"জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক'২৩' বাছাই প্রতিযোগিতায় কক্সবাজার জেলার শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক শিক্ষিকা নির্বাচিত হয়েছেন কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের ফ্লা.লে.কাইমুল হুদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শমসের নেওয়াজ মুক্তা।
গত ৬-ই সেপ্টেম্বর উপজেলা পরিষদ হলরুমে এবং পরবর্তীতে জেলা পর্যায়ে ১৪ই সেপ্টেম্বর জেলা পরিষদ হলরুমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাঠদান, উদ্ভাবনী কৌশল, পাঠ প্রস্তুতি, মূল্যায়ন, সহ:শিক্ষাক্রমিক পারদর্শিতা, শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পর্যালোচনা পূর্বক যাচাই-বাছাই করে জেলা পর্যায়েও তিনি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিকা নির্বাচিত হন।
শমসের নেওয়াজ মুক্তা ২০০৭ সালে চাকুরিতে যোগদান করেন। এর আগে ২০১৪ এবং ২০১৯ সালেও জেলা পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকার খেতাব অর্জন করেছিলেন। অধিদপ্তর কর্তৃক সিলেক্টেড হয়ে " শ্রীলংকা সফর"ও সম্পন্ন করে এসেছেন ২০১৬ সালে। শমসের নেওয়াজ মুক্তা শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বরাবরই অবদান রেখে চলেছেন নিজ কর্মক্ষেত্রে, উপজেলা এবং জেলায়। তিনি ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ'০৯ এ আন্তঃপিটিআই সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় কক্সবাজার জেলা হতে নজরুল সঙ্গীত ও লোকনৃত্যেও প্রথম স্থান অর্জন করে জাতীয় পুরষ্কার পেয়েছেন। এছাড়াও দ্বীপ উপজেলায় শিক্ষা ও চাকুরিতে অবদান রাখার জন্য পেয়েছেন "জয়িতা'১৩ সম্মাননা। দ্বীপের সকল সীমাবদ্ধতাকে জয় করে নিজ উদ্যোগে করোনাকালীন প্রাথমিক শিক্ষায় অবদান রাখার জন্য আইসিটি ডিভিশনের এটুআই কর্তৃক নির্বাচিত হয়েছেন কক্সবাজার জেলার প্রথম আইসিটি অ্যামবাসেডর(প্রাথমিক,২৯শে নভেম্বর'২০) এছাড়াও শিক্ষাদানে এবং ঝরে পড়া রোধকল্পে তিনি নতুন এক ধারা অব্যাহত রাখার প্রয়াসে নিত্য-নতুন উদ্ভাবনী নিয়ে কাজ করে এসেছেন এবং তারই ধারাবাহিকতায় পেয়েছেন "সেরা উদ্ভাবক" স্বীকৃতি (১ মে ২৩)। অংশ নিয়েছেন বিভাগীয় "ইনোভেশন শোকেসিং'২৩" এ। পেয়েছেন ব্লেনডেড শিক্ষায় ডিজিটাল একসেস ও শিক্ষকের সক্ষমতা শীর্ষক সম্মেলনে বিভাগীয় শিক্ষক সম্মাননা।
দ্বীপের সকল প্রতিকূলতাকে জয় করে শিক্ষকতা পেশাকে ধারন করে তিনি এগিয়ে যেতে চেষ্টা করে চলেছেন অবিরত। অডিশন দিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন বাংলাদেশ কভিড-১৯ স্কুল সেক্টর প্রকল্প ও ইউনিসেফ বাংলাদেশ কর্তৃক যৌথভাবে ডিজিটাল কন্টেন্ট উন্নয়ন ও টেলিভিশন পাঠদানে। ধারাবাহিক ওয়ার্কশপে মেধার স্বাক্ষর রেখে নির্বাচিত হয়েছেন স্ক্রিপ্ট রাইটিং ও সংসদ টেলিভিশনে পাঠদানের জন্য। তাঁর উপজেলায় তিনি প্রশিক্ষণ পরিচালনাতেও একজন মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে রেখে চলেছেন অগ্রণী ভূমিকা। "দ্বীপের শিক্ষা ও শিশুর মানসিক বিকাশ" নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর লেখা বই ও গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ, ছড়া ও কবিতার যৌথ কাব্যগ্রন্থ।
জানা যায়, মুক্তা শৈশব থেকেই সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে ছড়িয়েছেন তাঁর দ্যুতি। পেয়েছেন "শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী'৯৬" পুরষ্কার এবং "শ্রেষ্ঠ গার্লস গাইড"০২ পুরষ্কার। দ্বীপ উপজেলার সাংস্কৃতিক আবহে পরিবর্তনের ব্রতকে সামনে নিয়ে তিনি বর্তমানেও কুতুবদিয়া শিল্পকলা একাডেমীর প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। দীর্ঘ সময় ধরে করে চলেছেন বিভিন্ন প্রোগ্রাম পরিচালনা ও উপস্থাপনা। তাঁর শিক্ষার্থীরাও উপজেলা, জেলা এবং বিভাগে রেখে চলেছে কৃতিত্বের স্বাক্ষর।
মুক্তা কুতুবদিয়ার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুতুবদিয়া মডেল হাই স্কুল এন্ড কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো: আক্কাস উদ্দিন ও মরহুমা তাহমিনা খানম চৌধুরীর প্রথমা কন্যা এবং কুতুবদিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষক মো. শওকতুল ইসলামের সহধর্মিণী।
শমসের নেওয়াজ মুক্তা বলেন, এই প্রাপ্তি আমার জন্য অনেক সম্মানের। ৩য় বারের মত নিজ জেলায় শ্রেষ্ঠ হওয়া আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। আমি চাই শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমার কাজগুলো জাতীয় অঙ্গনে স্বীকৃতি পাক। তাই এই স্বপ্ন বুকে নিয়ে পথ চলা। আমি আপনাদের দোয়া প্রত্যাশী।
ফ্ল. লে. কাইমুল হুদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তারিকুল ইসলাম বলেন, শমসের নেওয়াজ মুক্তা জেলার শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিকা হওয়ায় আমরা সকলেই আনন্দিত। তিনি একজন পরিশ্রমী শিক্ষিকা তার একক প্রচেষ্টায় আমাদের বিদ্যালয় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণে উপজেলা ও জেলায় বিভিন্ন ইভেন্টে জয় লাভ করতেছি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুসলেহ উদ্দিন বলেন, শমসের নেওয়াজ মুক্তা একজন পরিশ্রমী ও মেধাবী শিক্ষক। তিনি কুতুবদিয়া তথা সারা কক্সবাজারের শিক্ষকদের অনন্য উদাহরণ। সে কুতুবদিয়ার বিদ্যালয় কার্যক্রম ছাড়াও উপজেলায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিজেকে সম্পর্কিত রেখে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন। জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হয়েছে জেনে উপজেলা শিক্ষা অফিসের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আশারাখি তিনি বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে ও শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট কুতুবদিয়া শিক্ষা পরিবারকে উপহার দিয়ে দ্বীপবাসীর উদাহরণ হবেন।