আজ সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
সাড়ে ৮৫ লাখ ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন

রাঙ্গুনিয়ার জুটমিল থেকে উৎপাদিত সুতা যাচ্ছে বিশ্বের ১২টি দেশে

রাঙ্গুনিয়া প্রতিবেদক: | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২৯ অগাস্ট ২০২৩ ০৩:০৫:০০ অপরাহ্ন | উত্তর চট্টগ্রাম
রাঙ্গুনিয়ার প্রাচীণতম কর্ণফুলী জুটমিলে কাজ করছে শ্রমিকরা।

পাটকে বাংলাদেশের সোনালী আঁশ বলা হয়। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় সেই পাট থেকে সুতা উৎপাদন করে বিশ্বের ১২টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এর থেকে শুধুমাত্র গেল বছরেই আয় হয়েছে সাড়ে ৮৫ লাখ ডলার বৈদেশিক মুদ্রা। ভবিষ্যতে পাট থেকে পাটজাত বিভিন্ন দ্রব্য উৎপাদন করে আরও বেশি পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের লক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের প্রাচীণতম শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী জুটমিল থেকে এই সুতা উৎপাদিত হচ্ছে।  

370708219_1361318621401202_9155051509458274252_n

স্থানীয় লোকজন ও সংশ্লিষ্টদের সাথে জানা যায়, ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কর্ণফুলী জুট মিলস লিমিটেড রাষ্ট্র্ায়ত্ব বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের অধীনস্থ ২৬টি মিলের মধ্যে এবং চট্টগ্রাম অ লের ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম প্রধান পাটকল। ২০২২ সালের ফেব্রæয়ারি মাসের দিকে এটি ২০ বছরের জন্য বেসরকারি খাতে বরাদ্দ পায় ইউনিটেক্স গ্রæপ। বর্তমানে ৪৭ একর আয়তনের এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে এক হাজারের উপরে শ্রমিক। যেখানে দুটি শিফটে দৈনিক ৩০ টনেরও বেশি জুট থেকে সুতা উৎপাদিত হয়। যা চীন, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, তুর্কি, ভিয়েতনামসহ বিশ্বের ১২টি দেশে রপ্তানি করে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে কার্পেট, জুট ব্যাগসহ আরও বিভিন্ন উপকরণ উৎপাদনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে বেসরকারি এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি।   

এই বিষয়ে কথা হয় ইউনিটেক্স জুট ইন্ড্রাট্রিজ গ্রæপের ডিজিএম মো. ফখরুদ্দিন এসিএ বলেন, “কর্ণফুলী জুটমিল দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প প্রতিষ্ঠান। আমরা বরাদ্দ নেয়ার আগে এটি দুই বছর বন্ধ ছিলো। এরআগে এই মিল থেকে মাত্র ৬ টন সুতা উৎপাদিত হতো। আমরা ইউনিটেক্স গ্রæপ দায়িত্ব নিয়ে বর্তমানে এই মিলের উৎপাদন ৩০ টনে উন্নীত করেছি। ভবিষ্যতে দৈনিক ১০০ টন সুতা উৎপাদন করার পরিকল্পনা রয়েছে আমরাদের। ৩০ টন হিসেবে বছরে আমাদের উৎপাদন সাড়ে ১০ হাজার টনেরও বেশি। যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে শতভাগ মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকি। শুধুমাত্র গত বছর আমরা ৮৫ লাখ ৫০ হাজার ইউএস ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছি।”  

ইউনিটেক্স জুট ইন্ড্রাট্রিজ লিমিটেডের সহকারী পরিচালক রায়হান আহমেদ বলেন, “আমরা দেশের বিভিন্ন অ লের কৃষকদের থেকে সরাসরি পাট সংগ্রহ করি, এতে কৃষকরা পাটের ন্যায্য দাম পাচ্ছে। এছাড়া আমাদের মিলে সহ¯্রাধিক শ্রমিক-কর্মচারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। আমাদের ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে আরও বেশি পরিমাণ মানুষ উপকৃত হবে। সোনালী আঁশের যেই ঐতিহ্য রয়েছে, সেটা ফিরিয়ে আনতেই আমরা মূলত কাজ করে যাচ্ছি।”

ইউনিটেক্স জুট ইন্ড্রাট্রিজ লিমিটেডের ডিজিএম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “বিদেশী ক্রেতাদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে পাটকে আমরা প্রথমত বিভিন্ন গ্রেডে ভাগ করি।  সুতার পণ্য তৈরি করার জন্য পাটকে গ্রেডভিত্তিক ভাগ করা হয় এবং সেই অনুযায়ী বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুতাগুলো তৈরি করে মিল থেকেই প্যাকেটজাত করে বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হয়।”   

ইউনিটেক্স গ্রæপের ব্যবস্থাপক (লিগ্যাল এন্ড এষ্টেট) গোলাম মাওলা বলেন, “শ্রমিকদের জন্য মিলে রয়েছে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত মানসম্মত শ্রমিক কলোনী ও স্টাফ কোয়ার্টার। মিলের ভেতর অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা, পরিচ্ছন্ন শৌচাগার, মশা নিধনে নিয়মিত পগার মেশিনের সাহায্যে স্প্রে কার্যক্রমসহ নানাভাবে কর্ম উপযোগী পরিবেশ অক্ষুন্ন রাখা হয়েছে।”

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, মিলে সুতা তৈরির জন্য চলছে বিভিন্ন ধরণের কর্মযজ্ঞ। ট্রিাকে করে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাটগুলো আনা হচ্ছে। কিছু শ্রমিক সেই পাটগুলো নামাচ্ছেন আবার কেউ কেউ পাটগুলোকে গ্রেডভিত্তিক ভাগ করে পরিমাপ অনুযায়ী কেটে নিচ্ছেন। সেখান থেকে পাটগুলো ভ্যানে করে মূল মিলে প্রবেশ করানো হচ্ছে। তারপর নানা প্রক্রিয়া শেষে সুতা তৈরির নানা কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত থাকতে দেখা গেছে সহ¯্রাধিক নারী-পুরুষ শ্রমিকদের।

শ্রমিক জাহাঙ্গীর হোসেন (৪৭) বলেন,“ এক সময় বেকার ছিলাম। সংসারে চালাতে কষ্ট হচ্ছিল। জুটমিল নতুন করে চালু হওয়ায় আয়ে সংসার চলছে। খুব ভালো আছি।”

জুটমিলের প্রশাসন ও মানবসম্পদ কর্মকর্তা মো. আসলাম হোসেন বলেন, “সরকারকে মাসিক নির্ধারিত হারে ভাড়া দিয়ে এই মিলের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছি আমরা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো মিলের স্থাপনাগুলো ৫০/৬০ বছরের পুরোনো হওয়ায় ছাদ নষ্ট হয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে, কর্ণফুলী পাড়ে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। এতে শ্রমিক কলোনি, সীমানাপ্রাচীর এমনকি বহুতল বিশিষ্ট অফিসার্স ভবন ভাঙনের কবলে পড়েছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এই সম্পদ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা খুবই প্রয়োজন।”