চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট পোর্ট লিংক রোড সংলগ্ন ডিসি পার্কে ফুল উৎসবের অস্টম দিন পিতামাতাহীন এতিম শিশু ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১ টায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ৬টি বাস যোগে সরকারি শিশু পরিবার, উপলব্ধি এবং সীতাকুণ্ড প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের প্রায় দুই শতাধিক শিশুকে পার্কে নিয়ে আসা হয়।
ফুলের রাজ্যে এস্যে শিশুরা বিমোহিত। তাদের জন্য নাগরদোলা, কায়াকিং ও নৌকায় চড়ে বিশাল দিঘীতে ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থা করেছে জেলা প্রশাসন।
শিশু জান্নাত নাগর দোলায় উঠে বলেন, জেলা প্রশাসক চট্টগ্রামের এমন উদ্যোগে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। এখানে এসে বিভিন্ন ফুল দেখে আমাদের খুব ভাল লেগেছে।
সরকারি শিশু নিবাসের নাঈমা জানান, আমি এখানে এসে অনেকগুলো ফুলের নাম জেনেছি। নৌকায় ঘুরেছি। সবাই মিলে কায়াকিং করেছি। আমরা অভিভূত।
মাঈনুল ইসলাম নামে হুইল চেয়ারে বসা এক কিশোর জানান, প্রতিবন্ধীদের কথা কেউ ভাবেন না, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আমাদের জন্য আজকে যে আয়োজন করেছেন, উনি আমাদের জন্য যে সময় দিয়েছেন তা আমাদের সারাজীবন মনে থাকবে। ভবিষ্যতেও যেন প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ আয়োজন থাকে আমাদের সে প্রত্যাশা থাকবে।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের মধ্যে জান্নাতুল নাইম বলেন, “আমরা নাগরদোলা এবং নৌকায় উঠে খুবই আনন্দিত। আমরা যেখানে থাকি সেখানে এরকম ফুলের বাগান হলে আমাদের খুব ভাল লাগবে।”
চট্টগ্রাম সরকারি শিশু পরিবারের শিক্ষক রুমা পারভীন বলেন, ‘এটি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের এক মহৎ উদ্যোগ। এত বিশাল জায়গা জুড়ে শুধু ফুলের বাগান চট্টগ্রামের অন্য কোথাও নেই। আমরা চাই আমরা যেন মাঝে মাঝে আমাদের এসকল এতিম বাচ্চাদের নিয়ে এখানে আসতে পারি। এরকম একটি পার্ক শিশুদের মানসিক বিকাশে দারুণ অবদান রাখবে।’
সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আশরাফুল আলম বলেন, একসময়ের মাদকের রাজ্য এখন ফুলের রাজ্য হিসেবে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজ এই ফুলের সম্রাজ্যে শিশু কিশোরদের মিলন মেলা একটি উৎসবে রূপ নিয়েছে। জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম মহোদয় সমাজের এসকল সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদেরকে নিয়ে পুরো প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখান এবং তাদের নানা সুবিধা অসুবিধার কথা জানার চেষ্টা করেন।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, পিতৃ-মাতৃহীন এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা আমাদের সমাজেরই অংশ। তাদেরকে সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাদেরকে বাদ দিয়ে কোন ভাবেই সামস্টিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নত বিশ্বে এধরণের শিশুদের সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে সব জায়গায় এ ধরনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কন্যা ড. সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের নিয়ে কাজ করেন। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এসকল শিশুদের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। আমরা অবশ্যই শিশুবান্ধব ও প্রতিবন্ধীবান্ধব পার্ক হিসেবে এই ডিসি পার্ককে গড়ে তুলব এবং তারা যেন প্রতি সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট সময়ে এখানে আসতে পারে এবং খেলাধুলা করতে পারে সে ব্যবস্থা করব।
এসময় ডিসি পার্কে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাকিব হাসান, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর মোঃ তৌহিদুল ইসলাম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হুছাইন মুহাম্মদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও প্রতিক দত্ত।