আজ শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১

সবুজ পাহাড়ে ঘেরা চাম্বি লেক

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : রবিবার ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ ০২:৫৬:০০ অপরাহ্ন | চট্টমেট্টো

 

চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ। যেন সবুজের মেলা বসেছে। পূর্বপাশে সমতল ভূমি আর বাকি তিন পাশেই সবুজ পাহাড়ে ঘেরা। লাল মাটির উঁচু-নিচু টিলা ও আঁকাবাঁকা রাস্তা পার হয়ে দেখা মেলে চাম্বি লেকের।

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতির চাম্বি লেক সম্ভাবনাময় একটি পর্যটনকেন্দ্র। চুনতি ইউনিয়নের পানত্রিশা গ্রামের জয়নগরে চাম্বি খালে বাঁধ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে চাম্বি রাবার ড্যাম। আর এই রাবার ড্যামকে ঘিরে গড়ে উঠছে পর্যটন এলাকা। চুনতি চাম্বি রাবার ড্যাম বদলে দিচ্ছে এই এলাকার কৃষি ও পর্যটন।

জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে তৎকালীন চুনতি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী চুনতি ইউনিয়নের পানত্রিশার জয়নগর এলাকার চাম্বি খালে একটি রাবার ড্যাম নির্মাণ ও রাবার ড্যামকে ঘিরে একটি পর্যটন এলাকা সৃষ্টির উদ্যোগ নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রয়াত সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মো. জয়নুল আবেদীন বীরবিক্রম, পিএসসির প্রচেষ্টায় এলজিইডির অংশগ্রহণমূলক ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ সেক্টর প্রকল্পের অধীনে রাবার ড্যামের বাস্তবায়ন শুরু হয়।

ওই সময় দেশের ১০টি রাবার ড্যাম প্রকল্পের মধ্যে এটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১৫ সালে ড্যামের বাস্তবায়ন শুরু হয়। ওই এলাকার কৃষকদের নিয়ে গঠিত হয় চাম্বি খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি। এলজিইডির অংশগ্রহণমূলক ক্ষুদ্রাকার পানিসম্পদ সেক্টর প্রকল্পের অধীনে উত্তর-দক্ষিণে ২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের রাবার ড্যামের বাঁধ দিয়ে নির্মিত হয় এটি। ২০১৮ সালের ২০ জানুয়ারি এর উদ্বোধন হয়।

উদ্বোধনের পর ড্যামের জমানো পানি দিয়ে পানত্রিশা, ফারাঙ্গা ও নারিশ্চার বহু জমিতে চাষাবাদের সুযোগ সৃষ্টি হয়। মূলত এটি একটি সেচ প্রকল্প। এলজিইডির ওই প্রকল্পের নির্দেশনা মোতাবেক চাম্বি খাল ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি রাবার ড্যামের কৃষি, মৎস্য ও পর্যটন স্পট দেখাশোনা করে এবং এলজিইডি মনিটরিং করে।

Screenshot_2

এই রাবার ড্যাম প্রকল্পের পর্যটন স্পটে ৯ কর্মচারী রয়েছেন। রাবার ড্যামের জমানো পানি দিয়ে প্রতিবছর চুনতির পানত্রিশা, ফারাঙ্গা ও নারিশ্চার প্রায় ৫০০ একর জমি চাষাবাদ হয়। আর ৫ শতাধিক একর লেকের জায়গার জমানো পানিতে (যা উজানে প্রায় ২ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত) মৎস্য চাষ হয়।

একদিকে রাবার ড্যামের জমানো পানি উজানে সৃষ্টি করেছে আকর্ষণীয় চাম্বি লেক। স্থলভাগে গড়ে উঠেছে পর্যটন এলাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সেপ্টেম্বর ২০২০ থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত এক হাজার বিদেশি পর্যটকসহ বহু দর্শনার্থী এসেছেন এখানে। উদ্বোধনের পর থেকে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, রাবার ড্যামের বাঁধের ওপর মনোরম একটি ফুট ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। রাবার ড্যামের জমানো পানি উজানে সৃষ্টি করেছে আকর্ষণীয় চাম্বি লেক। লেকের জমানো পানি উজানে প্রায় ২ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। লেককে আনা হয়েছে মৎস্য প্রকল্পের আওতায়। পূর্বপাশে সমতল, বাকি তিন পাশে সবুজ পাহাড়ে ঘেরা স্বচ্ছ পানির চাম্বি লেক।

চাম্বি লেক থেকে একটু দূরে রয়েছে হাতির প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র। এখানে রয়েছে ৩টি কৃত্রিম পানির ফোয়ারা, ৫টি বিভিন্ন পাখির ভাস্কর্য, ৫টি প্রাণির ভাস্কর্য, ১টি জীবন্ত লজ্জাবতী বানর, খাঁচায় বন্দি আছে সাধারণ ৩টি বানর, একটি স্পিডবোট, প্যাডেল বোট ২টি, লাইফ বোট ১টি, নৌকা ৩টি।

এ ছাড়া সম্প্রতি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে ফ্যামিলি ট্রেন, পর্যটকদের জন্য চালু করা হয়েছে ‘শুধু আমরাই’ রেস্টুরেন্ট। লেকের মাঝখানে আছে মায়া দ্বীপ। যেখানে যাওয়ার জন্য রয়েছে ড্রামভেলা। পাহাড়ের টিলায় তিনটা গোলঘর; যেখান থেকে পুরো পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য এক পলকে উপভোগ করা যায়।

এ ছাড়াও পর্যটকদের অবকাশ যাপনের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে রিসোর্ট। লেকে রয়েছে মনোরম পিকনিক স্পট। এই শীতে চাম্বি লেক পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে ভ্রমণপিপাসুদের। এ লেকে যারা একবার এসেছেন প্রকৃতি তাদের বারবার যেন আসতে বাধ্য করে।

চাম্বি খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি মাহাবুবর রহমান চৌধুরী জানান, চাম্বি রাবার ড্যামের কারণে কৃষি, মৎস্য ও পর্যটন ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হবে। রাবার ড্যামের জমানো পানি দিয়ে প্রতি বছর ৫০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা সম্ভব।

লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আহসান হাবিব জিতু জানান, চুনতি পানত্রিশা রাবার ড্যাম প্রকল্প সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র ও এটি কৃষি, মৎস্য সেক্টরে অবদান রাখছে।

স্থানীয় সাংসদ প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা নিয়ে উপজেলা প্রশাসন এটির আরও সৌন্দর্যবর্ধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানান তিনি।

 

 

 

 



সবচেয়ে জনপ্রিয়