আজ সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রাজনৈতিক সেশনজটে ফটিকছড়ি যুবলীগ!

সালাহউদ্দিন জিকু, ফটিকছড়ি : | প্রকাশের সময় : শনিবার ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:০৩:০০ অপরাহ্ন | উত্তর চট্টগ্রাম
  • যুবলীগের সম্মেলন হয়নি ২৬ বছর
  • ঘুরে ফিরে বয়োজ্যেষ্ঠদের দখলে নেতৃত্ব
  • নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে সাংগঠনিক কার্যক্রম

 

৯০ দিনের আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে প্রায় ১০ বছর পার করেছে ফটিকছড়ি উপজেলা যুবলীগ। দীর্ঘ এ সময়ে সম্মেলন করতে না পারায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি পায়নি আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী এ সংগঠনটি। এই নিয়ে উপজেলার তৃনমূল নেতা কর্মীদের মাঝে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ-অসন্তোষ আর হতাশা। ফলে হতাশ হয়ে পড়েছেন ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা। নতুন কমিটি গঠিত না হওয়ার ফলে অনেকেই ঝরে পড়েছেন। অপরদিকে বাড়ছে দলের মধ্যে কোন্দল। সৃষ্টি হচ্ছে গ্রুপ, উপ-গ্রুপ। দলীয় কর্মসূচি পালন করা হয় পৃথকভাবে। এ অবস্থায় ১০ বছর ধরে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে দলীয় কার্যক্রম।

 

দলীয় সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে একটি কমিটি পায় উপজেলা যুবলীগ। এই কমিটি দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতা ধরে রেখে সর্বশেষ ২০১৩ সালে এসে  আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে। এই কমিটিতেও শাহ আলম সিকদারকে আহ্বায়ক ও কয়েকজনকে সদস্য রেখে এ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু এ কমিটি গঠনের পর থেকে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা নতুন কমিটি গঠনের জন্য জেলায় বারবার দৌড়ঝাঁপ করেন। দীর্ঘদিন মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি থাকার ফলে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে দলের মধ্যে। উপজেলা যুবলীগের প্রকাশ্যে কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না। দলের বড় কোন সমাবেশ ব্যাতিরেকে যেকোনো কর্মসূচি পালন করা হয় কমিউনিটি সেন্টার কিংবা রেস্টুরেন্টের হলরুমে। অনেকেই নতুন কমিটি গঠিত না হওয়ায় হতাশ হয়ে ঝিমিয়েও পড়েছে তৃনমূলের নেতা-কর্মী।

 

এদিকে দীর্ঘ সময় ধরে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্নাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিটিতে দেখা দিয়েছে বিশৃংখলা। উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের ক’টিতেই রয়েছে পাল্টাপাল্টি কমিটি। আহবায়ক কমিটির বিতর্কিত ভুমিকার কারণে উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নে যুবলীগের মধ্যে দু'টি বলয় সৃষ্টি হয়েছে। গত ১৫ আগষ্টের শোক দিবসের অনুষ্ঠান করতে গিয়ে যুবলীগের একাংশের সভাপতি ও সেক্রেটারী আবদুস শুক্কুর, ডাক্তার মনির এবং অপরাংশের (বর্তমান) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সেক্রেটারী আবদুল মোতালেব মেম্বার ও জামাল উদ্দিনের মধ্যে গ্রূপিং প্রকাশ্যে রুপ নেয়। উভয় পক্ষই পাল্টাপাল্টি কর্মসুচী ঘোষনা করে। পরবর্তীতে এক পক্ষ হেয়াকোঁতে এবং আরেক পক্ষ দাঁতমারায় পৃথক কর্মসুচী পালন করেন। সুন্দরপুর ইউনিয়ন যুবলীগেও রয়েছে দু'পক্ষের মুখোমুখি অবস্থান। সুন্দরপুর ইউনিয়নে আজিমপুরে আদর্শ স্কুলের সমাবেশেও মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। রয়েছে নারায়ণহাট ইউনিয়নে দুইটি বলয়। এছাড়া পাইন্দং, হারুয়ালছড়ি, সুয়াবিল, খিরামসহ কয়েকটি ইউনিয়ন কমিটি গঠন হলেও একাধিক ইউনিয়নে কমিটি হয়নি। এসব ইউনিয়নেও সম্মেলন না হওয়ায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে পদপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে। 

 

উপজেলা কমিটির নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা বলেন, একক ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য শাহ আলম সিকদার সম্মেলন করতে আগ্রহী না। ফলে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হনয়া। এছাড়া সম্মেলনের মাধ্যমে পুর্নাঙ্গ উপজেলা কমিটি না হওয়ায় এসব বিশৃংখলা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।

 

অভিযোগ রয়েছে, আহ্বায়ক শাহ আলম সিকদার সংগঠনে নিজের একক আধিপত্য ধরে রাখতে নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করে রেখেছেন। এ কারণেই উপজেলা যুবলীগের কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে বলে মনে করেন তৃনমুলের নেতা কর্মীরা।

 

জানা গেছে, ২০১৪ সালের শুরুতে শাহ আলম সিকদারকে আহ্বায়ক ও মুজিবুর রহমান স্বপনকে যুগ্ম আহবায়ক করে ৫২ সদস্যের উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের গঠনতন্ত্রের ২৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে আহবায়ক কমিটির মেয়াদ হবে ৯০ দিন। এ ৯০ দিন মেয়াদের মধ্যেই সম্মেলনের মাধ্যমে পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করে দায়িত্ব নতুন নেতৃত্বের কাছে বুঝিয়ে দিবেন আহবায়ক কমিটি। কিন্তু গঠনতন্ত্রের এ নিয়ম গত ১০ বছরেও বাস্তবায়ন করতে পারেনি উপজেলা যুবলীগ।

 

এদিকে ফটিকছড়ির এ সমাবেশে যুবলীগের আহবায়ক কমিটির উপর ক্ষোভ ঝাড়েন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী। তিনি বলেন, এ ফটিকছড়ির তথাকথিত যুবলীগের আহবায়ক কমিটি। সে আহবায়ক কমিটি ইউনিয়নে একটি কমিটি রয়েছে তারাই সেই কমিটি করেছে, তারাই সেই কমিটির অনুমোদন দিয়েছে। আবার তারাই কি ভাবে? গঠনতন্ত্রের কোন ধারার মতে?  রাতে আঁধারে ফেসবুকের মাধ্যমে সে ইউনিয়নে আরেকটি কমিটি প্রকাশ করে সেখানে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।

 

উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মুজিবুর রহমান স্বপন বলেন, 'আহবায়ক কমিটির নির্ধারিত কোন সময়সীমা নেই। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর জেলা যুবলীগের সম্মেলন থাকায় কেন্দ্রীয় নেতবৃন্দের নির্দেশ মোতাবেক উপজেলা সম্মেলন স্থগিত করে রাখা হয়।  উপজেলার বিভিন্ন ওয়ার্ডে নতুন কমিটিতে যারা বির্তকিত তাদের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।'

 

এ ব্যাপারে উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক শাহ আলম সিকদারকে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন রেখে দেন।

 

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল বশর বলেন, 'ফটিকছড়ি উপজেলা যুবলীগের সম্মেলনের বিষয়ে তাগিদ দেয়া হয়েছে। দীর্ঘ সময় সম্মেলন না হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছেনা।  এ ছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়ন ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে যে সব বিতর্ক আছে সেগুলোর বিষয়ে সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।'