আজ শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

হবে কালুরঘাট সেতু— আশ্বাস নোমানের

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২৫ এপ্রিল ২০২৩ ০৪:৩৬:০০ অপরাহ্ন | চট্টমেট্টো

গত ৩০ বছর ধরে প্রত্যেক সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ আসনের প্রার্থীরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন, উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নোমান আল মাহমুদও সেই পথেই হাঁটলেন। চলমান জাতীয় সংসদের মেয়াদের শেষ ছয় মাসের সদস্য হতে নোমান আল মাহমুদ যে ‘পরিকল্পনা ও ভাবনা’ তুলে ধরেছেন, সেখানে প্রধান প্রতিশ্রুতি হিসেবে আছে কালুরঘাট সেতুর কথা।

 

মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে নোমান আল মাহমুদ নিজের ১৯ দফা ‘পরিকল্পনা ও ভাবনা’ তুলে ধরেন। সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমেদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া এ আসনে আগামী বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

 

মহানগরীর চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, বায়েজিদ বোস্তামির কিছু অংশ এবং বোয়ালখালী উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৮ নির্বাচনী আসনে পড়েছে কর্ণফুলী নদীর ওপর প্রায় ১০০ বছরের পুরনো বিদ্যমান কালুরঘাট সেতুটি। জরাজীর্ণ সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেনের পাশাপাশি যানবাহনও চলে। বোয়ালখালী-পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের একাংশের নগরের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এই সেতু। একমুখী সেতুর একপাশে গাড়ি উঠলে আরেকপাশ বন্ধ থাকে। ফলে দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তি চলছে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে।

 

১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সাতটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কালুরঘাট সেতু নির্মাণের বিষয়টি রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে প্রার্থীদের প্রচারণা ও প্রতিশ্রুতিতে গুরুত্ব পেয়ে আসছে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেতুর দাবি আরও জোরালো হয়। ২০১৪ সালে আন্দোলন শুরু করে ‘বোয়ালখালী-কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ’।

 

চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে তিন দফা নির্বাচিত সাংসদ মঈনউদ্দিন খান বাদল সংসদে জোরালোভাবে সেতুর দাবি তোলেন। এমনকি সেতু নির্মাণ না করলে তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণাও দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি মারা যান।

 

এরপর ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। নির্বাচিত হওয়ার এক বছরের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, রেল মন্ত্রণালয়ে ব্যাপক দৌঁড়ঝাপের পরও এক বছরের মধ্যে কাজ শুরু হয়নি। তিনি গত ৫ ফেব্রুয়ারি মারা গেছেন কালুরঘাট সেতুর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে না পারার আক্ষেপ নিয়েই।

 

বাদল-মোছলেমের উত্তরসূরী হওয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে নোমান আল মাহমুদ তার ‘পরিকল্পনা ও ভাবনায়’ লিখেছেন- শত বছরের কালুরঘাট সেতু যা আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণ ছাড়াও চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের জন্য এক বিড়ম্বনার বিষয় তার শপথ নেয়ার মুহুর্ত থেকে সঠিক পরিকল্পনায় এগিয়ে নেব ইনশল্লাহ। আমি চেষ্টা করবো চট্টগ্রামের স্বপ্নের কালুরঘাট সেতু যেন প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পে অধিভুক্ত হয়ে দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়িত হয়।

 

জাতীয় সংসদের মেয়াদ আছে আর ছয়মাস কিংবা কিছু বেশি। স্বল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে সেতু নির্মাণ উদ্যোগ তরান্বিত করবেন, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে নোমান বলেন, ‘যদি নির্বাচিত হতে পারি চট্টগ্রামের নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করব। আগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় নিয়ে কালুরঘাট সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করার অনুরোধ করব।’

 

সংবাদ সম্মেলনে নোমান আল মাহমুদ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সম্বলিত স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ, চান্দগাঁও বাস টার্মিনালকে স্থানান্তর করে সেখানে শেখ রাসেল স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।

 

 

 

এছাড়া যানজট নিরসনে সড়কের পাশে ফুটপাত দখল করে নির্মিত হাটবাজার এবং অবৈধ অটোরিকশা ও টেম্পু স্ট্যান্ড উচ্ছেদ, ওয়াসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সুপেয় পানির ব্যবস্থা, বোয়ালখালী এলাকায় নদীভাঙন রোধ, পুরনো সড়ক মেরামত করে বিকল্প সড়ক নির্মাণের কথাও তুলে ধরেন।

 

এসময় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোতাহের হোসেন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, নগরের সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন উপস্থিত ছিলেন।

 

২৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নোমান আল মাহমুদ ছাড়াও আরও ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন। তারা হলেন- চেয়ার প্রতীকে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, মোমবাতি প্রতীকে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) কামাল পাশা এবং একতারা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী রমজান আলী।



সবচেয়ে জনপ্রিয়