দুনিয়ার মোহ ছেড়ে পরকালমুখী হলে সহজেই আল্লাহর নাফরমানি থেকে মুক্ত থাকা যায়,আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী
এশিয়ার অন্যতম বিখ্যাত ও প্রাচীন ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার বার্ষিক মাহ্ফিল ও দস্তারবন্দী সম্মেলন শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) লক্ষাধিক মুসল্লীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী বলেছেন, জীবনের বাঁকে বাঁকে মানুষ ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় নানা রকমের গুনাহে জড়িয়ে পড়ে। এসব গুনাহের মূল কারণ হিসেবে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) একটি বিষয়কে চিহ্নিত করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘দুনিয়ার মোহই সকল গুনাহের মূল’। সুতরাং দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে পরকালমুখী হতে পারলে সহজেই আল্লাহর নাফরমানি থেকে মুক্ত থাকা যায়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নাফরমানি করে না, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা তাকে ভালোবাসেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা আজ দুনিয়ার মোহ-মায়া তথা সম্পদ আয়ত্বের প্রতি এতোটা মশগুল হয়ে পড়েছি যে, আমরা মনে করছি দুনিয়ার যিন্দেগীটাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। অথচ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, অর্থাৎ- ‘তোমাদেরকে যে সব বস্তু দেয়া হয়েছে তা পার্থিব জীবনের ভোগ্যবস্তু ও তার শোভা মাত্র। আর আল্লাহর নিকট যা কিছু আছে তা সর্বশ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী, তবুও কি তোমরা বুঝবে না?’
তিনি বলেন, দুনিয়াতে যতো নাজ ও নিয়ামত রয়েছে, তা আখেরাতের নিয়ামতের কাছে একটা পুরনো কাপড়ের নেকড়ার সমপর্যায়েরও নয়। দুনিয়ার সব কিছুই ক্ষণস্থায়ী, আখেরাতের সকল কিছুই চিরস্থায়ী। অথচ এই দুনিয়ার মোহে পড়ে আমরা নিজেদের স্থায়ী জীবনকে নষ্ট করতেছি।
আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী বলেন, আমরা যা কিছু নিজেদের বলে দাবি করছি, অর্থাৎ- বাড়ি, ঘর, আসবাপত্র ও বেশভূষা, কিছুই আমাদের সাথে যাবে না। সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী। আমাদের সাথে যাবে ইবাদত ও উত্তম আমালসমূহ। আমাদের দান-সদকাসমূহ যাবে। আপনারা দারুল উলূম হাটহাজারি মাদ্রাসার মতো দ্বীনি মাদরাসাসমূহে যে সাহায্য-সহযোগিতা ও দান-সদকা করছেন, এগুলোর সাওয়াব পরকালে যাবে।
তিনি বলেন, দান-সদকা আল্লাহর গোস্বাকে ঠান্ডা করে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়, অপমৃত্যু থেকে হেফাজত করে, বিপদাপদ দূর করে এবং সকল কাজে বরকত আনয়ন করে। তাই বেশি বেশি দান সদকা করবেন। অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করবেন। দ্বীনি মাদ্রাসাসমূহে সাধ্যমতো সাহায্য করবেন। আপনাদের এসব সাহায্য-সহযোগিতায় বহুমুখী কল্যাণ ও বরকত অর্জিত হবে।
আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার দ্বীনি কার্যক্রম পরিচালনা ও উন্নয়নে যারা সাহায্য-সহযোগিতা করছেন, তাদের শোকরিয়া আদায় করেন এবং তাদের সকলের দুনিয়াবী বিপদাপদ দূর ও আখেরাতে উত্তম বিনিময়ে লাভের জন্য দোয়া করেন।
হাটহাজারী মাদ্রাসার বার্ষিক মাহফিল ও দস্তারবন্দী সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন- আল্লামা শেখ আহমদ, আল্লামা মুফতি আহমাদুল্লাহ, আল্লামা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী, আল্লামা সাজেদুর রহমান, আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন, মাওলানা আবদুল বাসেত খান সিরাজী, মাওলানা সালাহ উদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা হাবীবুর রহমান কাসেমী, মাওলানা লোকমান হাকিম, মাওলানা ওসমান ফয়জী, মুফতি কিফায়াতুল্লাহ, মাওলানা আজিজুল হক আল মাদানী, ড. আফম খালিদ হোসেন, মাওলানা মুশতাকুন্নবী কাসেমী, মাওলানা ফুরকানুল্লাহ, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, মাওলানা খোবাইব, মাওলানা কিফায়াতুল্লাহ আজহারী, মাওলানা বদরুল আলম হামিদী প্রমুখ।
উল্লেখ্য, দস্তারবন্দি সম্মেলন উপলক্ষে মাহফিলের আগের দিন বৃহস্পতিবার ও মাহফিলের দিন শুক্রবার বাদ ইশা প্রতিষ্ঠানটির গত শিক্ষাবর্ষে (১৪৪৩-৪৪হি.) দাওরায়ে হাদীস (টাইটেল) উত্তীর্ণ আড়াই হাজার তরুণ আলেমকে প্রতিষ্ঠানের নাম ও মনোগ্রাম খচিত বিশেষ সম্মানসূচক পাগড়ী প্রদান করা হয়।
হাটহাজারী মাদ্রাসার বার্ষিক মাহফিলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাজার হাজার উলামায়ে কিরামসহ লক্ষাধিক মুসল্লী অংশগ্রহণ করেন।
এশিয়ার অন্যতম বিখ্যাত দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার বার্ষিক মাহফিল ও দস্তারবন্দী সম্মেলন উপলক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা ভবন, ছাত্রাবাস ভবন, বিশাল সামিয়ানা এবং চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কসহ সমগ্র হাটহাজারী এলাকা হাজার হাজার উলামা-মাশায়েখ ও তরুণ আলেমের এক মিলন মেলায় পরিণত হয়।