আজ শনিবার ১৮ মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
সীতাকুণ্ডে শিব চর্তুদশী মেলা শুরু

লাখো পুণ্যার্থীর পদভারে মুখরিত চন্দ্রনাথ পাহাড়

ইলিয়াছ ভূঁইয়া | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ০৫:৩৮:০০ অপরাহ্ন | উত্তর চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে শুরু হয়েছে সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শিব চতুর্দশী মেলা। উপমহাদেশে হিন্দু ধর্মের অন্যতম তীর্থস্থান সীতাকু- চন্দ্রনাথ ধামে ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে এই মেলা শুরু হয়েছে, চলবে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। লাখো মানুষের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় সীতাকুণ্ডের এই শিব চতুর্দশী মেলা। কথিত রয়েছে একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ পৃথিবীর সব তীর্থস্থান দর্শন করলেও অন্তত একবার যদি সীতাকু- তীর্থভূমি দর্শন না করে তাহলে তার তীর্থ দর্শন সম্পূর্ণ হয় না। প্রতিবছর শিব চতুর্দশী তিথিতে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। শিবরাত্রি ব্রতসহ শিব লিঙ্গে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করতে দেশ-বিদেশের লাখো হিন্দু সম্প্রদায়ের পুণ্যার্থী জড়ো হন এ মেলায়। চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার পশ্চিমে সীতাকুণ্ড উপজেলা সদরে এই মেলার অবস্থান। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশে এটি অবস্থিত। সীতাকুণ্ড বাজার থেকে সর্পিল আঁকা-বাঁকা একটি সড়ক চলে গেছে চন্দ্রনাথ সোজা পাহাড়ের দিকে। এর সর্বোচ্চ চূড়াটির উচ্চতা প্রায় ৩৬৫ মিটার বা ১২০০ ফুট প্রায়। চূড়ায় ওঠার পথটি বেশ দুর্গম। এ পথে রয়েছে শংকর মঠ, শ্মশান, গিরিশ ধর্মশালা, ননী গোপাল তীর্থ মন্দির, ভৈরব ধর্মশালাসহ আরো অনেক দেবালয়। আরো কিছুটা পথ ওঠার পর দেখা যাবে ভবানী মন্দির। ভবানী মন্দির ছেড়ে আরেকটু পথ এগুলেই শম্ভুনাথ মন্দির, ছোট্ট একটি পাহাড়ি ঝরনা। আর এখান থেকেই চন্দ্রনাথ মন্দিরের দিকে উঠতে হয়। পুণ্যার্থীদের পাহাড়ে ওঠার জন্য এখান থেকে শান বাঁধানো সিঁড়ি তৈরি করা আছে। শিব চতুর্দশী পূজা উপলক্ষে সীতাকুণ্ডে মেলায় আসা পুর্ণ্যার্থীরা পাহাড় বেয়ে চন্দ্রনাথ মন্দিরে ওঠার দৃশ্য দূর থেকে অনেকটা চলমান পিঁপড়ার সারির মতো মনে হয়। বিভিন্ন মন্দিরে পূজা-অর্চনা করলেও ভক্তদের সবার কাছেই মূল আকর্ষণ থাকে পাহাড়ের চূড়ার চন্দ্রনাথ মন্দির। তাই দলবেঁধে সবাই ছোটছে মন্দিরটির দিকে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে সীতাকুণ্ডে আগত তীর্থযাত্রীদের সুবিধার্তে আলোকসজ্জা, বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ ও জরুরী চিকিৎসা দিতে একটি মেডিক্যাল টিম পরিচালনা করছে। তার পাশাপাশি সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ নুর উদ্দিন রাশেদ এর তত্ত্বাবধানে ২৫জনের একটি মেডিকেল টিম মেলায় নির্ঘুম সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল কান্তি শর্মা জানান, মেলায় আগত পুণ্যার্থীরা যাতে নির্ভিগ্নে তীর্থ দর্শন করতে পারে সে জন্য আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে মেলা শুরুর পুর্বে। নিরাপত্তা দিতে মাঠে রয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শৃঙ্খলায় রয়েছে মেলা কমিটির স্বেচ্ছাসেবক টিম। মেলা চলবে ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। শিব চতুর্দশী তিথী আরম্ভ ১৮ ফেব্রুয়ারি শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৩৬ মিনিটে। চতুর্দশী শেষ ১৯ ফেব্রুয়ারী বিকাল ৪.৮ মিনিটে। প্রথম প্রহর ১৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ৯.০৪ মিনিট পর্যন্ত। দ্বিতীয় প্রহর ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ৯.০৪ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত ১২.১২ মিনিট পর্যন্ত । তৃতীয় প্রহর ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত ১২.১২ থেকে ভোর ৩.২১ মিনিট পর্যন্ত । চতুর্থ প্রহর ১৯ ফেব্রুয়ারি ভোর ৩.২১ মিনিট থেকে ভোর ৬.২৯ মিনিট পর্যন্ত । পারন সময় ১৯ ফেব্রুয়ারি ভোর ৬.৩০ থেকে দুপুর ৩.৩২ এর মধ্যে। তিথী ছাড়বে ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টা ৮ মিনিটে। শিব চর্তুদশী মেলা তিনদিন ব্যাপী চললেও দোল পুর্নিমা উপলক্ষে এই মেলা ৭ মার্চ পর্যন্ত স্থায়ী হবে এবং প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ পূর্ণ্যার্থীর সমাগম হবে বলে জানান তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহ সভাপতি মাষ্টার প্রেমতোষ দাস, অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক দুলাল দে, সাংগঠনিক সম্পাদক গৌতম অধিকারী, সমাজ কল্যান সম্পাদক সুমন দাস বাসু প্রমুখ। সীতাকুণ্ড পৌরসভা ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিউল আলম মুরাদ জানান, শিব চর্তুদশী মেলা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি প্রাচীনতম উৎসব, ছোট বেলা থেকেই আমরা এই মেলায় লাখো পূণ্যার্থীর সমাগম দেখে আসছি। সীতাকুণ্ড পৌরসভা সর্বাত্ত্বক সহযোগীতা অতীতেও করে এসেছে এবং বর্তমানেও মাঠে রয়েছে। মেলা কার্যকরী কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন জানান, মেলায় আগত তীর্থযাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে উৎসব পালন করতে পারে তার জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মেলা কমিটির পাশাপাশি বিভিন্ন উপকমিটি,স্বেচ্ছাসেবক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে। সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ তোফায়েল আহমেদ জানান, মেলা উপলক্ষে ৫৭৫ জন পুলিশফোর্স মোতায়েন রয়েছে। পাশাপাশি র‌্যাব, বিজিবি, আনসার ব্যাটেলিয়নসহ ট্রাফিক পুলিশ সার্বিক নিরাপত্তা দিতে মাঠে রয়েছে।