দেশের সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করতে নানামুখী কাজ করছে সরকার। অদূর ভবিষ্যতে আকাশপথে কক্সবাজার নামা যাবে সমুদ্র ছুঁয়ে। স্টেডিয়ামে বসে দেখা যাবে সমুদ্রসৈকত। যাওয়া যাবে রেলপথেও।
আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেন চলাচল শুরু করতে চায় সরকার। ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের নির্মাণকাজ প্রায় ৬০ শতাংশ শেষ। বাকি কাজ আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যে শেষ করে চেষ্টা চলছে ডিসেম্বরের মধ্যে ট্রেন চলাচল শুরু করার।
এই রুটে ১৫০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক লোকোমোটিভ ও যাত্রীবাহী কোচ। এসব কোচ আনা হচ্ছে আমেরিকা ও কোরিয়া থেকে। ট্রেন চলাচল শুরু হলে মাত্র সাড়ে ৪ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়া সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
এই রুটের নির্মাণকাজ শেষ হলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার রেললাইন হবে ৪৭০ কিলোমিটার। নতুন লোকোমোটিভের সক্ষমতা ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার হলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের লাইনে সর্বোচ্চ ১৩০ বা ১৪০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারবে। সেই হিসেবে বিরতিসহ ঢাকা থেকে কক্সবাজার পৌঁছাতে সাড়ে চার ঘণ্টা বা তার একটু বেশি সময় লাগবে।
আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেন চলাচল শুরু করা সম্ভব হবে বলে কাছে আশা প্রকাশ করেছেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারকে পরিপূর্ণ পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের নির্মাণকাজ শুরু করে। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ১২৮ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণকাজ প্রায় ৬০ শতাংশ শেষ।
দেশীয় প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন ও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এবং চীনের চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) দুটি লটে এ প্রকল্পের কাজ করছে।
প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারসহ তিনটি অত্যাধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণ করা হবে। রেলস্টেশনসহ লাইন স্থাপন, স্টেশন ভবন, সিগন্যাল ব্যবস্থা, লেভেলক্রসিং ও প্রয়োজনীয় স্থাপনার কাজ আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যে কার্যক্রম চলমান।
এ রুটে চলাচল করার জন্য আমেরিকা ও কোরিয়া থেকে যে অত্যাধুনিক লোকোমোটিভ এবং যাত্রীবাহী কোচ আনা হবে তা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৫০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারবে। তবে এই গতিতে চলাচল করা সম্ভব হবে না। এ রুটে কোচগুলো সর্বোচ্চ ১৩০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে যেসব লোকোমোটিভ কোচ রয়েছে সেগুলোর ঘণ্টায় ১৩০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার গতিতে চলাচলর সক্ষমতা রয়েছে। ঢাকা-কক্সবাজার রুটের জন্য আমেরিকা ও কোরিয়া থেকে যে অত্যাধুনিক লোকোমোটিভ কোচ আনা হবে, তা হবে দেশের সর্বোচ্চ গতিসম্পন্ন কোচ।
ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেন যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, করোনার কারণে কাজে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। প্রায় সবগুলো প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছে। আমরা আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই ঢাকা-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ শুরু করতে চাই। এ লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা বলেন, ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচলের জন্য এখন লাইনের কাজ চলছে। এরই মধ্যে ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেন চলাচল শুরু করতে চাই।
জানা যায়, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ৯৯ দশমিক ৩ কিলোমিটার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ দশমিক ৯৬ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। অর্থাৎ প্রকল্পের আওতায় মোট ১২৭ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইনকে ডুয়েলগেজ ট্রাক নির্মাণ করা হবে, যা পরে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করবে। এছাড়া রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সুবিধা আরও বাড়বে। সবগুলো কাজ বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৭৬ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা।
২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারের ঝিলংজা চৌধুরীপাড়ায় দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুমধুম সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
২০১৮ সালে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা হয় ১ হাজার ৩৯১ একর। প্রকল্পের অধীনে কক্সবাজারে আইকনিক স্টেশনসহ ৯টি স্টেশনের অবকাঠামো নির্মাণসহ ৩৯টি ব্রিজ, ১৪৫টি কালভার্ট, বিভিন্ন শ্রেণির ৯৬টি লেভেল ক্রসিং নির্মিত হবে।