কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের রামুর মিঠাছড়ির ইউনিয়নের পানেরছরা ঢালা নামক কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় মো. মুফিজ প্রকাশ গোরামিয়া (৭০) নামের বৃদ্ধ পথচারী নিহত হয়েছেন। তবে স্থানীয় লোকজনের দাবি, কাভার্ডভ্যানকে ধাওয়া দেয় হাইওয়ে পুলিশ। এতে ধাক্কা খেয়ে পথচারী নিহত হয়েছেন।
সোমবার (২ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মুফিজ ওই এলাকার মৃত আলী মিয়ার ছেলে।
ঘটনার প্রতিবাদে দেড় ঘন্টা ধরে সড়ক অবরোধ করে রাখে স্থানীয় জনতা। যান চলাচল বন্ধ থাকে। এসময় কাভার্ডভ্যানে ভাংচুর ও পুলিশের উপর হামলা চালানো হয়।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেন রামু ক্রসিং হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেজবাহ উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা।
এ সময় ক্ষুব্ধ জনতার হাতে ৪ পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তারা চিকিৎসাধীন। ঘাতক গাড়ি জব্ধ আছে। চালক হেলপার আটক রয়েছে।
রামু থানার ওসি মোহাম্মদ আবু তাহের দেওয়ান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুস ভুট্টো জানান, রামু ক্রসিং হাইওয়ে পুলিশের একটি টহল দল কাভার্ডভ্যানটি ধাওয়া করলে ঘটনাস্থলে এসে মুফিজকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। ঘটনার প্রতিবাদে কাভার্ডভ্যানটি ভাংচুর করা হয়। সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে রাখে এলাকাবাসী। এসময় ঘটনাস্থলে পৌঁছে হাইওয়ে পুলিশের টহল দল। উত্তেজিত জনতা পুলিশকে ধাওয়া করলে পালিয়ে যায়।
ইউনুস ভুট্টোর দাবি, হাইওয়ে পুলিশের টহল দল সড়কে দাঁড়িয়ে যানবাহন থামিয়ে চাঁদা আদায় করে থাকে। এবার তাই হয়েছে। পরে কক্সবাজার জেলা পুলিশের রামু থানার ওসির নেতৃত্বে একটি টিম ও রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন। জনতা সড়ক অবরোধ তুলে নেয়।
ঘটনার বিষয়ে জানতে রামু ক্রসিং হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেজবাহ উদ্দিনের সরকারি ও তার ব্যক্তিগত নাম্বারে একাধিকবার কল করে পাওয়া যায় নি।
উপপরিদর্শক আজহারুল ইসলামের সঙ্গে মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) বেলা ২টার দিকে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে ওসিসহ আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছি। উত্তেজিত লোকজন তাৎক্ষণিত আমাদের উপর হামলে পড়ে। ওই সময় ডিউটিতে ছিলেন এইসআই মো. আবুল মনসুর।
তিনি বলেন, আমি নিজেই আহত হওয়ায় বিস্তারিত খোঁজখবর নিতে পারিনি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যদিওবা জনতার দাবি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন আজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ধাওয়া করলাম কখন? খবর পেয়েই তো ঘটনাস্থলে গিয়েছি।
এদিকে, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেছেন চট্টগ্রাম হাইওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নাসিম খানের নেতৃত্বে একটি টিম।
মঙ্গলবার বেলা সোয়া দুইটার দিকে মুঠোফোনে তার সঙ্গে কথা হয়।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে এএসপি নাসিম খান বলেন, পানেরছড়া বাজারের মোড ক্রস করতে গিয়ে কাভার্ডভ্যান স্লিপ করে। এতে ধাক্কা খেয়ে ৭০ বছরের বৃদ্ধ লোকটি মারা যায়। এখানে ইতোপূর্বেও ৪ জন লোক মারা গেছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় অনেকে মনে করছে পুলিশের ধাওয়ার কারণে এমন ঘটনাটি ঘটেছে। তাই উত্তেজিত জনতা পুলিশের উপর হামলা করে। এতে ওসি মো. মেজবাহ উদ্দিন, এসআই আজহারুল ইসলাম, কনস্টেবল ফখরুল ও শফি আহত হন। তিনি মনে করেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণে হামলার ঘটনাটি ঘটেছে।
সহকারী পুলিশ সুপার নাসিম খান বলেন, ঘটনার কিছুক্ষণ পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। চালক ও হেলপারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
ঘটনায় হাইওয়ে পুলিশের কোন দুর্বলতা আছে কিনা; কি কারণে দুর্ঘটনা ঘটলো, তা তদন্ত করা হচ্ছে। থানা পুলিশ, বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্টরাও তদন্ত করছে। লাশের ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ঘটনার বিষয়ে জনগণ বিভিন্ন ধরণের বক্তব্য দিচ্ছে। তাতে হাইওয়ে পুলিশের গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।