আজ শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

‘কেউ গায়ে হাত তোলে, ধমক দেয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : রবিবার ৩১ জুলাই ২০২২ ০৫:৩৯:০০ অপরাহ্ন | চট্টমেট্টো

রেলওয়ে পরিবহন বিভাগের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বিভাগে বৈধ রেল ক্রসিং রয়েছে ১৩৭টি। এর মধ্যে স্পেশাল লেভেল ক্রসিং ১৭টি। এছাড়া ৮টি ‘এ’ শ্রেণির, ৩২টি ‘বি’ শ্রেণির, ৭৩টি ‘সি’ শ্রেণির ও ৭টি ‘ডি’ শ্রেণির ক্রসিং রয়েছে।  

চট্টগ্রামে তিনটি রুটের ১৫০টি রেল ক্রসিং মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। রুটগুলো হচ্ছে: ঢাকা-চট্টগ্রাম লাইনের মীরসরাই পর্যন্ত, চট্টগ্রাম-নাজিরহাট ও চট্টগ্রাম-দোহাজারী। এ তিন রুটের অধিকাংশ ক্রসিংই অবৈধ। হাতেগোনা কয়েকটি ক্রসিংয়ে গেটম্যান থাকলেও অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে কাজে গাফিলতির অভিযোগ।

রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নড়বড়ে ক্রসিং অবকাঠামো ও লোকবলের অভাবে এসব ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। ঢাকা-চট্টগ্রামে গেটকিপারের মঞ্জুরীকৃত পদ ২৪২টি। এর মধ্যে কর্মরত আছেন ১৫৭ জন, বাকি ৮৫টি পদ শূন্য। তবে বিভিন্ন ক্রসিংয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অস্থায়ী গেটম্যান।

জানা যায়, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে বা অনুমোদন না নিয়ে এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও রেললাইনের ওপর রেল ক্রসিং নির্মাণ করে থাকে, যা রেলওয়ের আইনে নিষিদ্ধ।

সম্প্রতি রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বেশ কিছু ট্রেনের গতি বাড়ানো হয়েছে। এতে অরক্ষিত রেল ক্রসিংগুলো  বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এই ক্রসিংগুলোর আগে ট্রেনের গতি কমানো ছাড়া চালকদের উপায় থাকে না। সাবধানতার পরেও যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে।  

মীরসরাই উপজেলা এলাকার ডাবললাইনে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলছে ট্রেন। এখানকার অরক্ষিত ৩০ কিলোমিটার জুড়ে ৭০ থেকে ৮০টি লেভেলক্রসিংই মৃত্যুফাঁদ। ধুমঘাট রেলসেতু থেকে দক্ষিণের বারৈয়াঢালা পর্যন্ত এলাকায় গড়ে উঠেছে অন্তত ৫০টি অবৈধ লেভেল ক্রসিং। চোরাই কাঠ ও পণ্য পরিবহনের স্বার্থে চোরাকারবারীরা এসব ক্রসিং তৈরি করেছে বলে জানা গেছে।  

বৈধ লেভেল ক্রসিংগুলোর মধ্যে বারইয়াহাট, বিএসআরএম গেট, মহামায়া ছাড়া বাকি চারটিতে অনেক সময় গেটম্যান নিয়োজিত থাকে না।  

 

সীতাকুণ্ডের বড় দারোগারহাট থেকে সলিমপুর পর্যন্ত রেলপথে নিয়মিত এক্সপ্রেস ট্রেন, লোকাল ট্রেন ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। উপজেলার মধ্য দিয়ে যাওয়া রেলপথের পূর্ব ও পশ্চিম অংশে রয়েছে অসংখ্য বসতঘর, শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ফলে সাধারণ মানুষসহ অসংখ্য যানবাহন রেললাইনের উভয় পাশে আসা-যাওয়া করতে গিয়ে বহু রেল ক্রসিংয়ের সৃষ্টি হয়েছে।

চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথের ১০টি পয়েন্টে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং রয়েছে। ক্রসিংগুলোর মধ্যে রয়েছে গোমদন্ডী রেলস্টেশনের পরে উপজেলা সড়ক, বেঙ্গুরা রেলস্টেশনের পরে সারোয়াতলী সড়ক, পটিয়া ধলঘাট রেলস্টেশনের পরে ধলঘাট ক্যাম্প ও চরকানাই সড়ক।  

খানমোহনা স্টেশনের আগে পটিয়া-বোয়ালখালী সড়ক, আমির ভাণ্ডার রেলগেট, খরনা রেলস্টেশনের নিকট ইউপি সড়ক, খরনা লালারখীল ও ভায়ারদিঘি সড়ক, কাঞ্চননগর রেলস্টেশনের আগে শাহছুপি সড়ক, খানহাট স্টেশনের পরে ছৈয়দাবাদ সড়ক, হাসিমপুর স্টেশনের পরে বাগিচাহাট সড়ক।হাটহাজারী হতে নাজিরহাট পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার রেলপথে ১৫ থেকে ২০টি বৈধ-অবৈধ লেভেল ক্রসিং। বৈধ ক্রসিংগুলি হলো- হাটহাজারী সদরের হাসপাতাল গেট, মীরের হাট, কাটিরহাট স্টেশন সংলগ্ন ও জাব্বার হাট। হাটহাজারী হতে নাজিরহাট লাইনে কয়েকটি ট্রেন আসা-যাওয়া করে।  

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে চট্টগ্রাম স্টেশনের রেললাইনে ২১টি পয়েন্টে লেভল ক্রসিং থাকলেও সবগুলোতে নেই গেটম্যান। লেভেল ক্রসিংগুলো হলো- বটতলী, দেওয়ানহাট ঝাউতলা বাজার, বিজিএমইএ’র সামনে (জিইসি টু একে খান রুট), ষোলশহর ২ নম্বর গেট, ষোলশহর, হামজারবাগ, আতুরার ডিপু, আমিন জুটমিল, অক্সিজেন, ওয়াপদা গেট, বালুছড়া, নতুনপাড়া, বড়দিঘির পাড়, চৌধুরীহাট, ফতেয়াবাদ, ছড়ারকুল, নন্দীরহাট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এক, দুই এবং তিন নম্বর রুট।  

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ৫১১টি বৈধ ক্রসিংয়ের মধ্যে ২৫৭টিতে গেট ব্যারিয়ার বা লোহার বার রয়েছে। এর মধ্যে ২২৯টিতে গেটম্যান রয়েছে। প্রায় সবগুলোতেই যানবাহন ও মানুষজন নিজ দায়িত্বে রেললাইনের ওপর দিয়ে পার হয়।  

রোববার (৩১ জুলাই) নগরীর ঝাউতলা, কদমতলীসহ বেশ কয়েকটি লেভেল ক্রসিংয়ে সরেজমিন দেখা যায়, ট্রেন আসার কয়েক মিনিট আগে সড়কের দুই পাশ গেট ব্যারিয়ার ফেলে আটকে দেওয়া হয়। তারপরও অধিকাংশ যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে রেললাইনের ওপর দিয়ে পারাপার হচ্ছে। ট্রেন আসার আগ মুহূর্তে লেভেল ক্রসিংয়ে দায়িত্ব পালনকারী গেটম্যান বাঁশি বাজিয়ে ও পতাকা উড়িয়ে সংকেত দিলেও তা মানার গরজ নেই।  

গত চার বছরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় রেললাইনের ওপর অন্তত তিনবার ট্রেনের সঙ্গে যানবাহনের সংঘর্ষ হয়। এসব দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত হন, আহত হন প্রায় অর্ধশত।

কদমতলী রেলগেটে বেশ কয়েকবছর ধরে গেটম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন মো. মোশারফ। তিনি বলেন, ‘ট্রেন আসার আগেই গেট ব্যারিয়ার ফেলে রাস্তার দুইপাশ বন্ধ করে দেই। বাঁশি বাজিয়ে যানবাহন রেললাইনে না উঠতে সতর্ক করি। কিন্তু সবাই নিয়ম মানতে চায় না। মোটরসাইকেল-রিকশা চালকদের অনেকে ধমক দেয়, কেউ গায়ে হাত তোলে। সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য যে বেশি-এটা তারা বুঝে না’।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, লেভেল ক্রসিংয়ে যেসব দুর্ঘটনা ঘটে সেসব ঘটনার তদন্ত হয়। তদন্তে কারও অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেলে বিভাগীয় শাস্তি দেওয়া হয়।

 

 

 



সবচেয়ে জনপ্রিয়