আজ বৃহস্পতিবার ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪ঠা পৌষ ১৪৩১

সন্দ্বীপে এসডিআইয়ের উদ্যোগে বাল্য বিবাহ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সেমিনার

ইলিয়াছ সুমন, সন্দ্বীপ: | প্রকাশের সময় : শনিবার ৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৪:৪৫:০০ অপরাহ্ন | উত্তর চট্টগ্রাম

সন্দ্বীপে এসডিআই ও কোস্ট ফাউন্ডেশনের পার্টনারশিপে পরিচালিত ক্লাইমেট চেইঞ্জ এন্ড রেজিলিয়েন্স (সিসিআর) প্রজেক্টের উদ্যোগে বাল্য বিবাহ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের অংশ হিসাবে র‍্যালি, আলোচনা সভা ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

 

৭ ডিসেম্বর, শনিবার বিকাল ৩ টায় মধ্য হরিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফজলুল হক অডিটোরিয়ামে র‍্যালি পরবর্তী আলোচনা সভা ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এসডিআই সন্দ্বীপ অঞ্চলের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. কামাল হোসেন এর সভাপতিত্বে ও সিসিআর প্রজেক্টের কমিউনিটি মোবিলাইজার বাদল রায় স্বাধীন এর সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্য রাখেন সন্দ্বীপ প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি ইলিয়াছ কামাল বাবু, বাংলাদেশ সাংবাদিক ইলিয়াছ সুমন, এসডিআই সমৃদ্ধি প্রজেক্টের প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. সিরাজদৌল্ল্যা, ব্যবস্থাপক সুব্রত রায়, মাষ্টার আকবর হোসেন, উপজেলা জাসাস এর যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাদাৎ হোসেন, বিএনপি নেতা আফসার উদ্দিন, পৌর বিএনপি নেতা ইউছুপ প্রমুখ। সেমিনারে ২ শতাধিক নারী পুরুষ ও কিশোর-কিশোরী উপস্থিত ছিলেন।

 

 

সভায় বক্তারা বলেন, একটি সুস্থ জাতি পেতে প্রয়োজন একজন শিক্ষিত মা অথচ আজ এই একুশ শতকে এসেও বাংলাদেশের ৬৬% মেয়ে এখনো শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, যার প্রধান কারণ বাল্য বিবাহ। আগামী প্রজন্মের সুস্থভাবে বেড়ে উঠা এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে বড় বাধা বাল্য বিবাহ। যারা বাল্য বিবাহে ইচ্ছুক তারা যে কোনো উপায়ে জন্ম নিবন্ধনে মেয়ের বয়স টাকার বিনিময়ে বৃদ্ধি করে নেয়। এর ফলে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে কিছু কাজীও দায়ী থাকে এবং এরা মেয়ের বয়স বৃদ্ধি দেখিয়ে বিয়ে দিতে বর এবং কনে পক্ষকে সহায়তা করে।

সাধারণত মেয়েদের অর্থনৈতিক অবস্থার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বাল্য বিবাহে উৎসাহিত করে ছেলেদের পরিবার। কখনও কখনও তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা থেকেও বাল্য বিবাহের দিকে ঝুঁকে পড়ে গ্রামের পরিবারগুলো। উল্লেখযোগ্য এই কারণগুলো ছাড়াও আরও অনেক কারণেই বাল্য বিবাহ দেওয়া হচ্ছে।

 

 

বাল্য বিবাহের প্রধান প্রধান কুফল হলো নারীর শিক্ষার অগ্রগতি ব্যাহত হওয়া ছাড়াও বাল্য বিবাহের কারণে মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মা হতে গিয়ে প্রতি ২০ মিনিটে একজন মা মারা যাচ্ছেন। প্রতি ঘন্টায় মারা যাচ্ছে একজন নবজাতক। নবজাতক বেঁচে থাকলেও অনেক সময় তাকে নানা শারীরিক ও মানসিক জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক মা প্রতিবন্ধী শিশু জন্মদান করতে পারে। বাল্য বিবাহের ফলে বিবাহ বিচ্ছেদের আশংকা তৈরী হওয়া ছাড়াও নানা পারিবারিক অশান্তি দেখা দেয়। বাল্য বিবাহ শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি করে না, পারিবারিক, সামাজিক এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রের ক্ষতিসাধনেও সহায়ক হয়। যেমন, শিক্ষার আলো এবং স্বাস্থ্যগত কারণে অল্প বয়সের মেয়েটি তার নিজের সম্পর্কে সচেতন নয়, সুতরাং পরিবার সম্পর্কে তার ধারণা না থাকায় স্বাভাবিক বিষয়।

 

 

তারা আরও বলেন, বাল্য বিবাহের প্রভাবে স্বামী, সংসার, শ্বশুরবাড়ির সম্পর্কে বুঝে উঠার আগেই সংসার এবং পরিবারের ভারে আক্রান্ত হয়। অন্যদিকে শ্বশুরবাড়ির থেকেও তার উপর চাপের সৃষ্টি হয়, শুরু হয় অশান্তি, পারিবারিক কলহ, এবং সর্বোপরি পারিবারিক নির্যাতন। এই পারিবারিক নির্যাতনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শিকার হয় পরিবারের সবাই, বিশেষ করে শিশুরা ভোগে নানা মানসিক অশান্তিতে। এতে তারা লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়, পরিবারের প্রতি জন্মে নানারকম অনীহা, ফলে তারা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নানারকম অনৈতিক কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ে। বাল্য বিবাহের শিকার ছেলে ও মেয়ের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদনের মত মৌলিক মানবাধিকার লংঘিত হয়, যা তাকে তার সারাজীবনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করে। বাল্য বিবাহ একদিকে আইন এবং সংবিধানের লংঘন, অন্যদিকে বাল্য বিবাহের বর ও কনেকে তার ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা হয়। অপরিণত বেড়ে উঠা অপুষ্টিহীন শরীরে বেড়ে উঠে আরেকটি অনাগত ভবিষ্যত অপুষ্টিগত অভিশাপের বোঝা নিয়ে। জন্ম দিবে কিছুদিন পর আরেকটি অপুষ্টিতে আক্রান্ত প্রজন্ম। বেড়ে চলে মা ও নবাগত শিশুর জীবনের ঝুঁকি।