আজ বুধবার ৩ জুলাই ২০২৪, ১৯শে আষাঢ় ১৪৩১

রাঙ্গুনিয়ায় সন্ত্রাসী সালামের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় বহাল থাকায় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২:৩৮:০০ পূর্বাহ্ন | উত্তর চট্টগ্রাম

দীর্ঘ ২৩ বছর পর অবশেষে রাঙ্গুনিয়ার শীর্ষ সন্ত্রাসী আবদুস সালাম সিকদার ওরপে কানা সালামের ডাকাতি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিটটি খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। পাশাপাশি তাকে আগামী তিন মাসের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে। হাইকোর্ট ডিভিশনের পুরাতন ১১ নম্বর কোর্টের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের দ্বৈত বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেয়। সন্ত্রাসী সালামের পক্ষে ব্যারিস্টার মাহবুদ্দিন খোকন। বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট গৌতম কুমার রায় রিটটি খারিজ করে দেয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন। 

 

এদিকে কানা সালামের বিরুদ্ধে ডাকাতি মামলায় আদালতের যাবজ্জীবন রায় হাইকোর্টে বহাল থাকায় আনন্দমিছিল, সমাবেশ ও মিষ্টি বিতরণ করেছে রাঙ্গুনিয়ার রাজারহাট বাজার ব্যবসায়ী কল্যান সমিতি ও এলাকাবাসী। বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজারহাট বাজারে এই আনন্দ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে রাজারহাট চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মুসলিম উদ্দিন, রাজারহাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. হেলাল সিকদার, সাধারণ সম্পাদক মো. একরাম তালুকদার, ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি কামাল সিকদার, সাধারণ সম্পাদক নাছির সিকদার, আওয়ামী লীগ নেতা হানিফ তালুকদার, সাবেক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ডা: আবু মুছা চৌধুরী, মহিলা ইউপি সদস্য রুবি আক্তার, রাজারহাট মসজিদের খতিব হাফেজ মো. আনোয়ার, ছাত্রলীগ নেতা মো. সাকিব, আরমান, জিহাদ প্রমুখ।

 

জানা যায়, ১৯৯৪ সালে উত্তর রাঙ্গুনিয়ার রাজারহাট বাজারে সালাম সিকদারের নেতৃত্বে একটি দুর্ধর্ষ ডাকাতি সংগঠিত হয়। তৎকালীন রাজারহাট বাজার কমিটির সভাপতি মৃত আবুল কাশেম রাঙ্গুনিয়া থানায় আবদুস সালামকে প্রধান করে এবং আরো কয়েকজনকে আসামী করে ডাকাতি মামলাটি করেন। যার মামলা নং ১(০২)১৯৯৪। দীর্ঘ আইনী মোকাবেলা শেষে সে সময় আদালত আবদুস সালাম সিকদারকে যাবজ্জীবন ও ৫০০০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাস কারাদণ্ডের আদেশ দেন। এবং অন্যান্য আসামীদের ১০ বছর সাজা ও ২০০০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৩ মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরবর্তীতে অন্যান্য আসামি বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে গেলে তারা বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে। আপিল নম্বর (১৬৬৫/১৯৯৫)। পাশাপাশি আপিল বিচারাধীন রেখে জামিনে বের হয়ে যায়। অপরদিকে দীর্ঘদিন সৌদি আরবে পালিয়ে থাকা  প্রধান আসামি আবদুস ছালাম ২০০১ সালে বিএনপি জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে দেশে এসে হাইকোর্টে আপিল না করে অন্যান্য আসামিদের সাথে যোগসাজশে চল ছাতুরি করে একটি রিট করে বসে। (৬৯২৩/২০০১) হাইকোর্ট এই রিট শুনানি করে মামলাটি স্থগিত করে রুল জারি করে। পাশাপাশি নিম্ন আদালত থেকে রেকর্ড তলব করে। ২০০৭ সালে আসামীদের করা আপিল ১৬৬৫/১৯৯৫ নাজিম প্রকাশ নাছিরকে বাদ দিয়ে খোকন, এরশাদ, আলমগীর, মাসুম, এনাম, জাহাঙ্গীরের সাজা বহাল রাখে হাইকোর্ট। পাশাপাশি আসামীদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। কিন্তু বিচারিক আদালতে রেকর্ড বা ফাইল না থাকার অজুহাতে রাজারহাট ডাকাতি মামলায় আবদুস সালামকে একদিনও সাজা খাটতে হয়নি। তিনি এই ফাইল চল-চাতুরী করে সরিয়ে নিয়েছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। সম্প্রতি সে ফাইল উদ্ধার হলে হাইকোর্টের বিচারপতি কে, এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াত দ্বৈত বেঞ্চ রিটের রুল খারিজ করে সালামের যাবজ্জীবন সাজা বহাল রাখেন এবং ৩ মাসের মধ্যে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেন। হাইকোর্টে রায় বহাল থাকায় রাজারহাট বাজারে আগত সবাইকে মিষ্টিমুখ করানো হয়।