চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেছেন, "বর্তমান সরকার সকল ধর্মের কল্যাণে কাজ করে। মুসলিমদের পাশাপাশি এই সরকার হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট, বৌদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্ট, খ্রিস্টান কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছেন। আমরা প্রবারণা পূর্ণিমা, বিজু, ওয়া, বর্ষাবাস বিনাবাধায় করতে পারি। সকলে নিজ নিজ ধর্ম উৎসব মুখর পরিবেশে উদযাপন করতে পারে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের এই অসম্প্রদায়িক দেশ গড়েছেন তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।"
শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) বিকালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় সোনাইছড়ি রাজ বিহার মাঠে বিহারটির নবরূপকার ও অধ্যক্ষ এবং এম. শাহ আলম চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক সুনন্দ স্থবিরের মহাস্থবির বরণোৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, "আমাদের দেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান পাশাপাশি বসবাস করে কিন্তু কোন ঝগড়া নাই। ঝগড়া আছে শুধু মানুষ আর অমানুষের মধ্যে। আমরা রামু ঘটনা দেখেছি। বৌদ্ধ বিহারকে পুড়িয়ে দিতে দেখেছি৷ সেই দুষ্টুদের বিরুদ্ধে আমরা যারা শান্তি-মৈত্রি, সম্প্রতি চাই এরকম সকল ধর্মের মানুষ একতাবদ্ধ হয়েছিলাম বলেই সেই স্থানে দুষ্টু মানুষরা ঠিকতে পারে নাই। ওই সময়ে আমাদের সবচেয়ে বেশি সাহস আর প্রেরণা দিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সশরীরে উপস্থিত হয়ে এই সমস্যা মোকাবেলা করেছেন। তিনি সেখানে নতুন বৌদ্ধ বিহার গড়ে দিয়েছেন। জড়িতদের আইনের আওতায় এনেছেন, শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এভাবেই ভাল মানুষের কাছে দুষ্টু লোকরা ঠিকতে পারে না।"
দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সমাপনী দিনের ২য় পর্বে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার সংঘরাজ ড. জ্ঞানশ্রী মহাথেরো। উদ্বোধক ছিলেন ভিক্ষু মহাসভার উপসংঘরাজ ধর্মপ্রিয় মহাথেরো। প্রধান ধর্মদেশক ছিলেন প্রফেসর ড. জিনবোধি মহাথেরো। বৌদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি রঞ্জন বড়ুয়ার সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন গণশিক্ষা প্রাথমিক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব দিলীপ কুমার বণিক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বজন কুমার তালুকদার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতাউল গনি ওসমানী, আকতার হোসেন খান, পারুয়া ইউপি চেয়ারম্যান একতেহার হোসেন, পৌর কাউন্সিলর আবুল কাশেম, আওয়ামীলীগ নেতা মোহাম্মদ সেলিম, মো. ইলিয়াস তালুকদার, উদযাপন পরিষদের সুমঙ্গল মহাথেরো, মৃণাল কান্তি বড়ুয়া, সুনীল কুমার বড়ুয়া, যীশু বড়ুয়া, বিপ্লব বড়ুয়া, সুকৃতি রঞ্জন বড়ুয়া, কমল বড়ুয়া, নীহার কান্তি বড়ুয়া, লোকানন্দ মহাথেরো, শিক্ষক অসীম বড়ুয়া, সুপংকর বড়ুয়া সাজু, রাজন বড়ুয়া প্রমুখ।
পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিচুক্তির কথা উল্লেখ করে বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, পার্বত্য এলাকার মানুষ ২৪ বছরের মধ্যে মন খুলে বুদ্ধের প্রণাম করতে পারিনি, বুদ্ধ মন্দিরে খাবার নিয়ে যেতে পারিনি, পূর্ণিমা রাতে চাঁদের আলো আমরা দেখিনি। সবসময় মনের মধ্যে ভয়, ভীতি আতংক ছিল। কে কোথায় কোনদিকে চলে যাবে ঠিক ছিল না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুলির বিনিময়ে গুলি নয়, খুনের বিনিময়ে খুন নয়, রক্তের বিনিময়ে রক্ত নয় এই নীতি অবলম্বন করে সুন্দর একটা পরিবেশে, সুন্দর আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করেছেন। একটি গুলিও ছুড়তে হই নাই। যা বিগত কোন সরকার পারেননি। এভাবে করোনা থেকে শুরু করে দেশের সকল সংকট তিনি সফলতার সাথে মোকাবেলা করেছেন। সেজন্য দেশের কল্যাণে শেখ হাসিনার সরকার, বার বার দরকার।"
সুনন্দ মহাস্থবির প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, "স্থবির থেকে মহাস্তবির হলেন আমাদের পূজনীয় ভান্তে। আমরা গর্বিত, খুশি। অনেক ত্যাগ, তিতিক্ষা, ধর্হ্য শ্রমে এবং উনার গুরুদের নির্দেশনা মেনে এই পদে আসীন হতে পেরেছেন। যাত্রা শুরু হল, আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে। আমাদেরকে উনাদের পাশে থাকতে হবে। উনাদের কথা শুনতে হবে, অনুধাবন করতে হবে। তারপরই আমরা ভগবানকে পাবো।"
এদিকে সুনন্দ স্থবিরেরবমহাস্থবির বরণকে ঘিরে উৎসবে রূপ নেয় অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ। হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুষ সমাগম হয়। তাদের দুপুরের খাবার পরিবেশন করা হয়।