আজ বুধবার ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪ঠা পৌষ ১৪৩১

সন্দ্বীপে জলবায়ু বাস্তুচ্যুত কবলিতদের পুনর্বাসন বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত

ইলিয়াছ সুমন, সন্দ্বীপ: | প্রকাশের সময় : বুধবার ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:১৮:০০ অপরাহ্ন | উত্তর চট্টগ্রাম

আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে সোসাইটি ফর ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভস (এসডিআই) ও দাতা সংস্থা কোস্ট ফাউন্ডেশনের সিসিআর প্রকল্পের যৌথ উদ্যোগে সন্দ্বীপ উপজেলায় সমন্বিত স্থানীয় জলবায়ু বাস্তুচ্যুত ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শক্তিশালীকরণ বিষয়ক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

১৮ ডিসেম্বর, বুধবার, সকাল ১০টায় সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সন্দ্বীপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মারুফ হাসান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সন্দ্বীপ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলী আজম।

এসডিআই কেন্দ্রীয় অফিসের সহকারী পরিচালক (উন্নয়ন) মো. আশরাফ হোসেনের সঞ্চালনায় এই সেমিনারের শুরুতে উপস্থিতদের পরিচিতি ও পরে সেমিনারের প্রধান আলোচক ও প্রবন্ধ উপস্থাপক এবং কোস্ট ফাউন্ডেশনের হেড অব দ্য ক্লাইমেট চেঞ্জ এম.এ হাসান সেমিনারের মুখ্য উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম নিয়ে ভিডিও প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

সেমিনারের প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন সন্দ্বীপ উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন, দুর্যোগ প্রশমন ও প্রস্তুতি অধিদপ্তরের প্রতিনিধি মো. আরিফুর রহমান, সন্দ্বীপ প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি ইলিয়াস কামাল বাবু, এসডিআই সন্দ্বীপের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. কামাল হোসেন, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সন্দ্বীপ শাখার সভাপতি ইলিয়াস সুমন, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ সন্দ্বীপ অঞ্চল প্রধান মো. শামসুদ্দিন, সন্দ্বীপ অধিকার আন্দোলনের সভাপতি হাসানুজ্জামান সন্দ্বীপি, এসডিআই সমৃদ্ধি প্রকল্পের কর্মসূচি কর্মকর্তা মো. সিরাজুদ্দৌলা, কারিতাস সন্দ্বীপ অঞ্চলের ব্যবস্থাপক মো. গিয়াসউদ্দিন শরীফ, ব্রাক সন্দ্বীপের প্রধান নুরুল আলম, আজিমপুরের বাস্তুচ্যুত মাজাহারুল ইসলাম, ফরিদ মাস্টার, মোসাদ্দেকুল মাওলা, হরিশপুরের সচীরানী জলদাশ, মনোহর জলদাশ প্রমুখ।

 

সেমিনারে বক্তারা বলেন, বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ। বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চলের তুষারধসে সাগর-মহাসাগরের পানির স্তর যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে করে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিরাট একটি নিচু অংশ পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এতে করে বিশাল একটি জনগোষ্ঠী বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়বে, তাদের আশ্রয়ের প্রয়োজন হবে। এই ঝুঁকির মধ্যে আমাদের চারপাশে সাগরবেষ্টিত সন্দ্বীপও অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘন ঘন ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও নদীভাঙন কবলিত হয়ে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ আবাদি জমি ও জনবসতি নদীতে ও সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। এতে একদিকে আবাদি জমি ও ফসলি জমি যেমন কমছে, অন্যদিকে মানুষ ভূমিহীন ও গৃহহীন হয়ে পড়ছে। তাই এই সকল লোকদের জন্য আধুনিক আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তোলাসহ তাদের স্বাস্থ্যসম্মত জীবন এবং বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম জীবিকার ব্যবস্থাও করতে হবে। এ জন্য বক্তাগণ বিশ্ব জলবায়ু তহবিল থেকে বাংলাদেশের জন্য ন্যায্য পাওনা থেকে চারপাশে সাগরবেষ্টিত এবং দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সন্দ্বীপের বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হলে এখানে ইতিপূর্বে নদীর করাল গ্রাসে যারা সিকস্তি ও উদ্বাস্তু হয়ে বিভিন্ন স্থানে মানবেতর জীবন অতিবাহিত করছে তাদের জন্য উন্নত আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তোলা যাবে, তাদের শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রও নিশ্চিত করতে হবে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপকে ও সন্দ্বীপের মানুষের জীবন ও সম্পদ জলোচ্ছ্বাস থেকে নিরাপদ রাখতে হলে অচিরেই বেড়িবাঁধের কাজ সম্পন্ন করতে হবে এবং টেকসই করতে হবে। এ কাজে সরকারকেই জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগী হতে হবে বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেন। পুরো সেমিনারটি সমন্বয় করেন সিসিআর প্রজেক্ট এসডিআই-এর কমিউনিটি মোবিলাইজার বাদল রায় স্বাধীন।