আজ সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ই আশ্বিন ১৪৩১
সেন্ট্রালপার্কে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু

লাশের মীমাংসা হলো সাড়ে ৮ লাখ টাকায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ফটিকছড়ি : | প্রকাশের সময় : সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:০৯:০০ অপরাহ্ন | উত্তর চট্টগ্রাম

ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাটের সেন্ট্রালপার্ক হসপিটালে ভুল অস্ত্রোপচারে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যু ঘটনা ধামাচাপা দিতে সাড়ে ৮ লাখ টাকায় আপোষ করা হয়েছে। কোন ধরনের মামলা মোকদ্দমা না করতে নিহতের পরিবারকে হসপিটালে ডেকে নিয়ে ঘটনাটি মীমাংসা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, বেসরকারি হাসপাতাল 'সেন্ট্রাল পার্ক হসপিটাল' কর্তৃপক্ষ নিহত প্রসূতি রোকসানা আক্তার মুন্নির স্বজনদের সাথে একাধিক বৈঠকের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ সাড়ে ৮ লাখ টাকায় ঘটনাটি মীমাংসা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বজনদের নিকট ৭ লাখ টাকা নগদ ও মেডিকেল খরচ বাবদ দেড় লাখ টাকা পরিশোধ করেন। পরে হাসপাতালের বিরুদ্ধে দেয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নিকট স্বজনদের অভিযোগটিও কৌশলে প্রত্যাহার করে নেন বলে প্রসূতির স্বজনদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

 

খবরটি ফটিকছড়ির সচেতন মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে এতে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দেয়। অন্য একটি সূত্র জানায়,  সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ তুলে নেয়া ও মামলার আশ্রয় না নিতে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিতে থাকে হাসপাতালটি। স্বামীহারা নিহত মুন্নীর স্বজনরা নিরুপায় হয়ে কোন মামলা না করে তার ৪ সন্তানের ভরন-পোষণের জন্য মানবিক সহায়তা হিসেবে টাকাটি নিয়েছে জানায় সূত্রটি।

 

নিহতের স্বজন মো. সোহাইল বলেন, মামলা চালানোর মতো অবস্থা না থাকায় মুন্নীর ৪ সন্তান নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে পরিবারটি। বাচ্চাদের কথা ভেবে লেনদেনটি করা হয়েছে।

 

ফটিকছড়ি প্রাইভেট হসপিটাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহেদ আলী বলেন- সেন্ট্রাল পার্ক হসপিটালের চেয়ারম্যান ডা. সোলাইমান ভুল অপারেশন করে প্রসূতিকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে শুনেছি। তারা   রোগীদের সাথে এক ধরনের প্রতারণা করে যাচ্ছে। আমরা এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

 

রাঙ্গামাটিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আক্ষেপ নিয়ে বলেন, 'বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতে যদি ভুল অপারেশনে একটি জীবন বিপন্ন হয়। আর সেই মৃত্যু যদি টাকার মাধ্যমে চাপা পড়ে তা দুঃখজনক। এমন ঘটনায় ভবিষ্যতে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক গুলোতে অনিয়ম- অপরাধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।' 

 

সমঝোতার বিষয়ে নাজিরহাট সেন্ট্রালপার্ক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে হসপিটালটির চেয়ারম্যান ডা. মো. সোলাইমান সাত লাখ টাকা লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে রোগীর চিকিৎসা খরচ হিসেবে দেড় লাখ টাকা দিয়েছেন বলে জানান।

 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন- আপোষের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

 

প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আরেফিন আজিমকে প্রধান করে ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে সিভিল সার্জেন। এ বিষয়ে ডা. আরেফিন বলেন, 'ঘটনা তদন্ত করে যেসকল তথ্য পেয়েছি তা সিভিল সার্জন মহোদয়ের কাছে প্রতিবেদন আকারে জমা দিয়েছি। আশাকরি তিনি ব্যবস্থা নিবেন।'

 

উল্লেখ্য, গত ১সেপ্টেম্বর সকাল ৮ টার দিকে চট্টগ্রাম  নগরীর আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান প্রসূতি মুন্নী(৩৩)। গত ২৪ আগষ্ট প্রসব বেদনা নিয়ে নাজিরহাটস্থ সেন্ট্রালপার্ক হসপিটালে ভর্তি হলে সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ছেলে সন্তান জন্ম দেন তিনি। সন্তান জন্মদানের দুই দিন পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রসূতির শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ভর্তির ৪ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে তার মৃত্যুর হয়। সে ফটিকছড়ি পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড জামান চৌধুরী বাড়ীর মৃত ফোরকান আহমেদের স্ত্রী। তাদের ঘরে সদ্য ভুমিষ্ট হওয়া শিশু আয়াজসহ আরও তিন কন্যা সন্তান রয়েছে। 

 

এর আগে, গত ৩০ আগষ্ট ' ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে প্রসূতি মা' ও ' সেন্ট্রালপার্ক হসপিটালে ভূল চিকিৎসায় জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা সেই প্রসূতি মায়ের মৃত্যু' শিরোনামে দৈনিক সাঙ্গু'তে দুইটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।