অনাস্থা প্রকাশ করে অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত)কে আবেদন করেছেন। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাবেক অধ্যক্ষ ও নব মনোনীত সভাপতি আবুল হাসান আলী বলেন, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ম মাফিক তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রস্তাবিত নামের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অন্য কোন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিতে পারেন। তাকে অবৈধ বলার কোন সুযোগ নেই।