মাছের খাদ্য, পশুর খাদ্য ও বিভিন্ন টয়লেট্রিজ উৎপাদনে ২১ হাজার কোটি টাকার কাঁচামালের প্রয়োজন হয় বাংলাদেশে। সিংহভাগই আমদানি করা হয়। কিন্তু এই কাঁচামালের পুরোটাই বঙ্গোপসাগরের সামুদ্রিক শৈবাল (সিউইড) ব্যবহার করে দেশে উৎপাদন করা সম্ভব। রফতানি করা যাবে বিদেশেও। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব মো. খুরশেদ আলম বলেন, ‘দুই বছর ধরে আমরা নেদারল্যান্ডসের সহায়তায় এই গবেষণা করেছি। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও এ নিয়ে আলোচনা করেছি। এটি বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক। এর মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলের ব্যাপক উন্নতি সম্ভব। বিশেষ করে নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এতে।’
উল্লেখ্য, নেদারল্যান্ডস সরকারের আর্থিক সহায়তায় খুরশেদ আলমের নেতৃত্বে মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকায় সমুদ্রের প্রাণিজ ও উদ্ভিদ সংক্রান্ত সম্পদের উপস্থিতি, সার্বিক অবস্থান, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তথা বাণিজ্যিকীকরণ যাচাইয়ের লক্ষ্যে দুই বছর ধরে গবেষণা পরিচালনা করেছে।
প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায়, বাংলাদেশে ২২০ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ৩৪৭ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪৯৮ প্রজাতির ঝিনুক, ৫২ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ৬ প্রজাতির কাঁকড়া, ৬১ প্রজাতির সি-গ্রাস চিহ্নিত করা হয়েছে। পরে এ সকল প্রজাতির ওপর প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি টেস্ট নেদারল্যান্ডসে সম্পন্ন হয়।
ওই গবেষণায় দেখা যায় বাংলাদেশে প্রাপ্ত নির্দিষ্ট প্রজাতির কিছু সামুদ্রিক শৈবাল পাঁচটি শিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব। এর মধ্যে মাছের খাবার, পশুর খাবার, খাদ্য শিল্প, প্রসাধন সামগ্রী এবং প্রসাধন সামগ্রীর কাঁচামাল তৈরিতে ওই সামুদ্রিক শৈবাল ব্যবহার করা সম্ভব।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সুনীল অর্থনীতিতে আমাদের উজ্জল সম্ভাবনা আছে। আমরা এই সম্ভাবনার কথা সবাইকে জানানোর জন্য এই সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্যগুলো উপস্থাপন করলাম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে পশুখাদ্যের মোট বাজার ১৬ হাজার কোটি টাকার। মাছের খাদ্য ৫ হাজার এবং প্রসাধন সামগ্রীর বাজার হচ্ছে ৭ হাজার কোটি টাকা। এই পরিমাণ পণ্যের উৎপাদন আমাদের দেশেই সম্ভব।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে, আগ্রহী ও যোগ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান বা উদ্যোক্তাকে বাংলাদেশের সামুদ্রিক শৈবালের সম্ভাবনাময় বিবিধ খাতে কার্যকরী বিনিয়োগ বা অংশগ্রহণ করানো।
এ কার্যক্রম সফল করার লক্ষ্যে যোগ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান বা উদ্যোক্তাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট প্রদান করবে বলে তিনি জানান।