বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ। ফলে একইসাথে হারিয়ে যাচ্ছে ‘গাছি’ নামের শিল্পীরা।
গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুময় খেজুর গাছ এখন আর দেখা যাচ্ছে না বললেই চলে। দেখা মেলে না শীতের মৌসুম শুরু হতেই খেজুরের রস আহরণে গ্রামে গ্রামে খেজুর গাছ কাটার প্রস্তুতি নেয়া গাছিদের তোড়জোড়।
স্থানীয়রা বলছেন, সময়ের সাথে দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাচ্ছে শীতকালীন ঐতিহ্য রসনা বিলাসী খেজুরের রস ও এর তৈরি নানা পদের পিঠা। এখন মেলে না পল্লীকবি কবি জসীম উদ্দীনের কালজয়ী 'মামার বাড়ি’ কবিতার পঙক্তি “পাকা জামের মধুর রসে রঙিন করি মুখ”।
এলাকাবাসী জানান, মধুমাস জৈষ্ঠ্যের মতো পৌষ-মাঘ মাসেও রসনা তৃপ্তির জন্য মধু পাওয়া যায়। তা হচ্ছে মধুবৃক্ষের রস, অর্থাৎ খেজুরের রস। এ অঞ্চলে একটি গ্রাম্য প্রবাদ আছে ‘মাটির হাড়ি কাঠের গাই, গলা কেটে দুধ খাই’। গাছসহ খেজুরের রস বিলুপ্ত হওয়ার সাথে সাথে কালান্তরে চলে যাচ্ছে ওইসব প্রবাদ বাক্যও।
এখন শুধু ক্যালেন্ডার ও ছবিতেই দেখা যায় রস আহরণে গাছিরা কোমরে দড়ির সাথে ঝুড়ি বেঁধে ধারালো দা দিয়ে নিপুণ হাতে গাছ চাঁচাছোলা ও নলি বসানোর কাজ করছে।
এখন আর চোখে পড়েনা গ্রামবাংলার সেই দৃশ্য, তেমনি দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে খেজুরের রসও। অথচ খেজুর গাছ হারিয়ে গেলে এক সময় হারিয়ে যাবে খেজুর রসের ঐতিহ্য।
আর খেজুর গাছ হারিয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে- ইট ভাটার জ্বালানী হিসাবে ব্যবহারের জন্য বেপরোয়া খেজুর গাছ নিধন। এতে দিনে দিনে সন্দ্বীপ জুড়ে আশংকাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে খেজুরের গাছ।
এক সময় শীত মৌসুম এলেই দ্বীপ অঞ্চলে গাছিদের মাঝে খেজুর গাছ কাটার ধুম পড়ে যেতো। শীত এলেই এ অঞ্চলের সর্বত্র শীত উদযাপনের নতুন আয়োজন শুরু হয়ে যেত। খেজুরের রস আহরণ ও গুড় তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে যেতেন এ অঞ্চলের গাছি ও তাদের পরিবার।
শীতের সকালে বাড়ির উঠানে বসে মিষ্টি রোদের তাপ নিতে নিতে খেজুরের মিষ্টি রস যে পান করেছে, তার স্বাদ কোনও দিন সে ভুলতে পারবে না।
শুধু খেজুরের রসই নয়, এর থেকে তৈরি হয় সুস্বাদু পাটালি, গুড় ও প্রাকৃতিক ভিনেগার। খেজুর গুড় বাঙ্গালীর সংস্কৃতির একটা অঙ্গ। খেজুর গুড় ছাড়া আমাদের শীতকালীন উৎসব ভাবাই যায় না।
জানা গেছে, সন্দ্বীপ উপজেলাসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ জনপদে একসময় অনেক খেজুর গাছ থাকলেও তা এখন হারাতে বসেছে। ঐতিহ্যগতভাবে শীতের ভোরে একগ্লাস খেজুরের রস পান করতে ইচ্ছা জাগে রসনা বিলাসীদের। গ্রামীণ জনপদের ঐতিহ্যের বাহক এই মধুবৃক্ষ তুলনামূলকভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেকটাই বিলুপ্তির পথে।
গ্রামে মাঠের ধারে মেঠো পথের কিনারে অথবা ঘরের কোনে খেজুর গাছ দাঁড়িয়ে থাকতে এখন আর চোখে পড়ে না। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যে এই খেজুরগাছ বর্তমানে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে।
সন্দ্বীপের ১৫ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভার মধ্যে ব্যতিক্রম দীর্ঘাপাড় ইউনিয়ন যে ইউনিয়নে মাত্র ১৫শ ভোটারের এলাকা কিন্তু বিস্তর্ণ জুড়ে রয়েছে আবাদি জমি, বাদ যায় নি খেজুর গাছ পুরো উপজেলা জুড়ে যে পরিমাণ খেজুর গাছ এখন রয়েছে তার থেকে বেশি খেজুর গাছ রয়েছে দীর্ঘাপাড় ইউনিয়নে, গতকাল দীর্ঘাপাড় ইউনিয়নে বিভিন্ন গাছির সাথে কথা বলে জানা যায় এ ইউনিয়নে প্রায় ২০ জন গাছি রয়েছে প্রতিজন গাছি ৩০/৫০ টি গাছ কাটেন। রস সংগ্রহে হয় বছর ৩ মাস ৫০ টি গাছ কাটলে ৩ মাসে ২ লক্ষ টাকা থেকে তিন লক্ষ টাকার রস গুড় বিক্রি করা যায়। দীর্ঘাপাড় ইউনিয়নের গাছি কাউছার( ৩৮) বলেন আমি দশ বছর যাবৎ এ গাছ কাটি বছরে তিন মাস রস সংগ্রহ করা যায়, তা দিয়ে আমি ৬ মাস সংসার চালাতে পারি, আমাদের যদি সরকারি ভাবে প্রণোদনা দেয়া যায় তাহলে এ ঐতিহ্য বাহী পেশা টি ধরে রাখতে পারবো। গাছি আকবর হোসেন( ৩২) বলেন আমি ৩০ চি গাছ কাটি আরো গাছ লাগানোর পরিকল্পনা আছে যা দিয়ে আমার চাষাবাদের পাশাপাশি বাড়তি ইনকাম হচ্ছে।
সন্দ্বীপ উপজেলা কৃষি অফিসার মারুফ হোসেন বলেন খেজুরের রস কাঁচা খাওয়া যায়, আবার জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করে খাওয়া যায়, গুড়ে আয়রন বা লৌহ বেশি থাকে এবং হিমোগ্লোবিন তৈরীতে সহায়তা করে। যারা শারিরীক দুর্বলতা ভোগেন, কাজকর্মে জোর পায় না খেজুরের রস তাদের জন্য উপকারিতা বেশি।
কৃষি প্রণোদনার আওতায় নাড়িকেল চারার পাশাপাশি খেজুরর চারা দেয়া যাতে হয় সে বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।স্থানীয়ভাবে উদ্ভুদ্ধকরণের মাধ্যমে খেজুরের কৃষক যাতে চারা লাগায় সে বিষয়ে কৃষি অফিদ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।খেজুরের ফলের বীজ যাতে ফাঁকা যায়গায় চারা করার জন্য ফেলা হয় সে বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করবে