আজ সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রোয়াংছড়িতে সরকারি কর্মচারী নাছির উদ্দিন যখন ঠিকাদার

হ্লাছোহ্রী মারমা রোয়াংছড়ি (বান্দরবান) প্রতিনিধি: | প্রকাশের সময় : রবিবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:১০:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

 বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) অফিসের কার্য্য সহকারি ও হিসাব রক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) নাছির উদ্দিনের একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে ঠিকাদারি কাজে রমরমা ব্যবসা করা অভিযোগ উঠেছে। অফিসের পুরানো কর্মচারী হওয়ায় প্রভাব দেখিয়ে নানা অনিয়ম কাজের হাসিল করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। এ নাছির উদ্দিনের কারিশমা কারণে ২০২১-২০২২ইং অর্থসালে বিশেষ বরাদ্দ উপজেলা পরিষদ ভবন মেরামত প্রকল্পের আওতায় উপজেলা পরিষদ ভবন-১ ও ২, দুইটি কাজে মিলে ৫লক্ষ করে ১০লক্ষ টাকা এবং উপজেলা পরিষদ গেজেটেড কোয়াটার ও নন-গেজেটেড কোয়াটার মেলে ৬লক্ষ টাকা করে দুইটিতে ১২লক্ষ টাকার ব্যয়ে মেরামত কাজে ৪টি প্যাকেজে প্রাক্কলিত মূল্যের মোট ২২লক্ষ টাকা। মেরামত কাজে বিজ্ঞপ্তি, টেন্ডার ও কোন নোটিশ ব্যতীত নামে মাত্র রেজুলেশন দেখিয়ে প্রকৃত ঠিকাদারকে না দিয়ে কার্য্য সহকারি মো. নাছির উদ্দিন দ্য মামনি কনস্ট্রাক্টশন লাইসেন্সের মাধ্যমে ঠিকাদারি কাজটি ভাগিয়ে নিয়েছে বলে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

দ্য মামনি লাইসেন্সের স্বতাধিকারী ও প্রকৃত মালিক ওয়াংনুচিং মারমা সাথে ফোন যোগাযোগ করে না পাওয়ায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে লাইসেন্সের মালিকে (ওয়াংনুচিং মারমা) স্বামী অংশৈমং মারমা সাথে ফোনে যোগযোগ করা হলে তিনি  বলেন আমাদের লাইসেন্স তো মেয়াত উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। প্রায় ৩/৪ বছর যাবত করা হয়নি। তবে সেই লাইসেন্সটি এলজিইডি অফিসের কার্য্য সহকারি নাছির উদ্দিন নিয়ে গেছে। এব্যাপারে বিস্তারিত নাছির উদ্দিন বলতে পারবে।

 

সূত্রে জানা গেছে, নাছির উদ্দিনে বেপরোয়ার দুর্নীতির কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় ও পেশাদার ঠিকাদাদের। ২০২১-২০২২ অর্থ সালে গৃহীত কর্মসূচী উপজেলা পরিষদ ভবন মেরামতে কাজের ব‍্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির পন্থা অবলম্বন করে পছন্দের ঠিকাদারকে পাইয়ে দেওয়া অভিযোগ নাছির উদ্দিনে বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, তিনি একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে ঠিকাদারি কাজে জরিত হয়ে মেতে উঠেছে রমরমা ব‍্যবসা।

 

তিনি একজন অফিসের কর্মচারি হওয়ায় অফিসের কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে স্ব-কৌশলে টেন্ডার পরিবর্তে কোটেশন (আর.এফ.কিউ) দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। এদিকে হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব। নাছির উদ্দিন রোয়াংছড়ি উপজেলা এলজিইডি অফিসের দীর্ঘদিন যাবত কর্মরত থাকায় সব কাজের সেচ্ছায় চারিতা করে চলছে। ওই অফিসের কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাহী প্রকৌশলী থাকলেও অফিসের নাছির উদ্দিনের কথা দ্বারা চলছে। জানা যায়, অফিসের সিনিয়র কর্মকর্তা থাকলেও নিজের পারসেন্টিস পেটে টেন্ডারের বিজ্ঞাপন, সিডিউল ক্রয়-বিক্রয়, টেন্ডার খোলার এবং ঠিকাদারি বিল পাস করার কাজে দিক নিদের্শনা নাছির উদ্দিনের কথায় মতোই চলে। প্রভাব খাতিয়ে ওই অফিসের নাছির উদ্দিন একাই একশো। রোয়াংছড়ি উপজেলা থেকে কার্য্য সহকারি নাছির উদ্দিনকে অপসারণ চাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারিগণ। অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ পেশাদার ঠিকাদারা নাছির উদ্দিনের কাছে জিম্মি।

 

পেশাগত ঠিকাদারে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিডিউলে অনুযায়ি কাজ করে বিল নিতে গেলে নাছির উদ্দিনের পকেটে আগে দিতে হয়। তা না হলে কমিটমেন্ট দিতে হবে। নাছির উদ্দিনের কথা না শুনলে বিল কাগজগুলো না করে ফেলে রেখে দেন টেবিলে। যার কারণে এলজিইডি কর্তৃক প্রচুর উন্নয়ন করলেও টেকসই কাজ হচ্ছে না। টেকসই কাজ করলেও ঘুষ টাকা দিতে হবে। আর না করলেও দিতে হবে। যার কারণে কিছু অনিয়মে কাজ করতে হচ্ছে।

 

এব্যাপারে ভাইস চেয়ারম্যান আথুইমং মারমা নিশ্চিত করে বলেন বর্তমানে উপজেলা পরিষদ ভবন-২, টেইলস বসানো কাজের চলমান কাজটি নাছির উদ্দিনের কাজ। সেই কাজটি নাছির উদ্দিন থেকে ৩০হাজার টাকা দিয়ে কিনছি। তিনি আরো বলেন আমার নিজেও একটি কাজ পেয়েছি। সে কাজটিও করছে বলেন জানান ভাইস চেয়ারম্যান আথুইমং মারমা।  

 

এলজিইডি অফিসে কার্য্য সহকারি নাছির উদ্দিনের কাছে এব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি এবিষয়ে মুখ খোলতে নারাজ। এছাড়া প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি।

 

রোয়াংছড়ি উপজেলা অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) বান্দরবান জেলা অফিসের সিনিয়র প্রকৌশলী মো. জামাল উদ্দিন বলেন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী হয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অংশ গ্রহণ, শেয়ারদার এবং ঠিকাদারি কাজ করতে পারবেন না। নাছির উদ্দিন একজন এলজিইডি অফিসের কর্মচারী হয়ে কাজ করে থাকলে তাকে মুখিক ও লিখিত নোটিশ দেওয়া হবে এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে কাছে তার বিরুদ্ধে ব‍্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হবে।