সরকারি তথ্যে বিগত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন এবং রাহাজানির সংখ্যা বেড়েছে। পাশাপাশি ইতিবাচক খবর হলো—খাদ্য মজুদ, রপ্তানি এবং রেমিটেন্সের পরিমাণও বেড়েছে।
সোমবার (২২ নভেম্বর) মন্ত্রিসভার বৈঠকে মন্ত্রণালয় ও বিভাগসমূহের ২০২০-২১ অর্থবছরের কার্যাবলি সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী প্রতি অর্থবছরে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সম্পাদিত কার্যাবলি সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদন মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গত অর্থবছরে মোট মামলার সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৬১ হাজার। চলতি অর্থবছর শেষে ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৩৬২টি। প্রায় ৯১ হাজার মামলা কমেছে।
গত অর্থবছরে ডাকাতির মামলা ছিল ৩৩৬টি, এ বছরে ৩২১টি। রাহাজানি ছিল ৯১৯টি, এ বছরে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৪৮টি। অস্ত্র আইনে মামলা ছিল ২ হাজার ১৬৭টি, এ বছরে ১ হাজার ৭৪৭টি। খুনের মামলা ৩ হাজার ৪৮৫টি, এ বছরে ৩ হাজার ৪৫৮টি। ধর্ষণ ৫ হাজার ৮৪২টি, এ বছর বেড়ে ৭ হাজার ২২২টি। নারী নির্যাতন ১২ হাজার ৬৬০টি থেকে চলতি বছরে বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৫৬৭টি।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ৩০ জুন পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির রিপোর্ট আমাদের কাছে আসেনি। এখন ইলেকশন বা তেলে দাম বৃদ্ধির ঘটনায় যেগুলো, সেগুলোও আসেনি।
তিনি বলেন, মামলা প্রায় ৯০ হাজার কমে গেছে। ডিজিটাল কোর্ট হওয়ার ফলে বাসায় থেকে বা অন্য স্থানে থেকে মামলাগুলো হ্যান্ডেল করা গেছে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গত বছর গণহারে খাদ্য বিতরণ করা হয়। আমাদের খাদ্য মজুদের পরিমাণ কমে গিয়েছিল, এটা খুবই কমফোর্টেবল আছে। গত ৩০ জুনে ১৪ লাখ ৩৮ হাজার মেট্রিক টন, গত বছর ওই সময়ে মজুদ ছিল মাত্র ৬ লাখ টন।
২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৫.৪৭ (সাময়িক) এবং বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৯২৭ মার্কিন ডলার নিরূপিত হয়েছে। বর্তমানে ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলার।
রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ৩ লাখ ২৮ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা, রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির হার ২৩.৫৭ শতাংশ। রপ্তানির পরিমাণ ১৫.১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮.৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ১.৯৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২৪.৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২ লাখ ৭১ হাজার ২৫৪ জন বাংলাদেশি কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৭টি একনেক সভায় ১৬৯টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ১ হাজার ৯৪৯টি প্রকল্পে ব্যয় ১ লাখ ৭২ হাজার ৫০ কোটি টাকা, যা বরাদ্দের ৮২.২১ শতাংশ। এডিপিতে ৩৪৫টি প্রকল্প সমাপ্ত হয়।
কৃষি ক্ষেত্রে সার, বিদ্যুৎ, ইক্ষু ইত্যাদি খাতে ৭ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৪.৪৮ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ ছিল, যা বিগত অর্থবছরের তুলনায় ২৯.২৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের ২৬,২৯২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২৫,৫১১.৩৫ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২,১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ৯৯.৭৫ শতাংশ।
পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের মূল সেতুর ৮৭ শতাংশ ভৌত অগ্রগতি হয়েছে। ৩০ জুন বা কাছাকাছি সময়ে যান চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হবে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহুলেন টানেলের ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
দেশে মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১৭.৫৩ কোটি এবং ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১০.৭৫ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে দেশের টেলিডেনসিটি ১০৩.০১ শতাংশ এবং ইন্টারনেট ডেনসিটি ৬৮.৪১ শতাংশ।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ৫৩ হাজার ৩৪০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের বসবাসের জন্য গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট ৫৪,৪৩৪টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
২০২০-২১ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের অর্থ বরাদ্দ ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকায় উন্নীত হয়, যা জাতীয় বাজেটের ১৬.৮৩ শতাংশ এবং জিডিপির ৩.০১ শতাংশ।