আজ বৃহস্পতিবার ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৫ই পৌষ ১৪৩১

৫৩ বছরেও স্বীকৃতি পায়নি বাঁশখালীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হক

শাহ মুহাম্মদ শফিউল্লাহ, বাঁশখালী: | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:০৬:০০ অপরাহ্ন | দক্ষিণ চট্টগ্রাম
এডভোকেট মুজিবুল হক

জীবন বাজি রেখে দেশকে স্বাধীন করতে সরাসরি সম্মুখযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সূর্যসন্তান এ্যাডভোকেট মুজিবুল হক (৬৯)। স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও বৈষম্যের শিকার হয়ে এই বীর সেনানী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি।

জীবনের মায়া ত্যাগ করে সম্মুখ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হক জীবন সায়াহ্নে এসে এখন স্বীকৃতি চান।

বিগত দীর্ঘ বছরে তাকে মূল্যায়ন করা হয়নি। সরকারি তালিকায় অন্তর্ভুক্তি না হওয়ায় তিনি বঞ্চিত রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে। নিজ গ্রামের মানুষসহ উপজেলার অন্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা মুজিবুল হককে মুক্তিযোদ্ধা বলে ডাকলেও স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসেও কাগজে-কলমে তাঁর স্বীকৃতি মেলেনি। বর্তমানে আইন পেশার সাথে জড়িত আছেন তিনি। তাঁর সহকর্মী যোদ্ধারা সরকারি গেজেটে অন্তর্ভুক্ত আছেন। তিনি কেন গেজেটভুক্ত হতে পারেননি, কেন তিনি বৈষম্যের শিকার হলেন তার কাছে এখনো স্পষ্ট নয়। শেষ বয়সে এসে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি নিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চান এ বীরযোদ্ধা।

মুজিবুল হক চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নের মরহুম ওবাইদুল হকের পুত্র। যথেষ্ট প্রমাণাদি সরকারি দপ্তরে জমা দেওয়া হলেও স্বাধীনতার চার যুগ পেরিয়েও আত্মত্যাগের স্বীকৃতি না মেলায় অনুতপ্ত সহকর্মী অন্য মুক্তিযোদ্ধারাও।

মুজিবুল হক জানান, '১৯৭১ সালে অনুষ্ঠিত মহান মুক্তিযুদ্ধে আমি সরাসরি সশস্ত্র সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। চট্টগ্রাম বিভাগের অধীনস্থ বাঁশখালী থানাধীন পুকুরিয়া ইউনিয়নে কমান্ডার মরহুম শফিকুল ইসলামের অধীনে আমিসহ আমরা সর্বমোট ৩৩ জন যুবক সরাসরি সশস্ত্র সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি এবং বাঁশখালী থানায় আমরাই সর্বপ্রথম পুকুরিয়া ইউনিয়ন হানাদার মুক্ত করি। তৎপর আনোয়ারা থানা এবং সাতকানিয়া থানায়ও আমরা সরাসরি সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। আমি বাঁশখালী থানার অন্তর্গত পুকুরিয়া ইউনিয়নের কুন্ডুরাম পাহাড় এবং চা বাগান এলাকায় ৩০৩ রাইফেল পরিচালনায় সফলভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর সরাসরি কমান্ডার মরহুম শ্রদ্ধেয় শফিকুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে ১ নম্বর সেক্টরে অধীনে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। আমাদের অধিনায়ক কমান্ডার ছিলেন মেজর রফিকুল ইসলাম। আমার সহযোদ্ধা সবাই গেজেটভুক্ত হয়েছেন।'

তিনি আরো বলেন, 'যুদ্ধের সমাপ্তিতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরবর্তীতে মহান মুক্তিযুদ্ধের অধিনায়ক মোহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী এর স্বাক্ষরক্রমে দেশরক্ষা বিভাগ হতে আমার বরাবরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের স্বীকৃতি স্বরূপ স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদ ইস্যু করেন।'

মুজিবুল হক আক্ষেপ করে বলেন, 'দেশ মাতৃকার টানে জীবন বাজি রেখে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশকে শত্রুমুক্ত করা সত্ত্বেও এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের যাবতীয় প্রমাণাদি সরকারি দপ্তরে জমা দেওয়া সত্ত্বেও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিটুকু বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অদ্যাবধি আমাকে প্রদান করা হয়নি।'

ইতিপূর্বে দুইবার মন্ত্রণালয় বরাবরে আবেদন জমা দেওয়া সত্ত্বেও মন্ত্রণালয় হতে অদৃশ্য কারণে হ্যাঁ বা না কোন জবাব অদ্যাবধি তাঁকে প্রদান করা হয়নি। জীবনের ক্রান্তিলগ্নে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মত্যাগের স্বীকৃতিটুকু বাংলাদেশ সরকার হতে পাওয়া এবং তা দেখার অপেক্ষায় মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এক অকুতোভয় যোদ্ধার শেষ আকুতি।

তিনি আরও বলেন, 'মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পাওয়ার বিষয়টি বড় করে দেখছি না, জীবনের শেষ প্রান্তে হলেও একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি, এটা দেখে যেতে চাই।'