সমালোচনায় হতাশ না হয়ে এর ভালো দিক গ্রহণ করতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২৩ জুলাই) জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস উদযাপন এবং বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক-২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে (ভার্চ্যুয়াল) প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন তিনি।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কে কী বললো সেটা শুনে হয়তো আমরা দেখতে পারি আমাদের কোনো ঘাটতি আছে কিনা। সেটুকু আমরা নেব কিন্তু ওই কথায় যেন কেউ বিভ্রান্ত না হন, নিজেরা যেন হতাশ না হন। কেউ হতাশাগ্রস্ত যেন না হয়ে পড়েন আমি সেদিকে সবাইকে সচেতন থাকতে বলবো। হতাশ হওয়ার মতো কিছু নেই। যখন যে অবস্থা হবে, সে অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েই আমাদের চলতে হবে। তারপরও আমাদের যতটুকু নিজেদের ব্যবস্থা আছে সেটা নিয়েই আমরা চলবো। ’
তিনি বলেন, ‘আমি জানি, এ ক্ষেত্রে আমাদের হয়তো পত্র-পত্রিকা নানা কথা লিখবে, টক শোতে অনেক কথা বলবে। বিরোধী দলরা কথা বলবে। বিরোধী দলরা বলবেই, বলাই তাদের কর্তব্য; তারা বলে যাক। ’
‘আমাদের আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে যে আমরা সঠিক পথে আছি কি না, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছি কি না, সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি কি না এবং দেশের সাধারণ মানুষ গ্রামের তৃণমূল মানুষটা সেবা পাচ্ছে কি না। আমরা যদি সেভাবে চিন্তা করি, কে, কী বললো সেদিকে আমাদের খুব বেশি নজর দিতে হবে না। ’
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব পরিস্থিতি তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ‘আজকে করোনা ভাইরাস মোকাবিলা, তার ওপর আরেকটা আঘাত এলো ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ। যুদ্ধের সঙ্গে সঙ্গে আবার আমেরিকা রাশিয়ার ওপর দিল স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা)। ডলারে টাকা আদান-প্রদান, সুইফট বন্ধ করে দেওয়া। শুধু আমাদের মতো দেশ না আজকে উন্নত দেশগুলো সবাই এখন ভুক্তভোগী। এই একটা সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের সার, খাদ্য, জ্বালানি তেল কেনা—সব ক্ষেত্র বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ’
তিনি বলেন, ‘শুধু আমরা না, পুরো বিশ্বই একটা দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছে। এটা হলো বাস্তবতা। আমি মনে করি, কেউ যদি মনে করেন স্যাংশন দিলেই একটা দেশকে শিক্ষা দেওয়া গেল, সেটা দিতে যেয়ে সবাই কিন্তু সেই শিক্ষা ভোগ করছে। সেই শিক্ষায় সবাই এখন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের দেশে যেমন মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, উন্নত দেশগুলোতে অনেক অনেক বেশি মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেছে। ’
উন্নত দেশগুলো বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কথা বলছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কথা শুধু আমরা বলছি না, উন্নত দেশগুলো সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে যে বিদ্যুৎ সাশ্রয় তাদের করতে হবে। সেটা আপনি ইংল্যান্ড বলেন, আমেরিকা বলেন বা ইউরোপের দেশ বলেন, আমি উন্নত দেশগুলোর কথাই বেশি বলবো, আমরা তো অনেক দূরে রয়ে গেছি। তাদের অবস্থাই এই ধরনের করুণ। ’
বাংলাদেশের পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের যেহেতু প্রশাসনিকভাবে দক্ষতার সঙ্গে, আমাদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা প্রত্যেকে স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করছেন বলেই কিন্তু আমরা অনেক দেশের থেকে ভালো অবস্থানে এগিয়ে যাচ্ছি। ’
‘তবুও ভবিষ্যত চিন্তা করে আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে। আমাদের মিতব্যয়ী হতে হবে। অহেতুক যেন অপচয় না হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। ’
‘জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস’ উপলক্ষে এবারই প্রথমবারের মতো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে দেওয়া হলো ‘বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক’। এত দিন এ পদকের নাম ছিল শুধু জনপ্রশাসন পদক।
এ বছর বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক পেয়েছে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের ২৭ জন কর্মকর্তা, তিনটি মন্ত্রণালয় এবং একটি ইউনিট। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মনোনীতদের হাতে পদক তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
এ সময় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। সরকারি কর্মচারীদের উদ্ভাবনী ও কৃতিত্বপূর্ণ কাজে উৎসাহ দিতে ২০১৬ সাল থেকে দেশে জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস পালন করা হচ্ছে।